নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে পঞ্চম বারের মতো এমপিও বঞ্চিত হলেন গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজের ডিগ্রী পর্যায়ের দুজন পিয়ন। কে রুখবে এই অনিয়ম আর দুর্নীতি? দীর্ঘ ১৮ বছর পর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কলেজটি ডিগ্রী পর্যায় এমপিও ভুক্ত হয়।ওই কলেজের প্রভাষকদের বিশেষ প্রক্রিয়ায় বেতন হলেও অসহায় দরিদ্র দুই পিয়নের ভাগ্যের চাকা এখনো ঘোরেনি।
কলেজ সুত্রে জানাযায়, ৫বার ডিগ্রী পর্যায়ের বৈধ (শুন্য পদে) ওই দুই পিয়নের এমপি”ওর জন্য আবেদন সঠিক প্রক্রিয়ায় পাঠানোর পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কি কারনে বারবার আবেদন বাতিল করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মায়া রানীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমি তো প্রতি বারই ওই দুজন পিয়নের এমপিও”র ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ সরকারকে অনুরোধ করে আসছি কিন্তু কি কারনে বার বার আবেদন বাতিল হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। শিক্ষকদের বেতন তো ঠিকই হচ্ছে। জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকে জানান চিন্তার কোন কারন নেই সামনে ডিসেম্বরে হয়তো হয়ে যাবে।
এদিকে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মান্থলি পে অর্ডার (এমপিও) ভুক্তকরণে বিভিন্ন দৈনিকে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এসেছে। বিভাগের ৮ জেলায় গত ১ বছরে আড়াই হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে ঘুষ লেনদেন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ সরকার একজন প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে এসব দুর্নীতি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালতর ডিগ্রি কলেজের চারজন শিক্ষকের এমপিওভূক্তির জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে মোট ২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। বগুড়া অর্নেশন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩ লাখ টাকা, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি মহিলা কলেজ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এসব টাকা নগরীর সাহেব বাজারের এক মুদি দোকানদারের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল মহিলা কলেজের শিক্ষকদের এমপিও করতে ২ লাখ টাকা চুক্তি হয়। তবে টাকা না পাওয়ায় ফাইল আটকে রাখা হয়েছে। টাকা না দেয়ায় সিরাজগঞ্জের সলপ কলেজের শিক্ষকদের ফাইলও একইভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব দুর্নীতির মূলে রয়েছেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ। এদের মধ্যে ড. আবু রেজা আজাদ একসময় গাইবান্ধার এক বেসরকারি কলেজে কর্মরত ছিলেন। কলেজটি জাতীয়করণের পর ক্যাডার হিসেবে আত্তিকৃত হয়ে ২০১৭ সালে তিনি সহকারী অধ্যপক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর নিজেও ঘুষ প্রদান করে, তদবিরের মাধ্যমে ডেপুটেশনে রাজশাহী শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আসেন। তিনি পরিচালক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলেমিশে একজন প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থের বিনিময়ে এমপিভুক্তির কাজগুলো করে থাকেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস রাজশাহীর কর্মকর্তারা সাধারণ শিক্ষকদের নানানভাবে হয়রানি করেন। তার এলাকার কয়েকজন শিক্ষককে হয়রানি করা হয়েছে বলেও জানান রাবির এই অধ্যাপক। তিনি আরো জানান, অযোগ্যদেরও বেতনভাতা ও স্কেল লাগানোর ব্যবস্থা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা করে দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আড়াই হাজার প্রভাষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১২ কোটিরও বেশি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। অথচ যোগ্যতা অনুযায়ী ও শর্ত পূরণ করলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস রাজশাহীর পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন বলেন, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত মার্চ মাস থেকে এমপিওভূক্ত কার্যক্রম চলছে। সব আবেদন অনলাইনে করা হয়। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। আর প্রতিমন্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে কিছু সুপরিশ তো আসেই, অনেক চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়।
এদিকে, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার আহবান জানিয়েছেন রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দরকার। দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানা না গেলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।
রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা বলেন, দেশের উন্নয়নকে আরো বেগবান করতে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকার্তাদের অপসারণ করা সময়ের দাবি। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। অন্যথায় এ দুর্নীতিবাজরা দেশকে তলানিতে নিয়ে যাবে।