শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধে চলছে চিকিৎসা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৪৬ Time View

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
ইনজেকশন লিডোকেইন ২%, ভায়োডিন সলুসন, সার্জিক্যাল সুতা এবং গজ। এসবই মেয়াদোত্তীর্ণ। আর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব মেডিসিনেই জরুরী বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কাটা ছেঁড়ার সেলাই বা ড্রেসিং কোন চিকিৎসক করছেন না। এই দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের সুইপার বিষু। এমন ভঙ্গুর দশা গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে চিকিৎসা জরুরী বিভাগে চিকিৎসার পাশাপাশি অন্তবিভাগের রোগীদের সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন ধরণের অপারেশনও। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে চিকিৎসা দেওয়ায় পার্শ্বপ্রতিক্রীয়ার আশঙ্কা করছেন রোগীর স্বজনরা।
সম্প্রতি ওই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায়- পায়ের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করাতে হাসপাতালে এসেছিলেন উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের কালাকন্দর গ্রামের আজিজল হকের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৪০) (রেজি- ৪৯৯/৩৪/০২)। তার ক্ষতস্থানে পভিডোন দিয়ে ড্রেসিং করছিলেন সুইপার বিষু। অথচ ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে উৎপাদিত ওই ওষুধটির ময়াদ ২০ অক্টোবর ২০২০ শেষ হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই ওষুধেই ড্রেসিং করা হয়েছে। শুধু যে পভিডোন লিকুইড মেয়াদোত্তীর্ণ তা নয়। ১৫, ১৮ ১৭ সালের গজসহ বিভিন্ন প্রকারের ওষুধই মেয়াদ উত্তীর্ণ। আর এসব ওষুধে নিয়োমিত হরহামেশাই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সুইপার বিষু জানালেন- নিয়োম না থাকলেও অভিজ্ঞতা থাকায় ছোট খাটো কাটা ছেঁড়ার সেলাই, ড্রেসিং তিনি নিজেই করেন। তবে ওষুধের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানাগেল- গুরুদাসপুর উপজেলা ছাড়াও ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল আশপাশের বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, সিংড়া ও চাটমোহরের মানুষ। প্রতিদিনই এই হাসপাতালে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন এসব উপজেলার বহু মানুষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ঝাউপাড়ার এজার ছেলে মাসুদ (৩০) (রেজি নং ৪৯৮/৩৩/০১,) সিধুলী গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ছহির (৪৭) (রেজি নং ৪৯০/২৭/০৩) শিকার পাড়া গ্রামের মামুন (২৩) (রেজি নং ৪৯২/২৯/০৫), তালবাড়িয়া গ্রামের সাকিবসহ (১৬) (রেজি নং ৪৮৬/২৪/০৩) অন্তত দশজন রোগী জানালেন- এই হাসপাতালেই তাদের অস্ত্রপচার করা হয়েছিল। কিন্তু অপারেশনের পর থেকে সেলাইয়ে স্থানে বেশ সমস্যা অনুভব করছেন। তাদের ধারণা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের ফলে ওই সমস্যা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার কোম্পানির সাথে যোগসাজসে এ ধরণের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ এনে হাসপাতালে ব্যবহার করছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিছুক এক কর্মচারী।
সরেজমিনে হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি থাকা এক রোগীর শরীরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে রোগী স্বজন প্রতিবাদ করেন।
এ ব্যাপারে স্টোর কিপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কাউকে দেইনী। আপনারা কোথায় পেলেন তা আমার জানা নেই।” তবে এসময় মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি ওষুধ দেখাতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।
জরুরী বিভাগের ইনচার্জ হাবীব বলেন, হাসপাতালের পিয়ন হয়ত ভুলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে ড্রেসিং করেছেন। অথবা স্টোর কিপার দায়িত্ব অবহেলা করে মেয়াদ উত্তীর্ণ এই ধরনের ওষুধ দিয়েছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল করিম শান্ত বলেন, যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থেকে থাকে তা বাছাই করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জরুরী বিভাগের ইনচার্জ হাবীব এবং স্টোর কিপার মোস্তাফিজুরকে শতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের টিএইচও ডা: মো.মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ কোন ওষুধ নেই।  তাছাড়া দুই চার মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকলেও কোন সমস্যা নেই।

Tag :

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধে চলছে চিকিৎসা

Update Time : ০৮:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
ইনজেকশন লিডোকেইন ২%, ভায়োডিন সলুসন, সার্জিক্যাল সুতা এবং গজ। এসবই মেয়াদোত্তীর্ণ। আর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব মেডিসিনেই জরুরী বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কাটা ছেঁড়ার সেলাই বা ড্রেসিং কোন চিকিৎসক করছেন না। এই দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের সুইপার বিষু। এমন ভঙ্গুর দশা গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে চিকিৎসা জরুরী বিভাগে চিকিৎসার পাশাপাশি অন্তবিভাগের রোগীদের সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন ধরণের অপারেশনও। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে চিকিৎসা দেওয়ায় পার্শ্বপ্রতিক্রীয়ার আশঙ্কা করছেন রোগীর স্বজনরা।
সম্প্রতি ওই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায়- পায়ের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করাতে হাসপাতালে এসেছিলেন উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের কালাকন্দর গ্রামের আজিজল হকের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৪০) (রেজি- ৪৯৯/৩৪/০২)। তার ক্ষতস্থানে পভিডোন দিয়ে ড্রেসিং করছিলেন সুইপার বিষু। অথচ ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে উৎপাদিত ওই ওষুধটির ময়াদ ২০ অক্টোবর ২০২০ শেষ হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই ওষুধেই ড্রেসিং করা হয়েছে। শুধু যে পভিডোন লিকুইড মেয়াদোত্তীর্ণ তা নয়। ১৫, ১৮ ১৭ সালের গজসহ বিভিন্ন প্রকারের ওষুধই মেয়াদ উত্তীর্ণ। আর এসব ওষুধে নিয়োমিত হরহামেশাই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সুইপার বিষু জানালেন- নিয়োম না থাকলেও অভিজ্ঞতা থাকায় ছোট খাটো কাটা ছেঁড়ার সেলাই, ড্রেসিং তিনি নিজেই করেন। তবে ওষুধের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানাগেল- গুরুদাসপুর উপজেলা ছাড়াও ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল আশপাশের বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, সিংড়া ও চাটমোহরের মানুষ। প্রতিদিনই এই হাসপাতালে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন এসব উপজেলার বহু মানুষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ঝাউপাড়ার এজার ছেলে মাসুদ (৩০) (রেজি নং ৪৯৮/৩৩/০১,) সিধুলী গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ছহির (৪৭) (রেজি নং ৪৯০/২৭/০৩) শিকার পাড়া গ্রামের মামুন (২৩) (রেজি নং ৪৯২/২৯/০৫), তালবাড়িয়া গ্রামের সাকিবসহ (১৬) (রেজি নং ৪৮৬/২৪/০৩) অন্তত দশজন রোগী জানালেন- এই হাসপাতালেই তাদের অস্ত্রপচার করা হয়েছিল। কিন্তু অপারেশনের পর থেকে সেলাইয়ে স্থানে বেশ সমস্যা অনুভব করছেন। তাদের ধারণা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের ফলে ওই সমস্যা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার কোম্পানির সাথে যোগসাজসে এ ধরণের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ এনে হাসপাতালে ব্যবহার করছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিছুক এক কর্মচারী।
সরেজমিনে হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি থাকা এক রোগীর শরীরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে রোগী স্বজন প্রতিবাদ করেন।
এ ব্যাপারে স্টোর কিপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কাউকে দেইনী। আপনারা কোথায় পেলেন তা আমার জানা নেই।” তবে এসময় মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি ওষুধ দেখাতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।
জরুরী বিভাগের ইনচার্জ হাবীব বলেন, হাসপাতালের পিয়ন হয়ত ভুলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে ড্রেসিং করেছেন। অথবা স্টোর কিপার দায়িত্ব অবহেলা করে মেয়াদ উত্তীর্ণ এই ধরনের ওষুধ দিয়েছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল করিম শান্ত বলেন, যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থেকে থাকে তা বাছাই করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জরুরী বিভাগের ইনচার্জ হাবীব এবং স্টোর কিপার মোস্তাফিজুরকে শতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের টিএইচও ডা: মো.মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ কোন ওষুধ নেই।  তাছাড়া দুই চার মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকলেও কোন সমস্যা নেই।