শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ স্বাধীনের ২ দিন পর হানাদার মুক্ত হয় গুরুদাসপুর

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৩৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৫৬ Time View

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর হানাদার মুক্ত হয় গুরুদাসপুর। দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় গুরুদাসপুরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে ১৮ ডিসেম্বর গুরুদাসপুর হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
জানা যায়, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, হিলি, নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর ছিল ইপিআর ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে। অধিনায়ক ছিলেন- প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াস, পরবর্তীতে মেজর নাজমুল হক এবং তার মৃত্যুর পর মেজর নুরুজ্জামান।
প্রবীণ আওয়ামী লীগনেতা মরহুম আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পরিকল্পনা রচনা, তাদের ব্যয়ভার বহন ও রসদপত্র সরবরাহের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নাটোরের গুরুদাসপুরে দু’জন কৃতিসন্তান সিরাজুল ইসলাম ও মহসিন আলীকে সিএন্ডসি স্পেশাল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

১৮ মার্চ কমান্ডিং অফিসার ছিলেন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম বেগ। দু’জন ক্যাপ্টেনের মধ্যে একজন ছিলেন পাঞ্জাবী নাভেদ আফজাল, অন্যজন বাঙালি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগে বাঙালি মেজর নাজমুল হক নওগাঁ ও নাটোরের ইপিআরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। কিন্তু দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মতি জানান।

২২ এপ্রিল নাটোর পাক হানাদারদের দখলে চলে গেলে প্রায় সাড়ে ৭ মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায় তারা। ১০ ডিসেম্বর জেলার রানীনগর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়। ফলে গুরুদাসপুরে বসবাসকারী সকল অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে গুরুদাসপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী গুরুদাসপুরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করার খবর শোনার পরও নাটোরের গুরুদাসপুরে পাকিস্তানি বাহিনী অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা গুরুদাসপুর শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৭ ডিসেম্বর এক শীতের সকালে মুক্তিবাহিনী গুরুদাসপুরে আসতেই পাকিস্তানি সেনা ও দেশীয় রাজাকার আল বদররা ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রচন্ড যুদ্ধে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজা রঞ্জু শহীদ হন।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্র শেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী গুরুদাসপরে প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ৫শতাধিক পাকসেনা গুরুদাসপুর নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, রোকেয়া গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করে।

গুরুদাসপুরের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এম ফারুক হোসেন ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সরকার জানান,তৎকালিন নাটোর মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান গুরুদাসপুর সরকারী পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠ চত্বরে বিকেল ৪টায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

Tag :

দেশ স্বাধীনের ২ দিন পর হানাদার মুক্ত হয় গুরুদাসপুর

Update Time : ০৮:৩৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর হানাদার মুক্ত হয় গুরুদাসপুর। দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় গুরুদাসপুরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে ১৮ ডিসেম্বর গুরুদাসপুর হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
জানা যায়, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, হিলি, নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর ছিল ইপিআর ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে। অধিনায়ক ছিলেন- প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াস, পরবর্তীতে মেজর নাজমুল হক এবং তার মৃত্যুর পর মেজর নুরুজ্জামান।
প্রবীণ আওয়ামী লীগনেতা মরহুম আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পরিকল্পনা রচনা, তাদের ব্যয়ভার বহন ও রসদপত্র সরবরাহের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নাটোরের গুরুদাসপুরে দু’জন কৃতিসন্তান সিরাজুল ইসলাম ও মহসিন আলীকে সিএন্ডসি স্পেশাল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

১৮ মার্চ কমান্ডিং অফিসার ছিলেন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম বেগ। দু’জন ক্যাপ্টেনের মধ্যে একজন ছিলেন পাঞ্জাবী নাভেদ আফজাল, অন্যজন বাঙালি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগে বাঙালি মেজর নাজমুল হক নওগাঁ ও নাটোরের ইপিআরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। কিন্তু দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মতি জানান।

২২ এপ্রিল নাটোর পাক হানাদারদের দখলে চলে গেলে প্রায় সাড়ে ৭ মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায় তারা। ১০ ডিসেম্বর জেলার রানীনগর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়। ফলে গুরুদাসপুরে বসবাসকারী সকল অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে গুরুদাসপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী গুরুদাসপুরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করার খবর শোনার পরও নাটোরের গুরুদাসপুরে পাকিস্তানি বাহিনী অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা গুরুদাসপুর শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৭ ডিসেম্বর এক শীতের সকালে মুক্তিবাহিনী গুরুদাসপুরে আসতেই পাকিস্তানি সেনা ও দেশীয় রাজাকার আল বদররা ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রচন্ড যুদ্ধে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজা রঞ্জু শহীদ হন।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্র শেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী গুরুদাসপরে প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ৫শতাধিক পাকসেনা গুরুদাসপুর নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, রোকেয়া গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করে।

গুরুদাসপুরের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এম ফারুক হোসেন ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সরকার জানান,তৎকালিন নাটোর মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান গুরুদাসপুর সরকারী পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠ চত্বরে বিকেল ৪টায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।