মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরিচ্যুত শিক্ষকের আত্মহত্যা : চিতার পাশে স্ত্রীর আহাজারি ‘আমাকেও পুড়িয়ে দাও’

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১
  • ১২৩ Time View

বনলতা অনলাইন ডেস্ক.

চাকরি হারিয়ে অনেকের কাছ থেকে ধার-দেনা করেছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরা। পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী, দুই সন্তানের দেখভাল করতেই এ ঋণের জালে পড়েন তিনি। পাওনাদারদের চাপ, ব্যাংকের চিঠি সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। তার মরদেহের শেষকৃত্যের জন্য চিতায় নিয়ে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। উত্তমের স্ত্রী শেফালি ত্রিপুরার আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারও দাবি করেন শেফালি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, ত্রিপুরা রাজ্যে বাম সরকারের ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় তাদের চাকরি বাতিল করে দেয় ত্রিপুরা হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ করে ত্রিপুরা সরকার। কিছু শিক্ষককে নিয়োগ করা হয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে। গত মার্চ মাসে এই নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ৮-৯ হাজার শিক্ষক।

ক্ষমতায় আসার আগে এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, আসলে কিছুই করেনি ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গণঅনশন করছেন এই শিক্ষকরা। শীতের মধ্যে তারা গত ২৮ দিন ধরে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে অনশনে বসেন।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার উত্তম ত্রিপুরাও এই শিক্ষকদের একজন। গত ৯ মাস কর্মহীন থাকার দরুন তার সংসারের অভাব-অনটন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পাওনাদারদের গঞ্জনা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন তিনি। গতকাল শনিবার তার শেষকৃত্যের সময় আরও এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন সেখানে উপস্থিতরা।

মরদেহ দাহ করার আগে স্বামীর চিতার ওপর লাফিয়ে শুয়ে পড়েন তার স্ত্রী শেফালি। তিনি আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমাকেও স্বামীর সঙ্গে পুড়িয়ে দাও। আমি এর বিচার চাই।’ শেফালি ত্রিপুরা নিজের আবেগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত করেন।

Tag :

চাকরিচ্যুত শিক্ষকের আত্মহত্যা : চিতার পাশে স্ত্রীর আহাজারি ‘আমাকেও পুড়িয়ে দাও’

Update Time : ০৮:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১

বনলতা অনলাইন ডেস্ক.

চাকরি হারিয়ে অনেকের কাছ থেকে ধার-দেনা করেছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরা। পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী, দুই সন্তানের দেখভাল করতেই এ ঋণের জালে পড়েন তিনি। পাওনাদারদের চাপ, ব্যাংকের চিঠি সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। তার মরদেহের শেষকৃত্যের জন্য চিতায় নিয়ে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। উত্তমের স্ত্রী শেফালি ত্রিপুরার আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারও দাবি করেন শেফালি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, ত্রিপুরা রাজ্যে বাম সরকারের ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় তাদের চাকরি বাতিল করে দেয় ত্রিপুরা হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ করে ত্রিপুরা সরকার। কিছু শিক্ষককে নিয়োগ করা হয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে। গত মার্চ মাসে এই নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ৮-৯ হাজার শিক্ষক।

ক্ষমতায় আসার আগে এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, আসলে কিছুই করেনি ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গণঅনশন করছেন এই শিক্ষকরা। শীতের মধ্যে তারা গত ২৮ দিন ধরে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে অনশনে বসেন।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার উত্তম ত্রিপুরাও এই শিক্ষকদের একজন। গত ৯ মাস কর্মহীন থাকার দরুন তার সংসারের অভাব-অনটন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পাওনাদারদের গঞ্জনা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন তিনি। গতকাল শনিবার তার শেষকৃত্যের সময় আরও এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন সেখানে উপস্থিতরা।

মরদেহ দাহ করার আগে স্বামীর চিতার ওপর লাফিয়ে শুয়ে পড়েন তার স্ত্রী শেফালি। তিনি আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমাকেও স্বামীর সঙ্গে পুড়িয়ে দাও। আমি এর বিচার চাই।’ শেফালি ত্রিপুরা নিজের আবেগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত করেন।