বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ সেরা কলেজ বানিয়ে বিদায় নিলেন অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৫২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৯৬ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক রাজশাহী.

তার নেতৃত্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে টানা চারবার দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ। তাকে বলা হয় আধুনিক রাজশাহী কলেজের রূপকার। এমন অর্জন নিয়ে শিক্ষা ছুটিতে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল তার শেষ কর্মদিবস।

এ উপলক্ষে কলেজ শিক্ষক পরিষদের দিনব্যাপি আয়োজনে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র ও নগর আ.লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

অধ্যক্ষের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ মানুষটির কারণে রাজশাহী কলেজ পরপর চারবার বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে ঝকঝকে তকতকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মাঝে হানাহানি কিংবা বিদ্বেষ নেই। সেই মানুষটির সর্ম্পকে যতই বলা যাক তা কম হবে। আমি তাকে নানান ভাবে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছি। বাংলাদেশে যদি হাজার খানেক হবিবুর রহমান থাকতো, তবে দেশ আরো অনেক এগিয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাজশাহী কলেজে আরো কয়েক বছর তাকে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা বাধা পেয়েছি। কারণ এমনটা হলে এটাকেই সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করানো হবে। তবে আমি নিশ্চিত এমন একটা কর্মবীর মানুষকে বসিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং তাকে সম্মান জানিয়ে তার মেধাকে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান তার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যে কোনো কাজের প্রতি ভালোবাসা, সততা, স্বচ্ছতা থাকতে হয়। আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, রাজশাহী কলেজের সার্বিক উন্নতির জাদুটা কি? আমি এক কথায় বলি, আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে দেখেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিয়েছি, প্ল্যাটফরম তৈরি করে দিয়েছি। যা অনেক প্রতিষ্ঠানই পারেনি।’

অনুষ্ঠানে রাজশাহী কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তানভীরুল হক, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর, মাউশির সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. ইলিয়াস হোসেন, সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল-ফারুক চৌধুরী, বিদায়ী অধ্যক্ষ পত্নী সাবিনা ইয়াসমিন এবং কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৮টি সূচকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ১৪টি সূচকে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারবার সেরার মুকুট পরেছে রাজশাহী কলেজ। পেয়েছে মডেল কলেজের খেতাব।

প্রফেসর হবিবুর রহমান চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার গোপীনাথপুরে ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোকবুল হোসেন ও মায়ের নাম সাইফুন বিবি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে পড়া শেষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি কলেজে ১৯৮৬ সালে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন চাকুরী শেষে ২০০৯ সালে উপাধ্যক্ষ এবং ২০১৪ সালের আগস্টে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পাঠদান করা হতো। দীর্ঘ পথযাত্রায় অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি এ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও ওড়িশার শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজে পড়তে আসতেন।

বর্তমানে কলেজে ২৪টি বিভাগে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি ও এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ ও দেশের শিক্ষাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

Tag :

দেশ সেরা কলেজ বানিয়ে বিদায় নিলেন অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান

Update Time : ০২:৫২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক রাজশাহী.

তার নেতৃত্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে টানা চারবার দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ। তাকে বলা হয় আধুনিক রাজশাহী কলেজের রূপকার। এমন অর্জন নিয়ে শিক্ষা ছুটিতে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল তার শেষ কর্মদিবস।

এ উপলক্ষে কলেজ শিক্ষক পরিষদের দিনব্যাপি আয়োজনে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র ও নগর আ.লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

অধ্যক্ষের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ মানুষটির কারণে রাজশাহী কলেজ পরপর চারবার বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে ঝকঝকে তকতকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মাঝে হানাহানি কিংবা বিদ্বেষ নেই। সেই মানুষটির সর্ম্পকে যতই বলা যাক তা কম হবে। আমি তাকে নানান ভাবে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছি। বাংলাদেশে যদি হাজার খানেক হবিবুর রহমান থাকতো, তবে দেশ আরো অনেক এগিয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাজশাহী কলেজে আরো কয়েক বছর তাকে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা বাধা পেয়েছি। কারণ এমনটা হলে এটাকেই সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করানো হবে। তবে আমি নিশ্চিত এমন একটা কর্মবীর মানুষকে বসিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং তাকে সম্মান জানিয়ে তার মেধাকে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান তার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যে কোনো কাজের প্রতি ভালোবাসা, সততা, স্বচ্ছতা থাকতে হয়। আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, রাজশাহী কলেজের সার্বিক উন্নতির জাদুটা কি? আমি এক কথায় বলি, আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে দেখেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিয়েছি, প্ল্যাটফরম তৈরি করে দিয়েছি। যা অনেক প্রতিষ্ঠানই পারেনি।’

অনুষ্ঠানে রাজশাহী কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তানভীরুল হক, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর, মাউশির সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. ইলিয়াস হোসেন, সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল-ফারুক চৌধুরী, বিদায়ী অধ্যক্ষ পত্নী সাবিনা ইয়াসমিন এবং কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৮টি সূচকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ১৪টি সূচকে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারবার সেরার মুকুট পরেছে রাজশাহী কলেজ। পেয়েছে মডেল কলেজের খেতাব।

প্রফেসর হবিবুর রহমান চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার গোপীনাথপুরে ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোকবুল হোসেন ও মায়ের নাম সাইফুন বিবি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে পড়া শেষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি কলেজে ১৯৮৬ সালে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন চাকুরী শেষে ২০০৯ সালে উপাধ্যক্ষ এবং ২০১৪ সালের আগস্টে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পাঠদান করা হতো। দীর্ঘ পথযাত্রায় অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি এ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও ওড়িশার শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজে পড়তে আসতেন।

বর্তমানে কলেজে ২৪টি বিভাগে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি ও এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ ও দেশের শিক্ষাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।