শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি বাঁশের সেতু আর খেয়া নৌকাই তাদের ভরসা!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৬:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৫২ Time View

গুরুদাসপুর(নাটোর) প্রতিনিধি.
বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মওসুমে বাঁশের সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ। নাটোরের গুরুদাপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ি আদর্শ বাজার সংলগ্ন আত্রাই নদীর ওপর ওই বাঁশের সেতুর অবস্থান। এলাকাবাসী দশকের পর দশক ভোগান্তি সয়ে পারাপার হলেও একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি উপেক্ষিত থেকে গেছে আজও।
স্থানীয়রা জানান, আত্রাই নদীর পৃর্ব পাড়ে ফকির পাড়া, বিলহরিবাড়ি, হরদোমা, সাবগাড়ী, কৃষ্ণনগরসহ ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষর বসবাস। এছাড়া প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও বিলহরিবাড়ি কবরস্থান রয়েছে। পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে বিয়াঘাট, সাবগাড়ি, বিলদহর ও জ্ঞানদা নগর গ্রামছাড়াও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও সাবগাড়ী হাট রয়েছে। আত্রাই নদীর দুই পাড়ের প্রায় লক্ষাধীক মানুষ ওই বাঁশের সেতুর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে নির্ভশীল। ওই নদী পার হয়ে দুই পাড়ের মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এছাড়া পৃর্ব পাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মাধ্যমও এটি। তাছাড়া ইরি-বোরো রবিশষ্য আবাদ শুরু হওয়ায় পারাপারে চাপ তো রয়েছেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীটির এপার ওপার জুড়ে বাঁশের সেতুটি নিমার্ণ করা হয়েছে। মাঝামাঝি পর্যায়ে খানিক জায়গা রেখে সেখানে নৌকা রাখা হয়েছে। ফসলাদী নিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন। স্থানীয় খোকন মাঝি নামের এক ব্যাক্তি খেয়াঘাটটি ইজারা নিয়েছেন। সেতুতে পার হতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে সদস্য অনুপাতে অধা মণ থেকে ১মণ হাড়ে ধান নেওয়া হয়। এছাড়া দূরের এলাকা থেকে আসা মানুষের ক্ষেত্রে বাই সাইকেল ৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা ও মানুষ পারাপারের ক্ষেত্রে ২ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
খোকন মাঝি (৪০) জানান, ভড়া বর্ষায় নৌকায় মানুষ পারাপার করা হয়েছে। এখন পানি কমে যাওয়ায় গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে ২৫০ মিটারের বাঁশের সেতুটি নির্মাণ করেছেন তিনি। তবে সেতু পারাপারে টোল বাবদ মানুষের জন্য ২ টাকা ও মটর সাইকেল পরাপারের ক্ষেত্রে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যারা বছর ব্যাপি চুক্তি করেছেন তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়না।
দূর্গাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ওমর আলী (৬২) বলেন, নদীর ওপর সেতু নাথাকায় পূর্ব পাড়ের বাসিন্দারা বেশি কষ্টে আছেন। কারন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন বিদ্যালয় নেই। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে আসে। তাছাড়া এখানকার মানুষের নিত্য কেনা-কাটা, জমির ফসল উৎপাদন-বিক্রি ও দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যেম হয়ে উঠেছে ওই বাঁশের সেতু। একটি ব্রিজ নির্মাণ এই এলাকার মানুষের আর্ত-সমাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
বাঁশের সেতু পাড়পাড়ের সময় কথা হয় সাবগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী, রাজু,সেবক কুমার, মরিয়ম, আঁখি ও দিপালী রানী জানায়, বাঁশের সেতু পার হতে ভয় লাগে। তবুও বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়েই পাড় হতে হয়।

কথা হয় নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা রিয়াজ মিয়ার সাথে তার স্ত্রী রেখা বেগমও ছিলেন। কারন তিনি তার অন্তস্বত্তা স্ত্রীকে বিলদহর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাঁশের সেতুতে উঠতেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারন সেতুটি দুলছিল। তাদের মত এমন দূর্ভোগ নিয়ে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়।
কৃষক মকবুল মিয়া বলেন, নদীর পূর্ব পাশে বিস্তীর্ণ চলনবিল। ওই এলাকার মানুষ আত্রাই নদী পার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তাছাড়া কৃষকদের পন্য পরিবহনেও বাড়ে অসহোনীয় ভোগান্তি। বিশেষ করে ইরি-বোরো মওসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিসের গাড়ি পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রভাষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সারাদেশে যেখানে রাস্তাঘাট, বিদুৎ আর প্রযুক্তিতে অভুতপুর্ব উন্নয়ন হয়েছে সেখানে এই এলাকাটি এখনো অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। এলাকা বাসির দাবি সংবলিত একটি কপি স্থানীয় সাংসদকে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গ্রামের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণ সংক্রন্ত বিষয়টি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তরভুক্ত করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এলাকার মানুষ আশার আলো দেখবেন বলে তাঁর ধারনা।

Tag :

একটি বাঁশের সেতু আর খেয়া নৌকাই তাদের ভরসা!

Update Time : ০৩:৫৬:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

গুরুদাসপুর(নাটোর) প্রতিনিধি.
বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মওসুমে বাঁশের সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ। নাটোরের গুরুদাপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ি আদর্শ বাজার সংলগ্ন আত্রাই নদীর ওপর ওই বাঁশের সেতুর অবস্থান। এলাকাবাসী দশকের পর দশক ভোগান্তি সয়ে পারাপার হলেও একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি উপেক্ষিত থেকে গেছে আজও।
স্থানীয়রা জানান, আত্রাই নদীর পৃর্ব পাড়ে ফকির পাড়া, বিলহরিবাড়ি, হরদোমা, সাবগাড়ী, কৃষ্ণনগরসহ ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষর বসবাস। এছাড়া প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও বিলহরিবাড়ি কবরস্থান রয়েছে। পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে বিয়াঘাট, সাবগাড়ি, বিলদহর ও জ্ঞানদা নগর গ্রামছাড়াও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও সাবগাড়ী হাট রয়েছে। আত্রাই নদীর দুই পাড়ের প্রায় লক্ষাধীক মানুষ ওই বাঁশের সেতুর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে নির্ভশীল। ওই নদী পার হয়ে দুই পাড়ের মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এছাড়া পৃর্ব পাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মাধ্যমও এটি। তাছাড়া ইরি-বোরো রবিশষ্য আবাদ শুরু হওয়ায় পারাপারে চাপ তো রয়েছেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীটির এপার ওপার জুড়ে বাঁশের সেতুটি নিমার্ণ করা হয়েছে। মাঝামাঝি পর্যায়ে খানিক জায়গা রেখে সেখানে নৌকা রাখা হয়েছে। ফসলাদী নিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন। স্থানীয় খোকন মাঝি নামের এক ব্যাক্তি খেয়াঘাটটি ইজারা নিয়েছেন। সেতুতে পার হতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে সদস্য অনুপাতে অধা মণ থেকে ১মণ হাড়ে ধান নেওয়া হয়। এছাড়া দূরের এলাকা থেকে আসা মানুষের ক্ষেত্রে বাই সাইকেল ৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা ও মানুষ পারাপারের ক্ষেত্রে ২ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
খোকন মাঝি (৪০) জানান, ভড়া বর্ষায় নৌকায় মানুষ পারাপার করা হয়েছে। এখন পানি কমে যাওয়ায় গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে ২৫০ মিটারের বাঁশের সেতুটি নির্মাণ করেছেন তিনি। তবে সেতু পারাপারে টোল বাবদ মানুষের জন্য ২ টাকা ও মটর সাইকেল পরাপারের ক্ষেত্রে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যারা বছর ব্যাপি চুক্তি করেছেন তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়না।
দূর্গাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ওমর আলী (৬২) বলেন, নদীর ওপর সেতু নাথাকায় পূর্ব পাড়ের বাসিন্দারা বেশি কষ্টে আছেন। কারন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন বিদ্যালয় নেই। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে আসে। তাছাড়া এখানকার মানুষের নিত্য কেনা-কাটা, জমির ফসল উৎপাদন-বিক্রি ও দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যেম হয়ে উঠেছে ওই বাঁশের সেতু। একটি ব্রিজ নির্মাণ এই এলাকার মানুষের আর্ত-সমাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
বাঁশের সেতু পাড়পাড়ের সময় কথা হয় সাবগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী, রাজু,সেবক কুমার, মরিয়ম, আঁখি ও দিপালী রানী জানায়, বাঁশের সেতু পার হতে ভয় লাগে। তবুও বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়েই পাড় হতে হয়।

কথা হয় নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা রিয়াজ মিয়ার সাথে তার স্ত্রী রেখা বেগমও ছিলেন। কারন তিনি তার অন্তস্বত্তা স্ত্রীকে বিলদহর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাঁশের সেতুতে উঠতেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারন সেতুটি দুলছিল। তাদের মত এমন দূর্ভোগ নিয়ে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়।
কৃষক মকবুল মিয়া বলেন, নদীর পূর্ব পাশে বিস্তীর্ণ চলনবিল। ওই এলাকার মানুষ আত্রাই নদী পার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তাছাড়া কৃষকদের পন্য পরিবহনেও বাড়ে অসহোনীয় ভোগান্তি। বিশেষ করে ইরি-বোরো মওসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিসের গাড়ি পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রভাষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সারাদেশে যেখানে রাস্তাঘাট, বিদুৎ আর প্রযুক্তিতে অভুতপুর্ব উন্নয়ন হয়েছে সেখানে এই এলাকাটি এখনো অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। এলাকা বাসির দাবি সংবলিত একটি কপি স্থানীয় সাংসদকে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গ্রামের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণ সংক্রন্ত বিষয়টি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তরভুক্ত করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এলাকার মানুষ আশার আলো দেখবেন বলে তাঁর ধারনা।