বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গরীবের কপালে এবার পচাঁ, পোকাধরা, রঙ্গীন ভিজিডি’র চাল

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মে ২০২১
  • ১৮২ Time View

গাইবান্ধা প্রতিনিধি.
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিডির উপকার ভোগীদের জন্য পচাঁ, পোকাধরা নিম্মমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। খাওয়ার অযোগ্য এ চাল উপকারভোগীরা নিজেরা না খেয়ে চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তবে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ জানায়, চালের গুণগত মান ঠিক আছে।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের ভিজিডির ২০৩ জন উপকার ভোগি রয়েছে। গতকাল রোববার ও আজ সোমবার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল বিতরণের কথা। চাল নিতে আসেন আলেয়া বেগম ও লাকী বেগমসহ আরও অনেকে। কিন্তু এবার বোনারপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেয়া চাল দেখে তারা সবাই হতবাক। কারণ ধান আর চালের রংয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো চালের রং লালচে, কোনোটি নীল, কোনটি সবুজ, আবার কোনটি কালো। সাথে রয়েছে হাতিয়া পোকা।

মুক্তিনগর ইউনিয়নের আলেয়া বেগম ও লাকী বেগম। অভাবের সংসারে সরকারিভাবে ভিজিডির ৩০ কেজি চাল তাদের জন্য সরকারের দেয়া অশির্বাদ। এ চাল দিয়েই পাড়ি দেয় অভাবের সংস্যার। আলেয়া বেগম বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলায় লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু জনগণকে যে চাল দিচ্ছে তা খেলে করোনা ভাইরাস লাগবে না, অসুস্থ হয়ে কখন যে মরবো তার ঠিক নেই। এ চাল তো মানুষ খেতে পারবে না। গরু ছাগলকে এ চাল খাওয়ালেও অসুস্থ হবে। কারণ চালের মধ্যে পোকা নড়াচড়া করছে।’
একই ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি চাল এতটা নিম্নমানের হবে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। সরকার মনে করে জনগণ ঠিক ঠাক চাল পাচ্ছেন । কিন্ত এ চাল এতোটাই নিম্নমানের যে মানুষ খেতে পারবে না। সেটা হয়তো সরকারও জানে না।’ ইউনিয়নের নবান আলী বলেন, ‘এ চাল সম্পূর্ন পচা। গবীর বলে আমাদের জন্য পঁচা চাল। কী আর করার, কে দেখবে আমাদের কষ্ট।’
সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউপির সদস্য পান্না শেখ বলেন, ‘নিম্মমানের চাল বিতরণের ফলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা জন প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। জনগণ মনে করে এ চাল আমরাই দিই। এ চাল বিতরণের ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।’
সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকন বলেন, ‘এবার ভিজিডির চালের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতো নিম্মমানের চাল কখনো দেখিনি। এ চাল বিতরণের কারণে উপকারভোগীরা আমাদের গালমন্দ করছেন। বিষয়টি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিতরণের কথা বলেন। ফলে বাধ্য হয়ে চাল বিতরণ করি।’
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা বোনারপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলম চালের রং বিভিন্ন হওয়া সম্পর্কে খোড়া যুক্তি দেখিয়ে বলেন,‘চালের রং লালচে হওয়ার কারণ বেশি হিট পেয়েছে। তবে চালগুলো গুণগতমান কমেনি। সম্পূর্নভাবে খাওয়ার উপযোগী। তবে কালো ও সবুজ হওয়ার কথা জানালে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাঘাটা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট ভিজিডি’র উপকার ভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮০ জন । এর মধ্যে মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিটির উপকার ভোগী মোট ২০৩ জন।

Tag :

গরীবের কপালে এবার পচাঁ, পোকাধরা, রঙ্গীন ভিজিডি’র চাল

Update Time : ০৮:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মে ২০২১

গাইবান্ধা প্রতিনিধি.
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিডির উপকার ভোগীদের জন্য পচাঁ, পোকাধরা নিম্মমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। খাওয়ার অযোগ্য এ চাল উপকারভোগীরা নিজেরা না খেয়ে চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তবে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ জানায়, চালের গুণগত মান ঠিক আছে।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের ভিজিডির ২০৩ জন উপকার ভোগি রয়েছে। গতকাল রোববার ও আজ সোমবার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল বিতরণের কথা। চাল নিতে আসেন আলেয়া বেগম ও লাকী বেগমসহ আরও অনেকে। কিন্তু এবার বোনারপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেয়া চাল দেখে তারা সবাই হতবাক। কারণ ধান আর চালের রংয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো চালের রং লালচে, কোনোটি নীল, কোনটি সবুজ, আবার কোনটি কালো। সাথে রয়েছে হাতিয়া পোকা।

মুক্তিনগর ইউনিয়নের আলেয়া বেগম ও লাকী বেগম। অভাবের সংসারে সরকারিভাবে ভিজিডির ৩০ কেজি চাল তাদের জন্য সরকারের দেয়া অশির্বাদ। এ চাল দিয়েই পাড়ি দেয় অভাবের সংস্যার। আলেয়া বেগম বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলায় লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু জনগণকে যে চাল দিচ্ছে তা খেলে করোনা ভাইরাস লাগবে না, অসুস্থ হয়ে কখন যে মরবো তার ঠিক নেই। এ চাল তো মানুষ খেতে পারবে না। গরু ছাগলকে এ চাল খাওয়ালেও অসুস্থ হবে। কারণ চালের মধ্যে পোকা নড়াচড়া করছে।’
একই ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি চাল এতটা নিম্নমানের হবে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। সরকার মনে করে জনগণ ঠিক ঠাক চাল পাচ্ছেন । কিন্ত এ চাল এতোটাই নিম্নমানের যে মানুষ খেতে পারবে না। সেটা হয়তো সরকারও জানে না।’ ইউনিয়নের নবান আলী বলেন, ‘এ চাল সম্পূর্ন পচা। গবীর বলে আমাদের জন্য পঁচা চাল। কী আর করার, কে দেখবে আমাদের কষ্ট।’
সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউপির সদস্য পান্না শেখ বলেন, ‘নিম্মমানের চাল বিতরণের ফলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা জন প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। জনগণ মনে করে এ চাল আমরাই দিই। এ চাল বিতরণের ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।’
সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকন বলেন, ‘এবার ভিজিডির চালের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতো নিম্মমানের চাল কখনো দেখিনি। এ চাল বিতরণের কারণে উপকারভোগীরা আমাদের গালমন্দ করছেন। বিষয়টি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিতরণের কথা বলেন। ফলে বাধ্য হয়ে চাল বিতরণ করি।’
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা বোনারপাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলম চালের রং বিভিন্ন হওয়া সম্পর্কে খোড়া যুক্তি দেখিয়ে বলেন,‘চালের রং লালচে হওয়ার কারণ বেশি হিট পেয়েছে। তবে চালগুলো গুণগতমান কমেনি। সম্পূর্নভাবে খাওয়ার উপযোগী। তবে কালো ও সবুজ হওয়ার কথা জানালে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাঘাটা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট ভিজিডি’র উপকার ভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮০ জন । এর মধ্যে মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিটির উপকার ভোগী মোট ২০৩ জন।