শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খরায় ঝড়ছে লিচু, দিশেহারা গুরুদাসপুরের বাগান মালিকরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:২৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মে ২০২১
  • ১২৫ Time View

প্রভাষক মো.মাজেম আলী মলিন
প্রচন্ড খরায় ঝরে পড়ছে গুরুদাসপরের অর্থকারী ফল লিচু। এ বছর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন ছিল কৃষকদের মাঝে। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে কাঁচা লিচুতে ক্ষত হয়ে ঝরে পড়ায় স্বপ্ন ভঙ্গের চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তীব্র খরায় কালচে দাগ হয়ে ফেটে যাচ্ছে লিচু , আকারও হচ্ছে ছোট ।
এদিকে বৈশ্বয়িক সমস্যা করোনার কারণে গুরুদাসপুরের লিচুচাষিরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনদের কাছে এ বছর তাঁদের লিচুগাছ বিক্রি করতে পারছেন না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার লিচু দেশের চাহিদা পুরণ করে থাকে। খরার কারণে কিছু লিচু ঝলসে যাওয়ায় চাষিদের কিছুটা ক্ষতি আশঙ্কা থেকেই যায়।

উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার লিচুচাষি মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, বেশ কিছু দিন পুর্বে এক পশলা বৃষ্টি হয়। এর পর আর কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রচন্ড খরায় গাছে লিচু ঝরে পরতে থাকে। এনিয়ে তারা বেশ চিন্তায় পড়ে যান। বিয়াঘাট মোল্লা বাজার এলাকার বাগান মালিক মোঃ সাইফুল মোল্লা জানান, এক মাস ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন গাছের লিচু ঝরে পড়ছে, আকারে ছোট হচ্ছে এবং লিচুতে কালো দাগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গুরুদাসপরে লিচুগাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। ফলে তারাও লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করেছিল। এ বছর গুরুদাসপুরে ৫৭০টি ছোটবড় বাগান মিলে লিচু চাষীরা ৪১০ হেক্টোর জমিতে লিচু উৎপাদন করছেন। এ বছর প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করেছিল কৃষি বিভাগ। গত বছর গুরুদাসপুরে শতকোটি টাকার উর্ধে লিচু বিক্রি হয়েছিল।

ওই এলাকার বেশ কিছু বাগান মালিক জানান, মহামারী করোনার কারনে অন্য জেলার কোনো মহাজন লিচুবাগান কিনতে গুরুদাসপুরে তুলনা মুলক কম আসছেন। এ কারণে এ বছর চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশংখ্যা করছেন তারা। নাজিরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর প্রামের লিচু চাষি আব্দুর রহিম জানান, তাঁর ৪০০ লিচুগাছে এবার ভালো ফলনের আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অত্যধিক খরা এবং মহামারী করোনার কারণে তিনি একটি গাছও এ বছর বিক্রি করতে পারেননি। এনিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন বলে প্রতিবেদকে জানান।

কিছু পাইকারি লিচু ব্যাবসায়ী জানান, বাগান থেকে লিচু তুলে আনার পর এমনিতেই এক দিনের বেশি রাখা যায় না তার উপর আবার প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। এবং লিচুর গায়ে ক্ষত আর করোনার ভয়ে তাঁরা এবার বাগান কিনতে সাহস পচ্ছেন না।
বেশ কয়েকজন আড়ৎদার জানান,আর মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এসব বাগানের পরিপূর্ণ রসালো লিচু বাজারজাতকরণের উপযোগি হয়ে উঠবে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা লিচুর বাগান কিনতে আসলেও করোনা মহামারির কারণে তারা আসতে পারছেন না।

সমপ্রতি উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে জানা গেছে, কিছুদিন পুর্বেও উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় লিচুর গুটি শোভা পাচ্ছিল। এখন সেই লিচু সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে।
বেড়গঙ্গারামপুর লিচু আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, প্রতিবছর লিচুর ভরা মৌসুমে ১শ থেকে দেড়শ ট্রাক লিচু দেশব্যাপী বিক্রি হত কিন্তু এ বছর প্রচন্ড তাপদাহে লিচু ঝরে পড়ায় সরবরাহ অনেক কম হবে। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও লাভের স্বপ্নে আশায় বুক বেঁধে লিচুর পরিচর্যা করছেন লিচু চাষীরা।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ জানান, এ বছর ৫৭০টি ছোটবড় বাগানে ৪১০ হেক্টোর জমিতে লিচু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে লিচুর অবস্থা ভালো আছে। কিছুকিছু জায়গায় খরার কারণে সমস্যা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছি। আশা করছি কৃষকরা লিচুর ভাল ফলন ও ন্যায্য মুল্য দুটোই পাবেন।

Tag :

খরায় ঝড়ছে লিচু, দিশেহারা গুরুদাসপুরের বাগান মালিকরা

Update Time : ০৮:২৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মে ২০২১

প্রভাষক মো.মাজেম আলী মলিন
প্রচন্ড খরায় ঝরে পড়ছে গুরুদাসপরের অর্থকারী ফল লিচু। এ বছর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন ছিল কৃষকদের মাঝে। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে কাঁচা লিচুতে ক্ষত হয়ে ঝরে পড়ায় স্বপ্ন ভঙ্গের চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তীব্র খরায় কালচে দাগ হয়ে ফেটে যাচ্ছে লিচু , আকারও হচ্ছে ছোট ।
এদিকে বৈশ্বয়িক সমস্যা করোনার কারণে গুরুদাসপুরের লিচুচাষিরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনদের কাছে এ বছর তাঁদের লিচুগাছ বিক্রি করতে পারছেন না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার লিচু দেশের চাহিদা পুরণ করে থাকে। খরার কারণে কিছু লিচু ঝলসে যাওয়ায় চাষিদের কিছুটা ক্ষতি আশঙ্কা থেকেই যায়।

উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার লিচুচাষি মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, বেশ কিছু দিন পুর্বে এক পশলা বৃষ্টি হয়। এর পর আর কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রচন্ড খরায় গাছে লিচু ঝরে পরতে থাকে। এনিয়ে তারা বেশ চিন্তায় পড়ে যান। বিয়াঘাট মোল্লা বাজার এলাকার বাগান মালিক মোঃ সাইফুল মোল্লা জানান, এক মাস ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন গাছের লিচু ঝরে পড়ছে, আকারে ছোট হচ্ছে এবং লিচুতে কালো দাগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গুরুদাসপরে লিচুগাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। ফলে তারাও লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করেছিল। এ বছর গুরুদাসপুরে ৫৭০টি ছোটবড় বাগান মিলে লিচু চাষীরা ৪১০ হেক্টোর জমিতে লিচু উৎপাদন করছেন। এ বছর প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করেছিল কৃষি বিভাগ। গত বছর গুরুদাসপুরে শতকোটি টাকার উর্ধে লিচু বিক্রি হয়েছিল।

ওই এলাকার বেশ কিছু বাগান মালিক জানান, মহামারী করোনার কারনে অন্য জেলার কোনো মহাজন লিচুবাগান কিনতে গুরুদাসপুরে তুলনা মুলক কম আসছেন। এ কারণে এ বছর চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশংখ্যা করছেন তারা। নাজিরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর প্রামের লিচু চাষি আব্দুর রহিম জানান, তাঁর ৪০০ লিচুগাছে এবার ভালো ফলনের আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অত্যধিক খরা এবং মহামারী করোনার কারণে তিনি একটি গাছও এ বছর বিক্রি করতে পারেননি। এনিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন বলে প্রতিবেদকে জানান।

কিছু পাইকারি লিচু ব্যাবসায়ী জানান, বাগান থেকে লিচু তুলে আনার পর এমনিতেই এক দিনের বেশি রাখা যায় না তার উপর আবার প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। এবং লিচুর গায়ে ক্ষত আর করোনার ভয়ে তাঁরা এবার বাগান কিনতে সাহস পচ্ছেন না।
বেশ কয়েকজন আড়ৎদার জানান,আর মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এসব বাগানের পরিপূর্ণ রসালো লিচু বাজারজাতকরণের উপযোগি হয়ে উঠবে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা লিচুর বাগান কিনতে আসলেও করোনা মহামারির কারণে তারা আসতে পারছেন না।

সমপ্রতি উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে জানা গেছে, কিছুদিন পুর্বেও উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় লিচুর গুটি শোভা পাচ্ছিল। এখন সেই লিচু সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে।
বেড়গঙ্গারামপুর লিচু আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, প্রতিবছর লিচুর ভরা মৌসুমে ১শ থেকে দেড়শ ট্রাক লিচু দেশব্যাপী বিক্রি হত কিন্তু এ বছর প্রচন্ড তাপদাহে লিচু ঝরে পড়ায় সরবরাহ অনেক কম হবে। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও লাভের স্বপ্নে আশায় বুক বেঁধে লিচুর পরিচর্যা করছেন লিচু চাষীরা।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ জানান, এ বছর ৫৭০টি ছোটবড় বাগানে ৪১০ হেক্টোর জমিতে লিচু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে লিচুর অবস্থা ভালো আছে। কিছুকিছু জায়গায় খরার কারণে সমস্যা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছি। আশা করছি কৃষকরা লিচুর ভাল ফলন ও ন্যায্য মুল্য দুটোই পাবেন।