শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বগুরায় কলসের মধ্যেই পেতেছে পাখির সংসার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মে ২০২১
  • ৭০ Time View

আবদুর রহমান টুলু বগুড়া থেকে.

পাখি আসছে পাখি যাচ্ছে। এ ডালে সে ডালে উড়ছে। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামে সরকারিভাবে গড়ে তোলা বারামখানা। পথচারীদের জন্য গড়ে তোলা বিশ্রামখানার নাম দেওয়া হয়েছে বারামখানা। আর এই বারামখানাটি এক বিঘা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। শতাধিক বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়ে করা হয়েছে সবুজায়ন। বৃক্ষের ডালে ডালে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধশত কলস। আর এই কলসের মধ্যেই সংসার পেতেছে পাখিরা।

জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামসহ আরও তিনটি গ্রামের মানুষকে রক্ষায় স্বাধীনতার সময় মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়ালের মতো করে নির্মাণ করা হয়, যেন বহিঃশত্রু থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। সে কারণে আগে থেকেই এলাকাটি একটু নীরব। যদিও কালের বিবর্তনে সেই দেয়াল আর নেই। কিন্তু গাছ-গাছালি ঠিকই ছিল। সেই গাছ-গাছালি ও ছায়াঘেরা এলাকাটিকে পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বছরখানেক আগে স্থাপন করা হয় চৌচালা বিশ্রামাগার ‘বারামখানা’।

স্থানীয় লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমানের সহযোগিতায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর আলমের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্রামের জন্য এই বারামখানা। বারামখানার পাশেই রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠে মাঠে কৃষক ফসল ফলায়। আর তার চারপাশ ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি দিয়ে ভরে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবেই নৈসর্গিক স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে বারামখানা। পথচারীদের বিশ্রামাগার বারামখানা প্রতিষ্ঠার পর সেটিকে ঘিরে চারদিকে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা তৈরির পরিকল্পনা করে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’। সেখানে পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য আরও কিছু গাছ রোপণ করা হয়। পাখিদের নিরাপদে বসবাসের জন্য গাছে বেঁধে দেওয়া হয় মাটির কলসি। সেই কলসের মধ্যে বেশ কিছু পাখি খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অল্প দিনেই পাখিদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বারামখানা।

এখন সেখানে চোখে পড়ে খড়কুটো মুখে নিয়ে পাখিদের জন্য তৈরি করা আবাস মাটির কলসে তাদের অবাধ বিচরণ, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। প্রতিদিন বারামখানায় পাখিদের এ অভয়ারণ্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পাখি। পাখিগুলো কলসেই বসবাস করছে। আবার কোনো কোনো পাখি গাছের ডালে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো যেন বারামখানার কলসে সংসার গড়ে তুলেছে।

বগুড়ার সোনাতলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন পরিবেশ উন্নয়ন পরিবারের সভাপতি ইমরান এইচ মন্ডল জানান, ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সুন্দর রাখতে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের এ উদ্যোগ। যেহেতু বারামখানা চত্বরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থান এবং আগে থেকেই এখানে পাখিদের বিচরণ রয়েছে, সেখানে সংগঠনের মাধ্যমে পাখিদের বৃহৎ অভয়াশ্রম করা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, আগের চেয়ে এখন ওই গ্রামে অনেক বেশি পাখি আসে। আগে এত পাখি দেখা যেত না। পাখিগুলো সকালে আর সন্ধ্যার আগে সবচেয়ে বেশি কিচিরমিচির করে। বাকি সময় পাখিগুলো মাঠে মাঠে খাবার সংগ্রহ করে থাকে। এলাকার মানুষও পাখিগুলোর যত্ন নেন। ছোট-বড় কেউই পাখিগুলোকে আঘাত করে না। বিশ্রামাগারে সবাই বসতে পারে।

Tag :

বগুরায় কলসের মধ্যেই পেতেছে পাখির সংসার

Update Time : ০৮:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মে ২০২১

আবদুর রহমান টুলু বগুড়া থেকে.

পাখি আসছে পাখি যাচ্ছে। এ ডালে সে ডালে উড়ছে। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামে সরকারিভাবে গড়ে তোলা বারামখানা। পথচারীদের জন্য গড়ে তোলা বিশ্রামখানার নাম দেওয়া হয়েছে বারামখানা। আর এই বারামখানাটি এক বিঘা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। শতাধিক বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়ে করা হয়েছে সবুজায়ন। বৃক্ষের ডালে ডালে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধশত কলস। আর এই কলসের মধ্যেই সংসার পেতেছে পাখিরা।

জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামসহ আরও তিনটি গ্রামের মানুষকে রক্ষায় স্বাধীনতার সময় মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়ালের মতো করে নির্মাণ করা হয়, যেন বহিঃশত্রু থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। সে কারণে আগে থেকেই এলাকাটি একটু নীরব। যদিও কালের বিবর্তনে সেই দেয়াল আর নেই। কিন্তু গাছ-গাছালি ঠিকই ছিল। সেই গাছ-গাছালি ও ছায়াঘেরা এলাকাটিকে পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বছরখানেক আগে স্থাপন করা হয় চৌচালা বিশ্রামাগার ‘বারামখানা’।

স্থানীয় লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমানের সহযোগিতায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর আলমের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্রামের জন্য এই বারামখানা। বারামখানার পাশেই রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠে মাঠে কৃষক ফসল ফলায়। আর তার চারপাশ ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি দিয়ে ভরে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবেই নৈসর্গিক স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে বারামখানা। পথচারীদের বিশ্রামাগার বারামখানা প্রতিষ্ঠার পর সেটিকে ঘিরে চারদিকে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা তৈরির পরিকল্পনা করে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’। সেখানে পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য আরও কিছু গাছ রোপণ করা হয়। পাখিদের নিরাপদে বসবাসের জন্য গাছে বেঁধে দেওয়া হয় মাটির কলসি। সেই কলসের মধ্যে বেশ কিছু পাখি খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অল্প দিনেই পাখিদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বারামখানা।

এখন সেখানে চোখে পড়ে খড়কুটো মুখে নিয়ে পাখিদের জন্য তৈরি করা আবাস মাটির কলসে তাদের অবাধ বিচরণ, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। প্রতিদিন বারামখানায় পাখিদের এ অভয়ারণ্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পাখি। পাখিগুলো কলসেই বসবাস করছে। আবার কোনো কোনো পাখি গাছের ডালে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো যেন বারামখানার কলসে সংসার গড়ে তুলেছে।

বগুড়ার সোনাতলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন পরিবেশ উন্নয়ন পরিবারের সভাপতি ইমরান এইচ মন্ডল জানান, ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সুন্দর রাখতে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের এ উদ্যোগ। যেহেতু বারামখানা চত্বরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থান এবং আগে থেকেই এখানে পাখিদের বিচরণ রয়েছে, সেখানে সংগঠনের মাধ্যমে পাখিদের বৃহৎ অভয়াশ্রম করা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, আগের চেয়ে এখন ওই গ্রামে অনেক বেশি পাখি আসে। আগে এত পাখি দেখা যেত না। পাখিগুলো সকালে আর সন্ধ্যার আগে সবচেয়ে বেশি কিচিরমিচির করে। বাকি সময় পাখিগুলো মাঠে মাঠে খাবার সংগ্রহ করে থাকে। এলাকার মানুষও পাখিগুলোর যত্ন নেন। ছোট-বড় কেউই পাখিগুলোকে আঘাত করে না। বিশ্রামাগারে সবাই বসতে পারে।