প্রভাষক মোঃ মাজেম আলী মলিন.
গ্রামের নাম নাজিরপুর। গ্রাম জুড়েই এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য লিচু গাছ। রাস্তার দুই পাশে দিগন্ত জোড়া চোখ ধাঁধাঁনো সব লিচুর বাগান। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। যেদিকেই চোখ যায় দেখাযায় লাল টসটসে লিচুর সমাহার। এমন মন মাতানো দৃশ্য চোখে পড়বে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিপুর গ্রামে।
কুড়ি বছরের প্রসিদ্ধ সুমিষ্ট নাজিরপুরের লিচুর কদর দেশে জুড়েই রয়েছে। ভৌগলিক কারনে এই ঐতিহ্যবাহী লিচুর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সর্বত্র। প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এখান থেকে। লিচু চাষে ভাগ্য ফিরেছে নাজিরপুর গ্রামসহ ওই এলাকার হাজারো মানুষের। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
স্থানীয়দের দাবি, ২০০১ সাল থেকে শুরু হয় এই এলাকায় লিচু চাষের। দীর্ঘ ২০ এখন উপজেলা ব্যাপি বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। নাজিরপুর গ্রামের মৃত কানু মোল্লা নামে এক ব্যক্তি কিছু লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। এভাবেই লিচুর চাষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রাম পর্যায়ক্রমে উপজেলা ব্যাপি। তার নাম অনুসারেই কানু মোল্লার বটতলামোড় বাজারের নাম করণ করা হয় বলে ওই এলাকার কিছু প্রবীণ ব্যাক্তিরা জানান।
প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুমে নাজিরপুর গ্রাম জুড়ে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার-ফরিয়া ও মহাজনরা আসছেন লিচু কিনতে। এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতি ১হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৮শ থেকে ২২শ টাকায়।
শহর থেকে লিচু কিনতে আসা সাজেদুর রহমান ও তার স্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা এখানে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচুর স্বাদই আলাদা। লিচু কিনতে কোন ঝামেলা হয় না। সরাসরি বাগান থেকে দেখে শুনে লিচু কেনা যায়।’
পাবনার চাটমোহর থেকে মো. নুর আলম স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে এসেছেন লিচু কিনতে। তিনি বলেন, ‘এ লিচুর কথা জানতে পারি অনেক দিন আগে। আজ কিনতে এসেছি। এটা অনেক ভালো লিচু। দেখতে যেমন সুন্দর। খেতেও খুব মজা। তাই দাম একটু বেশি হলেও ১ হাজার লিচু কিনেছি পরিবারসহ খাবার জন্য।’
সিরাজগঞ্জের জিন্দানী কলেজের শিক্ষক আবুল কাসেম বলেন, ‘এই লিচু পাকলে টকটকে লাল রঙ হয়। এর ভেতরে মাংস বেশি এবং বিচি ছোট। খুবই সুমিষ্ট। তাই আমরা এখান থেকে প্রতি বছর লিচু কিনি।’
নাজিরপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান পেশা ফলজ আবাদ করা। কুল,বাঙ্গি,তরমুজের পাশাপাশি লিচুর আয় থেকেই চলে পরিবারের ভরণ-পোষণ আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। মৌসুমের শুরুতে মুকুল আসার পরই চাষিদের কাছ থেকে গাছ কিনে নেন স্থানীয় ব্যাপারীরা। এরপর পরিচর্যা করে গাছের পাকা লিচু বিক্রি করেন তারা। বংশ পরম্পরায় অনেকে জড়িত এই সকল আবাদে সাথে।
লিচু গাছ মালিক মোঃ স্বপন,মুকুল ও গোপালসহ কয়েক বন্ধু জানান, ‘আমাদের প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে লিচু। এর আয় থেকেই পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চলে। এবার আমরা ১শ থেকে দেড়শটি গাছ বিক্রি করেছি ১৫ লাখ টাকায়।’
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন নাজিপুরের ব্যবসায়ী মো. সাখাওয়াত মোল্লা। এবারও তিনি প্রায় ২০০ গাছ কিনেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও ১৪-১৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হারুনর রশিদ বলেন, ‘নাজিরপুরসহ উপজেলায় প্রায় প্রায় ৪০১০ হেক্টর জমিতে মোজফ্ফর, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলানায় ৫হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে এ বছর। যার বাজার মূল্যে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক কারনে এবার ফলন একটু কম। তবে দাম তুলনামুল ভাবে একটু বেশী হওয়ায় কৃষকরা একটু খুশি। ‘আমাদের তরফ থেকে লিচু চাষিদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।