বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন ধর্মের একই তীর্থস্থান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
  • ৫৭ Time View

বনলতা ডেস্ক.
মুসলমানদের প্রথম কেবলা মাসজিদুল আকসা হজরত সোলায়মান (আ.) জিনদের সাহায্যে ৪০ বছরব্যাপী নির্মাণ করেন এবং এ নির্মাণকালীন হজরত সোলায়মান (আ.) মৃত্যুবরণ করেন।

এর পর জেরুজালেমের অনেক করুণ ইতিহাস রয়েছে, বিভিন্ন রাজা বাদশাহ এবং সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা দখল পুনর্দখলের মাধ্যমে এ শহরটি একেবারেই তছনছ হয়ে যায়। জেরুজালেম শহরটি আবার পুনর্গঠন করা হয় ৫৪০ খ্রিষ্টপূর্বে।
এবার পারস্য সম্রাট নিহামিয়াম-এর পুনর্নির্মাণ করেন। ৪২-৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আগিপ্পা তৃতীয় দেওয়াল নামে আল আকসার কাছে দেওয়াল নির্মাণ করেন। পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত অনেক নবী-রাসূলের বিচরণের ভূমি ছিল এটি। বিশেষ করে ইহুদিদের নবী হজরত মুসা (আ.)-এর কর্মক্ষেত্র ছিল এ জেরুজালেম।
হজরত মুসা (আ.) তার অনুসারীদের নিয়ে মিসরের ফেরাউনের হাত থেকে বাঁচার জন্য লৌহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সিনাই উপত্যকা দিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নেন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তাকাশে আরোহণের আগে এ জেরুজালেমের মাসজিদে আল আকসাকে কেবলা করে নামাজ পড়েন।
এ জন্য ৩টি ধর্মের তীর্থস্থান এ মসজিদের আকসার শহর জেরুজালেম। মুসলমানদের জন্য মাসজিদুল আকসা, খ্রিষ্টানদের হলি চার্চ সেপাল চার, জেরুজালেম থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহাম এবং ইহুদিদের তৃতীয় দেওয়াল (থার্ড ওয়াল)।
৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম দখলের পর দীর্ঘদিন এটা মুসলমানদের দখলে ছিল। ওমর (রা.)-এর সৈন্যদের দ্বারা শহরটি যখন অবরোধ করা হয়, তখন সেখানকার খ্রিষ্টান শাসক সফরোনিয়াস আত্মসমর্পণের পূর্বশর্ত হিসাবে খলিফা ওমরের উপস্থিতি কামনা করেন।
মধ্য যুগে এটার দখল নিয়ে খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বেশ কিছু ধর্ম যুদ্ধ বা ক্রুসেড অনুষ্ঠিত হয়। ১০৯৯ সালে রোমের খিষ্টানরা জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মিসরের ফাতেমী শাসক সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী তা রোমানদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেন।
১২৪৩ সালে বাইজেন্টাইন খ্রিষ্টান শাসক চার্লস্ আবার জেরুজালেম দখল নেন। ১২৪৪ সালে জর্দানের নিু এলাকায় তথা ডেড সি এলাকায় বাইজেন্টাইনরা আবার রোমানদের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় এবং রোমানরা আবার জেরুজালেম দখল করে নেয়। খাওয়ারিজমের শাসক সুলতান মালিক আল মুয়াত্তাম জেরুজালেম আবার রোমানদের থেকে দখল করেন।
১৫৩৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত জেরুজালেম তুরস্কের উসমানীয় তথা অটোম্যান মুসলিম শাসকদের দখলে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনসহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় ব্রিটিশ-ফ্রান্সের ম্যান্ডেটে।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফার ইহুদিদের লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে স্থানান্তর শুরু হয়। বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় কোটির ঘর ছুঁই ছুঁই।
লেখক : প্রাবিন্ধক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক

Tag :

তিন ধর্মের একই তীর্থস্থান

Update Time : ০৪:০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১

বনলতা ডেস্ক.
মুসলমানদের প্রথম কেবলা মাসজিদুল আকসা হজরত সোলায়মান (আ.) জিনদের সাহায্যে ৪০ বছরব্যাপী নির্মাণ করেন এবং এ নির্মাণকালীন হজরত সোলায়মান (আ.) মৃত্যুবরণ করেন।

এর পর জেরুজালেমের অনেক করুণ ইতিহাস রয়েছে, বিভিন্ন রাজা বাদশাহ এবং সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা দখল পুনর্দখলের মাধ্যমে এ শহরটি একেবারেই তছনছ হয়ে যায়। জেরুজালেম শহরটি আবার পুনর্গঠন করা হয় ৫৪০ খ্রিষ্টপূর্বে।
এবার পারস্য সম্রাট নিহামিয়াম-এর পুনর্নির্মাণ করেন। ৪২-৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আগিপ্পা তৃতীয় দেওয়াল নামে আল আকসার কাছে দেওয়াল নির্মাণ করেন। পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত অনেক নবী-রাসূলের বিচরণের ভূমি ছিল এটি। বিশেষ করে ইহুদিদের নবী হজরত মুসা (আ.)-এর কর্মক্ষেত্র ছিল এ জেরুজালেম।
হজরত মুসা (আ.) তার অনুসারীদের নিয়ে মিসরের ফেরাউনের হাত থেকে বাঁচার জন্য লৌহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সিনাই উপত্যকা দিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নেন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তাকাশে আরোহণের আগে এ জেরুজালেমের মাসজিদে আল আকসাকে কেবলা করে নামাজ পড়েন।
এ জন্য ৩টি ধর্মের তীর্থস্থান এ মসজিদের আকসার শহর জেরুজালেম। মুসলমানদের জন্য মাসজিদুল আকসা, খ্রিষ্টানদের হলি চার্চ সেপাল চার, জেরুজালেম থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহাম এবং ইহুদিদের তৃতীয় দেওয়াল (থার্ড ওয়াল)।
৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম দখলের পর দীর্ঘদিন এটা মুসলমানদের দখলে ছিল। ওমর (রা.)-এর সৈন্যদের দ্বারা শহরটি যখন অবরোধ করা হয়, তখন সেখানকার খ্রিষ্টান শাসক সফরোনিয়াস আত্মসমর্পণের পূর্বশর্ত হিসাবে খলিফা ওমরের উপস্থিতি কামনা করেন।
মধ্য যুগে এটার দখল নিয়ে খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বেশ কিছু ধর্ম যুদ্ধ বা ক্রুসেড অনুষ্ঠিত হয়। ১০৯৯ সালে রোমের খিষ্টানরা জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মিসরের ফাতেমী শাসক সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী তা রোমানদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেন।
১২৪৩ সালে বাইজেন্টাইন খ্রিষ্টান শাসক চার্লস্ আবার জেরুজালেম দখল নেন। ১২৪৪ সালে জর্দানের নিু এলাকায় তথা ডেড সি এলাকায় বাইজেন্টাইনরা আবার রোমানদের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় এবং রোমানরা আবার জেরুজালেম দখল করে নেয়। খাওয়ারিজমের শাসক সুলতান মালিক আল মুয়াত্তাম জেরুজালেম আবার রোমানদের থেকে দখল করেন।
১৫৩৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত জেরুজালেম তুরস্কের উসমানীয় তথা অটোম্যান মুসলিম শাসকদের দখলে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনসহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় ব্রিটিশ-ফ্রান্সের ম্যান্ডেটে।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফার ইহুদিদের লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে স্থানান্তর শুরু হয়। বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় কোটির ঘর ছুঁই ছুঁই।
লেখক : প্রাবিন্ধক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক