শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ আফ্রিকা: সহিংসতায় নিহত বেড়ে ১১৭

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:১৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১
  • ৪৬ Time View

বনলতা ডেস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান বিক্ষোভ, সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ জনে। দুর্নীতি ও আদালত অবমানার অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কার্যত সহিংসতা ও দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে দেশটিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১৭। এছাড়া বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটিতে ২৫ হাজার সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতার করার পরই বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভ অচিরেই সহিংস হয়ে ওঠে। দোকানপাট লুটের পাশাপাশি শুরু হয় ভাঙচুর। অনেক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জুমাকে গ্রেফতার করা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হয় লকডাউনে প্রচুর মানুষের চাকরি যাওয়া এবং জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তাই মানুষ এভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগেই রাস্তায় সেনা নামায় দেশটির সরকার। কিন্তু সংখ্যায় অত বেশি না হলেও সেনা নামার পরেও বিক্ষোভ হয়েছে। সহিংসতা হয়েছে। দেশটির কোয়াজুলু-নাটাল ও গওতেং-এর অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। বিক্ষোভ ও লুঠপাট থামছেই না। তাই এবার ২৫ হাজার সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

পার্লামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নসিভায়ি ম্যাপিসা-এনকাকুলা জানিয়েছেন, ওই দুই শহরেই অধিকাংশ সেনা মোতায়েন করা হবে। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। সেনাকে সেখানে শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যা চলছে, তাকে শুধুমাত্র অপরাধের ছবি হিসাবে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাই এটা অনেক বেশি সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ। ১২ জন প্রধান উস্কানিদাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত দেশটিতে সবমিলিয়ে দুই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডারবানের কিছু এলাকায় এখনও লুটতরাজ চলছে। কিছু এলাকায় মানুষই রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু এরকম চলতে থাকলে জ্বালানি ও খাবারের অভাব দেখা দিতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা খাদ্যসংকট সামলানোর জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

জ্যাকব জুমা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘুষসহ দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন তিনি ও তার সরকার।  দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অবশ্য ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল- দেশের বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটির সামনে তাকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জুমা সেখানে হাজির হননি। এরপরেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষণা করে আদালত।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জ্যাকব জুমা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার প্রশাসনের লোকেরা যখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করছিল, তখন তিনি চোখ বুঁজে ছিলেন।

Tag :

দক্ষিণ আফ্রিকা: সহিংসতায় নিহত বেড়ে ১১৭

Update Time : ০৬:১৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

বনলতা ডেস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান বিক্ষোভ, সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ জনে। দুর্নীতি ও আদালত অবমানার অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কার্যত সহিংসতা ও দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে দেশটিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১৭। এছাড়া বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটিতে ২৫ হাজার সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতার করার পরই বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভ অচিরেই সহিংস হয়ে ওঠে। দোকানপাট লুটের পাশাপাশি শুরু হয় ভাঙচুর। অনেক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জুমাকে গ্রেফতার করা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হয় লকডাউনে প্রচুর মানুষের চাকরি যাওয়া এবং জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তাই মানুষ এভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগেই রাস্তায় সেনা নামায় দেশটির সরকার। কিন্তু সংখ্যায় অত বেশি না হলেও সেনা নামার পরেও বিক্ষোভ হয়েছে। সহিংসতা হয়েছে। দেশটির কোয়াজুলু-নাটাল ও গওতেং-এর অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। বিক্ষোভ ও লুঠপাট থামছেই না। তাই এবার ২৫ হাজার সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

পার্লামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নসিভায়ি ম্যাপিসা-এনকাকুলা জানিয়েছেন, ওই দুই শহরেই অধিকাংশ সেনা মোতায়েন করা হবে। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। সেনাকে সেখানে শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যা চলছে, তাকে শুধুমাত্র অপরাধের ছবি হিসাবে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাই এটা অনেক বেশি সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ। ১২ জন প্রধান উস্কানিদাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত দেশটিতে সবমিলিয়ে দুই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডারবানের কিছু এলাকায় এখনও লুটতরাজ চলছে। কিছু এলাকায় মানুষই রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু এরকম চলতে থাকলে জ্বালানি ও খাবারের অভাব দেখা দিতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা খাদ্যসংকট সামলানোর জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

জ্যাকব জুমা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘুষসহ দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন তিনি ও তার সরকার।  দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অবশ্য ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল- দেশের বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটির সামনে তাকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জুমা সেখানে হাজির হননি। এরপরেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষণা করে আদালত।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জ্যাকব জুমা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার প্রশাসনের লোকেরা যখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করছিল, তখন তিনি চোখ বুঁজে ছিলেন।