বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রী আজ রূপপুর পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অক্টোবর ২০২১
  • ১৩১ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক  ঈশ্বরদী পাবনা.

পাবনার ঈশ্বরদীতে স্থাপিত স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আজ ১০ অক্টোবর বসছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেলা ১১টায় ভার্চুয়ালি এর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন ও ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোসাটম ও প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলটি রাশিয়া থেকে জলপথে ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দেশে পৌঁছে। সেটি স্থাপনের জন্য এক বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়। রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে মূল জ্বালানি থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূলকাঠামো পরমাণু চুল্লি । বিদ্যুকেন্দ্রের হৃৎপিন্ড বা প্রাণ এই যন্ত্রটি।

 


রোসাটম জানায়, পারমাণবিক চুল্লির পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন। এই চুল্লি কৃষ্ণ সাগর ও সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে নৌপথে ঈশ্বরদীর পাকশীর পদ্মানদী হয়ে রূপপুরে আনা হয়েছে।
পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি ছিল না। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, চুল্লি স্থাপনের কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে ঈশ্বরদী রূপপুর প্রকল্পে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে সভায় রোসাটমের ডিরেক্টর জেনারেল এলেক্সি লিকোসেভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. সৌকত আকবর, স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ড. শওকত আকবর বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে দৈনিক ২৫ হাজার দেশি-বিদেশী প্রকৌশলী-শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে আমূল পাল্টে গেছে রূপপুরের প্রকল্প এলাকা। প্রথম ইউনিটের সকল কাজ প্রায় প্রস্তুত। ভৌত অবকাঠামোতে এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় ইউনিটও। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী পরমানু চুল্লি বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে মাইলফলক অর্জিত হবে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কম্পোমেন্টের মধ্যে ৪টা সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। ফলে দেশের ৬ কোটি মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন আপোষ নেই। মোর সেভ মোর সেভের শেষটা নিয়ে কাজ হচ্ছে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। পুরো প্রকল্পটি চালু হলে সাফল্যের ধারায় পরমাণুর সম্মান ও সক্ষমতার নতুন স্তরে পৌছাবে বাংলাদেশ।

Tag :

প্রধানমন্ত্রী আজ রূপপুর পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন

Update Time : ০৪:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অক্টোবর ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক  ঈশ্বরদী পাবনা.

পাবনার ঈশ্বরদীতে স্থাপিত স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আজ ১০ অক্টোবর বসছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেলা ১১টায় ভার্চুয়ালি এর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন ও ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোসাটম ও প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলটি রাশিয়া থেকে জলপথে ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দেশে পৌঁছে। সেটি স্থাপনের জন্য এক বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়। রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে মূল জ্বালানি থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূলকাঠামো পরমাণু চুল্লি । বিদ্যুকেন্দ্রের হৃৎপিন্ড বা প্রাণ এই যন্ত্রটি।

 


রোসাটম জানায়, পারমাণবিক চুল্লির পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন। এই চুল্লি কৃষ্ণ সাগর ও সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে নৌপথে ঈশ্বরদীর পাকশীর পদ্মানদী হয়ে রূপপুরে আনা হয়েছে।
পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি ছিল না। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, চুল্লি স্থাপনের কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে ঈশ্বরদী রূপপুর প্রকল্পে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে সভায় রোসাটমের ডিরেক্টর জেনারেল এলেক্সি লিকোসেভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. সৌকত আকবর, স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ড. শওকত আকবর বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে দৈনিক ২৫ হাজার দেশি-বিদেশী প্রকৌশলী-শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে আমূল পাল্টে গেছে রূপপুরের প্রকল্প এলাকা। প্রথম ইউনিটের সকল কাজ প্রায় প্রস্তুত। ভৌত অবকাঠামোতে এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় ইউনিটও। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী পরমানু চুল্লি বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে মাইলফলক অর্জিত হবে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কম্পোমেন্টের মধ্যে ৪টা সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। ফলে দেশের ৬ কোটি মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন আপোষ নেই। মোর সেভ মোর সেভের শেষটা নিয়ে কাজ হচ্ছে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। পুরো প্রকল্পটি চালু হলে সাফল্যের ধারায় পরমাণুর সম্মান ও সক্ষমতার নতুন স্তরে পৌছাবে বাংলাদেশ।