শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তবুও ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে সাদা সোনায় স্বপ্ন বুঁনছেন চলনবিলের কৃষক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৯:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
  • ৭৯ Time View

মো.মাজেম আলী মলিন, 
বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। কাদা জলে চলছে আমন ধান কাটা। ধান কাটা শেষে জমি পরিস্কার করে ঋনের বোঝা কাঁধে নিয়েই কাঁদা মাটিতে সাদা সোনা খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন লাগাতে শুরু করেছে চলনবিলের কৃষক। প্রধান ফসল রসুনে ক্ষতি হলেও সাথী ফসল বাঙ্গি চাষে কিছুটা লাভ হওয়ায় এখনো এই আবাদ ধরে রেখেছে চলনবিল এলাকার কৃষকরা।

চলনবিল অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, রসুনের ন্যায্য মুল্য না পেলেও কৃষি উপকরনের দাম বাড়ায় বিগত বছর গুলোর তুলনায় রসুনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুন । ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যায় হচ্ছে। তাছাড়া বীজ, সার-কীট নাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছরে চলনবিলে রসুন চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়ায় মোট ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় বীজ বাবদ ১২ হাজার, সার-কীটনাশক বাবদ ১০ হাজার, শ্রমিক খরচ ৮ হাজার, সেচ বাবদ ৬ হাজার টাকা। এছারা ক্ষুদ্র বর্গা চাষিরা প্রতি বিঘা জমি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বর্গা (লীজ) নিয়ে অধিক খরচে রসুন আবাদ করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) জানান,- এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানী সহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। তবে তিনি রসুনের সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতেই বাঙ্গি আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া পেলে সেখান থেকে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ বাদে ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
একই এলাকার পাটপাড়া গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার জানান,- তিনি চলতি বছরে ৬ বিঘা বর্গা (লীজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসৃনে চষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে সমিতি (এনজিও) থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদে করে নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্য মুল্য না পেলে ঋনের বোঝা সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
চলনবিলের রসুনচাষী নাজমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, গত প্রায় ২২ বছর ধরে চলনবিল অঞ্চলে “বিনাচাষে রসুন” আবাদ শুরু হলেও এবছর করোনায় হাতের অবস্থা ভালো না থাকায় ঋণ কর্জ করে জমি লীজ নিয়ে রসুন রোপণ করছেন তারা। ফসলের ন্যায্যমুল্য না পেলে পথে বসতে হবে তাদের।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন,- চলনবিলে এবছর ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে রসুন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রসুন চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রসুন চাষ হয় চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ,চাটমোহর ও সিংড়া বিলের কিছুঅংশে। প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ এবং সার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে।

Tag :

তবুও ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে সাদা সোনায় স্বপ্ন বুঁনছেন চলনবিলের কৃষক

Update Time : ০৪:৫৯:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১

মো.মাজেম আলী মলিন, 
বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। কাদা জলে চলছে আমন ধান কাটা। ধান কাটা শেষে জমি পরিস্কার করে ঋনের বোঝা কাঁধে নিয়েই কাঁদা মাটিতে সাদা সোনা খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন লাগাতে শুরু করেছে চলনবিলের কৃষক। প্রধান ফসল রসুনে ক্ষতি হলেও সাথী ফসল বাঙ্গি চাষে কিছুটা লাভ হওয়ায় এখনো এই আবাদ ধরে রেখেছে চলনবিল এলাকার কৃষকরা।

চলনবিল অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, রসুনের ন্যায্য মুল্য না পেলেও কৃষি উপকরনের দাম বাড়ায় বিগত বছর গুলোর তুলনায় রসুনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুন । ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যায় হচ্ছে। তাছাড়া বীজ, সার-কীট নাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছরে চলনবিলে রসুন চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়ায় মোট ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় বীজ বাবদ ১২ হাজার, সার-কীটনাশক বাবদ ১০ হাজার, শ্রমিক খরচ ৮ হাজার, সেচ বাবদ ৬ হাজার টাকা। এছারা ক্ষুদ্র বর্গা চাষিরা প্রতি বিঘা জমি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বর্গা (লীজ) নিয়ে অধিক খরচে রসুন আবাদ করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) জানান,- এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানী সহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। তবে তিনি রসুনের সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতেই বাঙ্গি আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া পেলে সেখান থেকে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ বাদে ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
একই এলাকার পাটপাড়া গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার জানান,- তিনি চলতি বছরে ৬ বিঘা বর্গা (লীজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসৃনে চষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে সমিতি (এনজিও) থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদে করে নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্য মুল্য না পেলে ঋনের বোঝা সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
চলনবিলের রসুনচাষী নাজমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, গত প্রায় ২২ বছর ধরে চলনবিল অঞ্চলে “বিনাচাষে রসুন” আবাদ শুরু হলেও এবছর করোনায় হাতের অবস্থা ভালো না থাকায় ঋণ কর্জ করে জমি লীজ নিয়ে রসুন রোপণ করছেন তারা। ফসলের ন্যায্যমুল্য না পেলে পথে বসতে হবে তাদের।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন,- চলনবিলে এবছর ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে রসুন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রসুন চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রসুন চাষ হয় চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ,চাটমোহর ও সিংড়া বিলের কিছুঅংশে। প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ এবং সার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে।