শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুল শিক্ষক লতিফা হেলেন হত্যা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:১১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১
  • ৩৩ Time View

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.

‘আমার বোন কবরে, আসামি কেন বাহিরে’ শ্লোগানে স্কুুল শিক্ষক লতিফা হেলেন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনকর্মসূচি পালন করেছেন প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকরা। বাইজিদ ইসলাম সোহাগকে তদন্তে যুক্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার বেলা ১১ টার দিকে গুরুদাসপুর শহীদ মিনার চত্বরে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

শিক্ষকদের আয়োজিত এই মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার শত শত মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে গুরুদাসপুর শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদুল হক অভিযোগ করেন, ২ বছর অতিবাহিত হলেও এই হত্যাকা-ের তদন্ত শেষ হয়নি। মামলাটি বর্তমানে পিবিআইয়ের কাছে তদন্তাধীন। তবে মূল সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগ (৩৫) উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় তাকে সেই তদন্তেরও বাইরে রাখা হয়েছে। এই মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা পলাতক আসামী আহসান ও মূল সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে নিহতের মা মামলার বাদি মনোয়া বেগম অভিযোগ করেন, ঘরে স্ত্রী ও প্রেমিকা থাকা সত্তেও লতিফাকে বিয়ে করার জন্য উন্মাদ ছিলেন সোহাগ। এজন্য পৃথক বাড়ি এবং আগের মেয়েকেও মেনে নেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয় লতিফাকে। কিন্তু লতিফা রাজি ছিলেন না। একারণে প্রায়শই উদ্ভট সব কা- ঘটনাতেন সোহাগ। বিভিন্ন অজুহাতে সন্দেহভাজন সোহাগ, মমিনুল, হামজা ও আহসান লতিফার বাড়ির সামনে আড্ডা দিতেন এবং লতিফাকে কটূক্তিও করতেন। এছাড়া বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া, লতিফার জামা-কাপড়ে বির্য ত্যাগ এবং টয়লেট-গোসলখানায় উকিও দিতেন সোহাগ। অথচ সোহাগকে তদন্তের বাইরে রাখা হয়েছে। তারা মূল সন্দেহভাজন সোহাগকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান।

অভিযুক্ত বাইজিদ ইসলাম সোহাগ গুরুদাসপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের খেজের আলীর ছেলে। তিনি নাজিরপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসার অফিস সহকারি পদে চাকরি করছেন। একই গ্রামের মৃত নজিমউদ্দিনের মেয়ে লতিফা। তিনি বৃ-কাশো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত মমিনুল, আহসান হামজা ও সোহাগ ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

মানববন্ধনে সহকারি শিক্ষক মাসুদুর রহমান, নুসরাত জাহান রিতা ও আবুল বাশার বলেন, এই মামলায় নিহত লতিফার আগের স্বামী মমিনুল ও তার বন্ধু হামজা উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন। তবে আহসান এখানো পলাতক। মামলার শুরুর দিকে সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগের নাম আসলেও উচ্চ তদবিরে তা চাপা পরে। পলাতক আহসান ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে বাইজিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, ঘটনার রাতে তিনি নিজের টর্চ লাইটি বন্ধু আহসানকে দিয়েছেন। তাছাড়া নিজে অসুস্থ থাকায় লতিফার লাশ দেখা বা জানাযায় তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িত নন।
এদিকে হত্যাকা-ের মূল সন্দেহভাজন সোহাগের বিষয়য়ে পুণরায় তদন্ত করতে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নাটোর পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন জানান, মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের সার্থে নতুন আসামীর ব্যপারে কিছু বলা যাচ্ছেনা। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা হবে।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই বৃষ্টি¯œাত রাতে লতিফাকে তার শয়ন ঘরের বাড়ান্দায় ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পাশের পুকুর থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় লতিফার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় অভিযুক্ত সোহাগের টর্চ লাইট এবং মমিনুলের ব্যবহৃত গামছা পাওয়া যায়।

Tag :

স্কুল শিক্ষক লতিফা হেলেন হত্যা দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

Update Time : ০১:১১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.

‘আমার বোন কবরে, আসামি কেন বাহিরে’ শ্লোগানে স্কুুল শিক্ষক লতিফা হেলেন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনকর্মসূচি পালন করেছেন প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকরা। বাইজিদ ইসলাম সোহাগকে তদন্তে যুক্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার বেলা ১১ টার দিকে গুরুদাসপুর শহীদ মিনার চত্বরে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

শিক্ষকদের আয়োজিত এই মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার শত শত মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে গুরুদাসপুর শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদুল হক অভিযোগ করেন, ২ বছর অতিবাহিত হলেও এই হত্যাকা-ের তদন্ত শেষ হয়নি। মামলাটি বর্তমানে পিবিআইয়ের কাছে তদন্তাধীন। তবে মূল সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগ (৩৫) উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় তাকে সেই তদন্তেরও বাইরে রাখা হয়েছে। এই মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা পলাতক আসামী আহসান ও মূল সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে নিহতের মা মামলার বাদি মনোয়া বেগম অভিযোগ করেন, ঘরে স্ত্রী ও প্রেমিকা থাকা সত্তেও লতিফাকে বিয়ে করার জন্য উন্মাদ ছিলেন সোহাগ। এজন্য পৃথক বাড়ি এবং আগের মেয়েকেও মেনে নেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয় লতিফাকে। কিন্তু লতিফা রাজি ছিলেন না। একারণে প্রায়শই উদ্ভট সব কা- ঘটনাতেন সোহাগ। বিভিন্ন অজুহাতে সন্দেহভাজন সোহাগ, মমিনুল, হামজা ও আহসান লতিফার বাড়ির সামনে আড্ডা দিতেন এবং লতিফাকে কটূক্তিও করতেন। এছাড়া বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া, লতিফার জামা-কাপড়ে বির্য ত্যাগ এবং টয়লেট-গোসলখানায় উকিও দিতেন সোহাগ। অথচ সোহাগকে তদন্তের বাইরে রাখা হয়েছে। তারা মূল সন্দেহভাজন সোহাগকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান।

অভিযুক্ত বাইজিদ ইসলাম সোহাগ গুরুদাসপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের খেজের আলীর ছেলে। তিনি নাজিরপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসার অফিস সহকারি পদে চাকরি করছেন। একই গ্রামের মৃত নজিমউদ্দিনের মেয়ে লতিফা। তিনি বৃ-কাশো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত মমিনুল, আহসান হামজা ও সোহাগ ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

মানববন্ধনে সহকারি শিক্ষক মাসুদুর রহমান, নুসরাত জাহান রিতা ও আবুল বাশার বলেন, এই মামলায় নিহত লতিফার আগের স্বামী মমিনুল ও তার বন্ধু হামজা উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন। তবে আহসান এখানো পলাতক। মামলার শুরুর দিকে সন্দেহভাজন বাইজিদ ইসলাম সোহাগের নাম আসলেও উচ্চ তদবিরে তা চাপা পরে। পলাতক আহসান ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে বাইজিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, ঘটনার রাতে তিনি নিজের টর্চ লাইটি বন্ধু আহসানকে দিয়েছেন। তাছাড়া নিজে অসুস্থ থাকায় লতিফার লাশ দেখা বা জানাযায় তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িত নন।
এদিকে হত্যাকা-ের মূল সন্দেহভাজন সোহাগের বিষয়য়ে পুণরায় তদন্ত করতে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নাটোর পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন জানান, মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের সার্থে নতুন আসামীর ব্যপারে কিছু বলা যাচ্ছেনা। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা হবে।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই বৃষ্টি¯œাত রাতে লতিফাকে তার শয়ন ঘরের বাড়ান্দায় ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পাশের পুকুর থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় লতিফার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় অভিযুক্ত সোহাগের টর্চ লাইট এবং মমিনুলের ব্যবহৃত গামছা পাওয়া যায়।