মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়ন্ত্রনহীন বাজারে দিশাহারা সাধারণ মানুষ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:১৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২
  • ৪২ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক.

চরম অস্থিতিশীলতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম এখনো নাগালের বাহিরে। নিয়মিত তদারকির অভাবে আরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার। বেড়েই চলেছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ অধিকাংশ পণ্যের মুল্য। তুলনামূলকভাবে দাম বেশি হওয়ায় চাহিদামতো খাদ্যপণ্য কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারছেন না তারা। জীবনযাপনের অতিরিক্ত ব্যয়ের কারনে দিশেহারা নিম্ন্ন ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো।

গুরুদাসপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, পিয়াজসহ প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শীতের সবজির সরবারহ বেড়েছে। ফলে দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে রয়েছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কার ফলে এলাকার অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গিয়েছিল। সেই প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ অবস্থায় নতুন করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আরও বিপাকে পড়বেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

উপজেলার বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় বাজারে চাল বিক্রেতারা জানান, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। ভরা মৌসুমেও ক্রেতার নাগালে ছিল না চালের দাম। বরং দফায় দফায় আরও বেড়েই চলেছে। চলতি আমন মৌসুমে নতুন ধান উঠলেও দাম কমেনি। উল্টো বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। এর জন্য চালকল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কর্তপক্ষের নজরদারীর অভাবে সিন্ডিকেটকারীদের দৌরাত্ম্য থামছে না।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু চাল নয়, দাম বেড়েছে ডাল, আটা, ময়দা, চিনিরও। বর্তমানে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এছাড়া মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মুগের ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ থেকে ৮৫ টাক। এক মাস আগেও ৭০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া খোলা চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, যা মাসখানেক আগেও ছিল ৭৫ টাকা। এছাড়া বর্তমানে দুই কেজি আটার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অথচ এক মাস আগেও দুই কেজি আটার প্যাকেট ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ময়দার প্যাকেট ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

ওদিকে শীতকালে সবজির বাজার অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, গাজর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, প্রতিপিস ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৫০ টাকা, আদা ৮০ টাকা।

এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম চড়া। বর্তমানে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, লেয়ার ২২০ টাকা এবং কক ২৫০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসেনি। কারণ বাজারগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালে মুরগির উৎপাদন কিছুটা কম হয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এখন দাম একটু বেশি। মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে ডিমেরও। ফলে যারা মাংসের পরিবর্তে ডিম কিনতেন তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা যা সব সময়ই সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

Tag :

নিয়ন্ত্রনহীন বাজারে দিশাহারা সাধারণ মানুষ

Update Time : ০৯:১৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক.

চরম অস্থিতিশীলতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম এখনো নাগালের বাহিরে। নিয়মিত তদারকির অভাবে আরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার। বেড়েই চলেছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ অধিকাংশ পণ্যের মুল্য। তুলনামূলকভাবে দাম বেশি হওয়ায় চাহিদামতো খাদ্যপণ্য কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারছেন না তারা। জীবনযাপনের অতিরিক্ত ব্যয়ের কারনে দিশেহারা নিম্ন্ন ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো।

গুরুদাসপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, পিয়াজসহ প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শীতের সবজির সরবারহ বেড়েছে। ফলে দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে রয়েছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কার ফলে এলাকার অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গিয়েছিল। সেই প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ অবস্থায় নতুন করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আরও বিপাকে পড়বেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

উপজেলার বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় বাজারে চাল বিক্রেতারা জানান, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। ভরা মৌসুমেও ক্রেতার নাগালে ছিল না চালের দাম। বরং দফায় দফায় আরও বেড়েই চলেছে। চলতি আমন মৌসুমে নতুন ধান উঠলেও দাম কমেনি। উল্টো বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। এর জন্য চালকল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কর্তপক্ষের নজরদারীর অভাবে সিন্ডিকেটকারীদের দৌরাত্ম্য থামছে না।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু চাল নয়, দাম বেড়েছে ডাল, আটা, ময়দা, চিনিরও। বর্তমানে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এছাড়া মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মুগের ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ থেকে ৮৫ টাক। এক মাস আগেও ৭০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া খোলা চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, যা মাসখানেক আগেও ছিল ৭৫ টাকা। এছাড়া বর্তমানে দুই কেজি আটার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অথচ এক মাস আগেও দুই কেজি আটার প্যাকেট ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ময়দার প্যাকেট ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

ওদিকে শীতকালে সবজির বাজার অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, গাজর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, প্রতিপিস ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৫০ টাকা, আদা ৮০ টাকা।

এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম চড়া। বর্তমানে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, লেয়ার ২২০ টাকা এবং কক ২৫০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসেনি। কারণ বাজারগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালে মুরগির উৎপাদন কিছুটা কম হয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এখন দাম একটু বেশি। মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে ডিমেরও। ফলে যারা মাংসের পরিবর্তে ডিম কিনতেন তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা যা সব সময়ই সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।