গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
রোজা আর ঈদকে সামনে রেখে চলছে মুুড়ি তৈরীর জোর প্রস্তুতি। ব্যস্ততায় সময় কাটছে বাড়ির বউ,ঝি,মেয়েসহ প্রতটি সদস্যেরই। বাড়িতেই তৈরী করেছেন মুড়ি ভাজার জন্য আলাদা চালা ঘর। সেখানেই তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ধানের নানা ধরনের সুস্বাধু মুড়ি। আর এসব মুড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিনই দুরদুরান্ত থেকে খুচরা ও পাইকারী দরে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে।
সরেজমিনে দেখাযায় নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের খোয়ারপড়া, ধারাবারিষা ইউনিয়নের চরকাদাহ, খুবজীপুরের শ্রীপুর ও পিপলাসহ প্রায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িতে মুড়ি তৈরি করতে দেখা যায়। কোন রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই এখানে মুড়ি তৈরি হয় বলে দেশব্যাপি এ মুড়ির কদর রয়েছে। এই এলাকার মুড়ি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে পাশ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল বাজার মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে মুড়ির আড়ৎ। ওই আড়ৎ থেকে প্রায় প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ মণ মুড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।
ঢাকা থেকে আসা পাইকার আরিফুল ইসলাম জানান, রাসায়নিক সার ও কেমিকেলমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে শহরাঞ্চলে। তাই গুরুদাসপুরসহ আশেপাশের বেশ কিছু এলাকা থেকে বিভিন্ন জাতের ধান থেকে তৈরীকৃত প্রতি মণ মুড়ি গড়ে ২৫শ থেকে ২৯শ টাকায় ক্রয় করে খরচ বাদে কিছু টাকা হয় শহরে বিক্রি করে। এজন্য প্রতি বছর এই অঞ্চলে মুড়ি ক্রয় করতে আসি।
হাটি কুমরুল বাজার মুড়ি বিক্রয় সমিতির সভাপতি জানান, বছরে যে পরিমাণ মুড়ি উৎপাদন হয় রমজান মাস এলেই তার দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শুধু রমজান মাসই নয়, বছর জুড়েই এখানকার মুড়ি চাহিদা মেটায় ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। তবে এবার ধানের দাম বেশি হওয়ায় লাভ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা।
তিনি আরো জানান মুড়ি তৈরিতে নারীদের পাশাপাশি মুড়ি ভাজা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখানকার পুরুষরা। ভোর থেকে ভাজা শুরু হওয়া এসব মুড়ি সকাল হলে নিয়ে যাওয়া হয় আড়তে।
শ্রীপুর গ্রামের মুড়ি প্রস্তুত কারী সুফিয়া বেগম জানান, অনেক সময় দুর থেকে আসা পাইকারদের সমাগম ঘটে বাড়িতেও। নানা রকমের মুড়ি কেনাবেচা হয় বাড়ির ওপরেই। মুড়ির মান দেখে হয় দরদাম শেষে বিক্রয় হয়। তবে আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি। রোজার দিন বাড়ির ওপরেই বিক্রি হয় প্রায় ৫০হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকার মুড়ি।
চাঁচকৈড় খোয়ার পাড়া মহল্লার রিনা বেগম বলেন, এক মণ চালের মুড়ি ভাজলে ১০ থেকে ১২ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। অন্য সময় আমরা রাত ১টা থেকে মুড়ি ভাজার কাজ শুরু করি চলে পরদিন সকাল ৯ থেকে ১০টা পর্যন্ত। তবে রমজান মাসে প্রায় রাতদিনই ব্যাস্ত থাকতে হয় মুড়ি ভাজা ও প্রস্তুতের কাজে।
চাঁচকৈড় বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, রোজার পাশাপাশি আম, কাঁঠালের মৌসুমে মুড়ির চাহিদা বেশি থাকে।
তবে স্বল্প পুঁজির এই ব্যবসা করে উপজেলার অনেক মহিলারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কিছুটা উপকার পেলেও স্থানীয় ব্যাংক থেকে তারা কোন ঋণ পাননি বলে জানান। স্বল্প সুদে এসব মুড়ি উৎপাদনকারীদের ঋণ সহায়তা দিলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা। তাদের দাবি সরকার তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা বেশী করে মুড়ি উৎপাদন করতে পারবেন।