শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পহেলা বৈশাখ: আত্মপরিচয়ে একাত্ম হওয়ার দিন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
  • ৩৩ Time View

বিদ্যুৎ দে..

আমেরিকার ওয়াসিংটন ডিসির দূতাবাস পাড়ায় গেলে দেখা যায় বেশিরভাগ দেশের দূতাবাসের সামনে সেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা-র ভাস্কর্য। ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে চার্চিলের, দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের সামনে নেলসন ম্যান্ডেলার, তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কামাল আতাতুর্ক এর ভাস্কর্য। কিন্তু একটা দেশের দূতাবাসের সামনে হিন্দু দেবী শ্রী সরস্বতীর মূর্তি। এবং দেশটি ভারত নয়, নেপালও নয়।

সেটি এমন একটি দেশ যে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। কিন্তু সেদেশের সর্বত্র হিন্দু সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। দেশটির পূর্বপুরুষরা ভারতীয় সংস্কৃতি তথা হিন্দু সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক ছিলেন। কালক্রমে সেখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা বসতি গড়ে তোলেন এবং তাদের সমাজ বিস্তৃতি লাভ করে। এই মুহূর্তে সেদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব এশিয়ার এই দেশে প্রাচীন হিন্দু ধর্মের প্রভাব সর্বত্র দেখা যায়। এই দেশের মুদ্রার নাম রুপাইয়া। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই মুসলিম দেশের নোটে হিন্দুদের দেবতা গণেশ- এর ছবি দেখা যায়। মুসলিম দেশ হলেও হিন্দু ধর্মের অনেক দেবদেবীকেই এই দেশের বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। হিন্দু পুরাণে বর্ণিত পাখি গরুড়- এর নামেই এই দেশের সরকারি বিমান সংস্থা “গরুড় এয়ারলাইন্স”- এর নামকরণ করা হয়েছে। এই দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সরকারি ম্যাস্কট হলো ‘হনুমান’। প্রিমিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট – এর লোগো হলো গণেশ। রামায়ণ এবং মহাভারতের নানা ঘটনা নিয়ে রয়েছে অনেক ডাকটিকেট যাতে অর্জুন, কৃষ্ণ, হনুমান এবং মহাকাব্যের নানা দৃশ্য রয়েছে। লোকচিত্র, পাপেট, নাটক এবং ভাস্কর্য আকারে মহাভারত এবং রামায়ণের নানা ঘটনার চিত্রায়ন দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র পাওয়া যায়। রাম, কৃষ্ণ, অর্জুন, ঘটোৎকচসহ অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি ইন্দোনেশিয়ার হাটে, মাঠে, ঘাটে দেখা যায়। গোটা দেশ জুড়ে রয়েছে অজস্র হিন্দু মন্দির। বেশিরভাগ অফিস, দোকানের সামনে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হলেও এটি একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কোনও ধর্মই অন্য ধর্মের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। সব ধর্মের মানুষ তাদের উৎসব অনুষ্ঠান পালন করেন। একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশও নেন। আবার কিছু কিছু উৎসব বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ানরা বলে, ‘রাম আমাদের পূর্বপুরুষ এবং ইসলাম আমাদের বিশ্বাস’।

সারা বছর ধরে, সারা ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ওয়াং কুলিত নামক পাপেট শো এবং ওয়াং ওং নামক নাচের অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয় যা আসলে রামায়ণ এবং মহাভারত নানা ঘটনা থেকে নেওয়া। শিল্পটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছিল এবং উড়িষ্যার দুটি শিল্প ফর্ম- রাবণ ছায়া পাপেট থিয়েটার এবং ছৌ নৃত্য থেকে বিকশিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া যখন স্বাধীনতা লাভ করলো তখন তাদের জাতির পিতা সুকর্ণ যিনি নিজে মুসলিম হয়েও রামায়ণকে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির অংশ হিসাবে বিবেচনা করেন। একবার তিনি জওহরলাল নেহেরুকে বলেছিলেন, “আমার ধর্ম ইসলাম কিন্তু রামায়ন আমার সংস্কৃতি।“

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়ার নীতি হচ্ছে দেশটির সীমানার মধ্যে বসবাসকারী এবং বিদ্যমান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মানুষের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই নীতি বিশেষভাবে ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের পাঁচটি মূলনীতির মাধ্যমে করা হয়েছে, যাকে পঞ্চশীলা বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি, সুকর্ণ পঞ্চশীলার আদেশটি যখন বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে ইন্দোনেশিয়া এমন একটি জাতি হওয়া উচিত যা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে একত্রিত করে। এবিষয়টি সুকর্ণ গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন যে, “ইন্দোনেশিয়ার আধ্যাত্মিক জীবনকে এর সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত উপাদান থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।”

মূলত সুকর্ণ নামটিও মহাভারতের কর্ণ চরিত্র হতে নেওয়া। সুকর্ণের পিতা কর্ণের চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে কর্ণের কৌরবের পক্ষ নেওয়া মেনে নিতে পারেন নি। তাই কর্ণের আগে ‌’সু’ যোগ করে নাম রাখেন সুকর্ণ।

বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি ইন্দোনেশিয়া যে সম্মান দেখায় এবং এর অতীত ইতিহাস দেশটিকে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সহনশীলতার দুর্গে পরিণত করেছে।

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হলো একটি জাতির, একজন ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের শিকড়।

আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি বহমান নদীতে শ্যাওলার মতো। আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। দুনিয়াতে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিজের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য, ইতিহাস সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।

মাইকেল মধুসুধন দত্ত ইংরেজিতে যে কাব্য রচনা করেছিলেন তা তার সমসাময়িক অনেক ইংরেজ সাহিত্যিকের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট হলেও ইংরেজরা তা পাত্তা দেয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠা পেলেন নিজ মাতৃভাষা বাংলাতে কাব্য রচনা করে।

রামায়ন, মহাভারত আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। একে আপন করে নিতে হবে। তাতেই আমাদের গৌরব।

সংস্কৃতির মধ্যে যারা ধর্ম, বিজ্ঞানের মধ্যে যারা ধর্ম খুঁজতে বলে তারা আসলে চায় না- আমরা আমাদের আত্মপরিচয়ে বাঁচি। ওরা চায় আমরা যেনো শ্যাওলার মতো ভেসে যাই। বিশ্বদরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়। তারা ধর্মের আফিম খাইয়ে আমাদের পরিণতি পাকিস্তান বা আফগানের মতো করতে চায়। কিন্তু যে দেশের স্বাধীনতায় হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-নৃজাতি-উপজাতি সবার রক্ত এই পবিত্র মাতৃভূমিতে মিশে আছে সে দেশকে কি আমরা শেওলার মতো ভেসে যেতে দেবো??

পহেলা নববর্ষ, নবান্ন আমাদের নিজেদের সার্বজনীন উৎসব। তামিল নাড়ুতে নবান্ন উৎসব এখনো মহাধুমধাম করে পালিত হয়। পুরো তামিল জাতি সেদিন এক ও অভিন্ন সুরে উৎসব পালন করে।

আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক গৌরবকে বুকে নিয়ে, বিশ্বলোকে আমরা আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। ঐশ্বর্য্যে ভরে উঠুক বাংলার প্রতিটি ঘর।

Tag :

পহেলা বৈশাখ: আত্মপরিচয়ে একাত্ম হওয়ার দিন

Update Time : ০৯:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

বিদ্যুৎ দে..

আমেরিকার ওয়াসিংটন ডিসির দূতাবাস পাড়ায় গেলে দেখা যায় বেশিরভাগ দেশের দূতাবাসের সামনে সেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা-র ভাস্কর্য। ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে চার্চিলের, দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের সামনে নেলসন ম্যান্ডেলার, তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কামাল আতাতুর্ক এর ভাস্কর্য। কিন্তু একটা দেশের দূতাবাসের সামনে হিন্দু দেবী শ্রী সরস্বতীর মূর্তি। এবং দেশটি ভারত নয়, নেপালও নয়।

সেটি এমন একটি দেশ যে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। কিন্তু সেদেশের সর্বত্র হিন্দু সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। দেশটির পূর্বপুরুষরা ভারতীয় সংস্কৃতি তথা হিন্দু সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক ছিলেন। কালক্রমে সেখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা বসতি গড়ে তোলেন এবং তাদের সমাজ বিস্তৃতি লাভ করে। এই মুহূর্তে সেদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব এশিয়ার এই দেশে প্রাচীন হিন্দু ধর্মের প্রভাব সর্বত্র দেখা যায়। এই দেশের মুদ্রার নাম রুপাইয়া। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই মুসলিম দেশের নোটে হিন্দুদের দেবতা গণেশ- এর ছবি দেখা যায়। মুসলিম দেশ হলেও হিন্দু ধর্মের অনেক দেবদেবীকেই এই দেশের বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। হিন্দু পুরাণে বর্ণিত পাখি গরুড়- এর নামেই এই দেশের সরকারি বিমান সংস্থা “গরুড় এয়ারলাইন্স”- এর নামকরণ করা হয়েছে। এই দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সরকারি ম্যাস্কট হলো ‘হনুমান’। প্রিমিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট – এর লোগো হলো গণেশ। রামায়ণ এবং মহাভারতের নানা ঘটনা নিয়ে রয়েছে অনেক ডাকটিকেট যাতে অর্জুন, কৃষ্ণ, হনুমান এবং মহাকাব্যের নানা দৃশ্য রয়েছে। লোকচিত্র, পাপেট, নাটক এবং ভাস্কর্য আকারে মহাভারত এবং রামায়ণের নানা ঘটনার চিত্রায়ন দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র পাওয়া যায়। রাম, কৃষ্ণ, অর্জুন, ঘটোৎকচসহ অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি ইন্দোনেশিয়ার হাটে, মাঠে, ঘাটে দেখা যায়। গোটা দেশ জুড়ে রয়েছে অজস্র হিন্দু মন্দির। বেশিরভাগ অফিস, দোকানের সামনে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হলেও এটি একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কোনও ধর্মই অন্য ধর্মের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। সব ধর্মের মানুষ তাদের উৎসব অনুষ্ঠান পালন করেন। একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশও নেন। আবার কিছু কিছু উৎসব বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ানরা বলে, ‘রাম আমাদের পূর্বপুরুষ এবং ইসলাম আমাদের বিশ্বাস’।

সারা বছর ধরে, সারা ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ওয়াং কুলিত নামক পাপেট শো এবং ওয়াং ওং নামক নাচের অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয় যা আসলে রামায়ণ এবং মহাভারত নানা ঘটনা থেকে নেওয়া। শিল্পটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছিল এবং উড়িষ্যার দুটি শিল্প ফর্ম- রাবণ ছায়া পাপেট থিয়েটার এবং ছৌ নৃত্য থেকে বিকশিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া যখন স্বাধীনতা লাভ করলো তখন তাদের জাতির পিতা সুকর্ণ যিনি নিজে মুসলিম হয়েও রামায়ণকে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির অংশ হিসাবে বিবেচনা করেন। একবার তিনি জওহরলাল নেহেরুকে বলেছিলেন, “আমার ধর্ম ইসলাম কিন্তু রামায়ন আমার সংস্কৃতি।“

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়ার নীতি হচ্ছে দেশটির সীমানার মধ্যে বসবাসকারী এবং বিদ্যমান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মানুষের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই নীতি বিশেষভাবে ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের পাঁচটি মূলনীতির মাধ্যমে করা হয়েছে, যাকে পঞ্চশীলা বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি, সুকর্ণ পঞ্চশীলার আদেশটি যখন বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে ইন্দোনেশিয়া এমন একটি জাতি হওয়া উচিত যা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে একত্রিত করে। এবিষয়টি সুকর্ণ গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন যে, “ইন্দোনেশিয়ার আধ্যাত্মিক জীবনকে এর সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত উপাদান থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।”

মূলত সুকর্ণ নামটিও মহাভারতের কর্ণ চরিত্র হতে নেওয়া। সুকর্ণের পিতা কর্ণের চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে কর্ণের কৌরবের পক্ষ নেওয়া মেনে নিতে পারেন নি। তাই কর্ণের আগে ‌’সু’ যোগ করে নাম রাখেন সুকর্ণ।

বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি ইন্দোনেশিয়া যে সম্মান দেখায় এবং এর অতীত ইতিহাস দেশটিকে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সহনশীলতার দুর্গে পরিণত করেছে।

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হলো একটি জাতির, একজন ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের শিকড়।

আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি বহমান নদীতে শ্যাওলার মতো। আত্মপরিচয়হীন ব্যক্তি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। দুনিয়াতে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিজের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য, ইতিহাস সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।

মাইকেল মধুসুধন দত্ত ইংরেজিতে যে কাব্য রচনা করেছিলেন তা তার সমসাময়িক অনেক ইংরেজ সাহিত্যিকের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট হলেও ইংরেজরা তা পাত্তা দেয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠা পেলেন নিজ মাতৃভাষা বাংলাতে কাব্য রচনা করে।

রামায়ন, মহাভারত আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। একে আপন করে নিতে হবে। তাতেই আমাদের গৌরব।

সংস্কৃতির মধ্যে যারা ধর্ম, বিজ্ঞানের মধ্যে যারা ধর্ম খুঁজতে বলে তারা আসলে চায় না- আমরা আমাদের আত্মপরিচয়ে বাঁচি। ওরা চায় আমরা যেনো শ্যাওলার মতো ভেসে যাই। বিশ্বদরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়। তারা ধর্মের আফিম খাইয়ে আমাদের পরিণতি পাকিস্তান বা আফগানের মতো করতে চায়। কিন্তু যে দেশের স্বাধীনতায় হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-নৃজাতি-উপজাতি সবার রক্ত এই পবিত্র মাতৃভূমিতে মিশে আছে সে দেশকে কি আমরা শেওলার মতো ভেসে যেতে দেবো??

পহেলা নববর্ষ, নবান্ন আমাদের নিজেদের সার্বজনীন উৎসব। তামিল নাড়ুতে নবান্ন উৎসব এখনো মহাধুমধাম করে পালিত হয়। পুরো তামিল জাতি সেদিন এক ও অভিন্ন সুরে উৎসব পালন করে।

আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক গৌরবকে বুকে নিয়ে, বিশ্বলোকে আমরা আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। ঐশ্বর্য্যে ভরে উঠুক বাংলার প্রতিটি ঘর।