শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিরহের চিঠি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২
  • ৩৩৬ Time View

শারমীন বানু আনাম, আটলান্টা (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

ব্লক করেছিস? ভালো করেছিস।

কোনো সম্পর্ক তো ছিল না। সম্পর্কে আমার দাবি আর অধিকার ছিল না। আর তোর দায়িত্ব, কর্তব্যজ্ঞান ছিল না।

শুধু জানতে চেয়েছিলাম, কখনো ভালোবেসেছিলিস কি না?

শুধু জানতে চেয়েছিলাম আমার চোখের অশ্রুর কোনো সত্যিকারের সার্থকতা ছিল কি না। তুই আমার সত্যিকারের প্রেমিক ছিলি কি না। খেলেছিলিস কিনা?

একদিন, দুদিন নয়, বছরের পর বছর কেঁদেছি।

আমি কি প্রথম তোর কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম? মনে তো হয় না। কিন্তু যখন ভালোবেসে ফেলেছি, সেটা আমি প্রথম বলি বা তুই, ফারাক কোথায়? ভালো তো বেসেছিলি। খুব বোকা ছিলাম কিনা, তোর চালাকি আর জীবনের কাঠিন্য বুঝতে পারিনি।

আমার জীবনটা নষ্ট করায় তোর কখনো খারাপ লাগেনি? দায়িত্ববোধ ছিল? আমি অবশ্য উড়নচণ্ডী রাগটাই দেখেছিলাম। সঙ্গে আমাকে ছোট করার প্রবণতা। মরমে মরে যেতাম প্রতিটি ক্ষণ তোকে ভালোবাসার কষ্টে। সেটা যে কী কষ্ট।

আমি হয়তো কখনোই তোর জীবনে সে রকম গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না।

কখনোই দেখিনি আমার জন্য কোনো দায়িত্ব নিতে। আগলে রাখার ইচ্ছাটাও কখনো দেখিনি। না হলে কীভাবে প্রতিবার আমাকে একা ফেলে অন্যের হাত ধরে চলে যেতি? আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি।

কেউ আমার জীবনে থাকল না।

ভালো যে কখনোই বাসিসনি, বুঝতেই পারিনি। এতই বুদ্ধু ছিলাম বুঝি? শুধু কী একটা অবয়ব ছিলাম?

আমার যেমন কখনোই খারাপ লাগেনি, যখন কাউকে ভালোবাসিনি তার ভালোবাসা উপেক্ষা করতে। তেমনই কি তোর আমার প্রতি অনুভূতি ছিল?

ভালোবাসিসনি?

আমার ভালোবাসা আমাকে কী ভীষণ উপেক্ষা করেছে। অপমান করেছে। এই অনুভূতি যে কেমন হয়, আমার সে বুঝটা বোঝার জন্যই বুঝি তোকে দরকার ছিল।

প্রতিটি মুহূর্ত যেন চামড়ার নিচে নুন আর লংকাবাটা।

রক্তক্ষরণ দেখেছিলি?

খুব আনন্দ হতো তোর? পৈশাচিক।

আনন্দ? আমার কষ্ট লোকদেখানো বলে মনে হতো তোর? নাকি এ চেহারায় কষ্টটা ঠিকমতো ফুটে ওঠেনি কখনোই?

অন্যরা হয়তো প্রাণ দিয়েই ভালোবেসে ছিল। কী করব? আমি তো ভালোবাসতে পারিনি তাদের। কিন্তু তুই তো বলেছিলি ভালোবাসিস!

মিথ্যে বলেছিলি? ভুল করেছিলাম তোকে ভালোবেসে?

আমি চাইনি তোকে কষ্ট দিতে কখনোই। শুধু আমার কষ্টগুলো বেড়ে যাচ্ছিল তোর মিথ্যে কথায় আর অবহেলায়।

কাউকে আমি মন্দ বাসিনি, তাই কাউকে ভালো না বাসলেও জনসম্মুখে, ভরা বাজারে অপমান করিনি। শুধু আমি ভালোবাসি না বলে তাদের বদনাম বা অপমান কেন করব?

এ আমার শাস্তি ছিল হয়তো। এতজনের সমুদ্র পরিমাণ ভালোবাসা হেলায় ফেলে, এক ঘড়া জলের প্রেমে পড়েছিলাম। পড়েছিলাম তো!

কেন পড়েছিলাম?

চেষ্টা তো কম করিনি না পড়ার জন্য। ভবিতব্য ছিল? ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সত্যি ঠিক বলেছিল, কষ্ট পাবিরে সোনা! শুনিনি সে কথা। নিজের ভাগ্য নিজেই বদলাতে চেয়েছিলাম। তাই কী হয়?

আমি আসলেই ভবিতব্য জানতাম। জেনেছিলাম সেই যেদিন তোকে প্রথমবার পিছু ফিরে দেখেছিলাম। জানতাম সে প্রথম দিনই, কী কষ্ট অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি তা মানতে চাইনি।

কী প্রবলভাবেই না চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম আমার জানা মিথ্যে হোক, চেয়েছিলাম আমি ভবিতব্য পাল্টে নেব। শুধু তুই যদি পাশে থাকিস।

ছিলি নাতো!

হাজার কূটকাচালিতে তোকে আঁকড়ে ধরে কী ভীষণভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তুই আমাকে মরতে ফেলে গেলি। কী ধীরগতির সে মৃত্যু, প্রতিটি ক্ষণ চেয়েছিলাম একবারে মরে যেতে।

ভেবেছিলাম একটিবার নিজের দোষ স্বীকার করবি।

একটা বার বলবি, দুনিয়া উলট–পালট হলেও তুই আমার।

কী বোকার মতো ভরসাটা করেছিলাম!

আমাকে কী অকিঞ্চিৎভাবে অস্বীকার করতে, অবহেলা করতে পেরেছিলি?

নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলি?

আমরা দুজন কী জোকের মুখে নুন দিয়ে একসঙ্গে বাঁচতে পারতাম না?

আমাকেই কী বলি দেওয়ার ছিল তোর?

কেন শক্ত হাতে হাতটা ধরিসনি?

আমি কী শুধু ধুলোমাটিই আঁকড়ে ছিলাম?

বেঁচেছিলি?

হয়তো, ভীষণভাবেই বেঁচেছিলি। আমারই বোঝার ভুল!

যাকে ভালোবাসি, তাকে না দেখতে পাওয়ার, ছুতে না পারার, তার পাশে না বসতে পারার কী ভীষণ অক্ষমতা। কী ভীষণ অক্ষমতা। তোর কি কখনো সেই ফিলিংস হয়েছিল? আমার মতো করে? কত ইমোশনের জীবনের শিক্ষা দিয়েছিলি। আমিও তো সেই প্রথম এত ইমোশনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ছিলাম। সেই প্রথম কারও এতটা কাছে এসেছিলাম। ভুল যা আমার ছিল, কেন ভেঙে দিসনি? মরতেও তো পারতাম একসঙ্গে? নয়?

ভালো ছিলি?

কোনো দিন মনে হয়েছিল, আমার সঙ্গে অন্যায় করেছিলি?

আমার ভালো মন্দে তোর কোনো ফারাক পড়েনি বুঝি? কখনোই? দায়িত্ব? দায়িত্ব কি তোর কিছুই ছিল না? আমাকে আগলে রাখার? ভরসা দেওয়ার?

কেন আমার বিশ্বাস হলি না?

কেন আমার আশ্রয় হলি না? কেন বটবৃক্ষের ছায়া হলি না?

আমি তোর প্রথম প্রেম ছিলাম না। সে তো আমি ভালো করেই জানতাম। এরপরও এত ভালোবেসেছিলাম কীভাবে? মেনে নিয়েছিলাম তোর সব দোষগুণ! ভালোবাসা বুঝি এভাবেই সবাইকে অন্ধ করে?

চিনতে চেয়েছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম তোকে। আরও জানতে চেয়েছিলাম, আমি যাকে আঁকড়ে ধরছি, সে ঝড়ের দিনের আশ্রয় হবে? না হাত ছেড়ে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে যাবে?

হয়তো এটাই ঠিকক ছিল, প্রথম ঝড়েই তোর স্বরূপ চিনতে পেরেছিলাম। মে বি ইট ওয়াজ বেটার দ্যাট ওয়ে? হয়তো সেটিই আমাকে আসলে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

আমার ছোট্ট একটা স্বর্গ চাওয়া ছিল। নরক নয়! ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, তার বেশি কিছু নয়! সুখের নীড় বাঁধতে চেয়েছিলাম। হলো নাতো!

আমার পরেও অনেককে ভালোবেসেছিলিস! কী যায় আসে।

জানিস খুব চেয়েছিলাম কাঁদতে কাঁদতে যখন বাড়ি যাচ্ছিলাম, চেয়েছিলাম তুই আমার পথ আগলে বলবি, বোকা মেয়ে, আমি তো তোরই! কী ভীষণ বোকা আর কল্পনাবিলাসী ছিলাম। তাই কি হয়? তুই আসিসনি, ভালো তুই বাসিসনি।

আমার প্রতি যার এত অবজ্ঞা, অবহেলা তার পথ থেকে নিজেকে না সরিয়ে নিলে, মানবতার অপমান। কুকুর পুষলেও মায়া হয়, আর তুই আমার ঘরে শিকল তুলে ভেতরে পচে মরতে ফেলে গেলি। কী করে ভুলি? আমি পাগলের মতো মনের অলিতে গলিতে তোকে খুঁজেছি, নাহ তুই মরীচিকার মতো আমাকে শুধু দৌড়ে মেরেছিস।

সিনেমার গল্পে, অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করল। বাস্তবতা? সেতো সিনেমার স্ক্রিপ্টেড গল্প নয়।

ওই রাত, ওই চাঁদ তোমার আমার হয়নি!

সিনেমার কাহিনি থেকেও কী বিশ্রীভাবে আমরা অচেনা হয়ে গেছি।

কোনো দিনও দেখিনি আমার জন্য তোর কোনো অস্থিরতা।

কতবার মরতে চেয়েছি। মৃত্যুর এত কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন মনে হলো কেন? কেন আমি তোর জন্য কাঁদি, যেখানে তোর মনের কোনো ঘুপচি কোণেও আমার ঠাঁই নেই? তোর পাষাণ প্রাণ জানতে ও বুঝি অস্বীকার করেছে, আমি কেমন আছি! প্রতিদিন নিজের সঙ্গে হাসিমুখে যুদ্ধ করে আমি খুব ক্লান্ত।

খুব বুঝি সহজলভ্য ছিলাম তোর কাছে?

তোর প্রতিটি অপমান, অবহেলা, অনাদর, অসম্মান আমি মাথা পেতে নিয়েছিলাম!

ভালোবাসার দাম বুঝি এমন হয়? সে ভালোবাসাই তো পেলাম না!

জীবন্মৃত বুঝি একেই বলে? ভেবেছিলাম হয়তো এই আমার প্রাপ্য ছিল। আসলেও কি তাই? না, জানি সেটা আমার প্রাপ্য ছিল না। পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম।

পতঙ্গের মতো পুড়েছি। নিঃশব্দে।

আসলেই ভালোবেসেছিলিস, না খেলেছিলিস?

যুগযুগান্তর আমি হয়তো কাউকে কাউকে ভালোবাসতে না পারার শাস্তি বয়ে যাব, আমার নিজের ভালোবাসার মৃত্যুতে।

ভয়ানক রাগও হয়েছিল, কিন্তু আমার রাগ আর কষ্টের তুই যেন কেয়ার করতি। সত্যিটা না জেনে মিথ্যে নিয়েই পড়ে থাকলি? আমাকে অপমান করলি?

নাকি ইগো? তোর কি ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স হতো?

যে আমাকে পাওয়ার জন্য মানুষ পাগল ছিল, সে আমার অহংকারের চামড়া ছিলে তাতে লবণ–মরিচ লাগিয়ে উল্লাস করেছিলি? আমি তো তোকে সবার হাত থেকে বাঁচাতেই চেয়েছিলাম। এত কষ্ট বুঝি আমার ভালোবাসার উপহার? এই কষ্ট? চাই না এমন ভালোবাসা।

অপবাদ যে দিয়েছিলি-ভালোবেসে দিয়েছিলি কি?

না, বাসিসনি!

ভালোবাসার গলা টিপে মারতে চেয়েছিলি? না আমাকেই মারতে চেয়েছিলি?

কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, আমি আজ আমার কষ্টগুলোকে আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দিই। শুধু যে দিনগুলোতে আজও নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভয়ানক কষ্ট, হতাশা, হাহাকার, অপমান, অসম্মান। তার সঙ্গে আরও অনেক, অনেক নেগেটিভ ইমোশনের মিশেল আমাকে পাগল করে দেয়। তখন তোকে হারানোর কষ্ট হয়তো আর নয়, নিজেকে হারানোর কষ্ট হয়। নিঃশব্দের হাহাকার শুনেছিস কখনো? আমার চোখের জল আর আর্তনাদ তো তোর কলিজায় তো কখনোই লাগেনি। জানিস আমি এখন ওমরাহ জানের কষ্ট উপলব্ধি করি।

আজ আমার ভালোবাসার মৃত্যু উদ্‌যাপন করি!

নিজের কষ্ট উদ্‌যাপন করি!

ভালোই তো আছি!

কী ছেলেমানুষি জেদ আমার! আমি যার জন্য কাঁদি, তারও আমার জন্য কাঁদতে হবে।

তাই কি হয়? তাহলে তো আর প্রেমে প্রতারণার গল্পের সৃষ্টিই হতো না!

তুই কি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছিলি?

আমার বোকামির শাস্তি? ভুল বুঝেছিলি আমাকে? ভুলটা ভাঙার চেষ্টা করেছিলি? সত্যিটা জানার চেষ্টা বা আগ্রহ ছিল তোর?

কোনো দিনও নিশ্চুপ বুকফাটা আর্তনাদ আর হাহাকারের নীরব কষ্টের চিত্কার শুনতে পেয়েছিলি? পাসনি। আমিও জানতাম না সেটা কেমন, যত দিন না নিজের দীর্ঘশ্বাস নিজে শুনেছি।

বোকামি আমার, পুড়ব আমি; মেনে নিয়েছি।

সুনন্দাকে কি আমার চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছিলি? ও অবশ্য আমার মতো ননির পুতুল ছিল না, চুপচাপ সব মেনে নেওয়ার মানুষও ছিল না!

আমার না রাগ নেই, তুই ভালোবাসতে পারলে, ও কেন পারবে না? আমার চেয়েও নিশ্চয়ই বেশিই ভালোবেসেছিলিস। আর তোকে কেউ ভালোবাসছে তাতেই আমার ভালো লাগত। তুই ভালো আছিস জেনেই ভালো লাগত।

তবুও জানতে ইচ্ছে হয়, সত্যিই ভালোবেসেছিলিস কখনো আমাকে?

কষ্ট পেয়েছিলিস কখনো আমার কথা ভেবে?

আমি জানি তুই খুব স্ট্রং। আমি আজও ছটফটে, অল্পেই কষ্ট পাওয়া, অল্পেই তুষ্ট মানুষটি আছি।

কী লাভ বল? মরতে মরতে বেঁচে থাকা মানুষের বেশি আশা করতে নেই। আমি আমার ছেলেমানুষি আর বোকামি নিয়েই কারও কারও আদরেই থাকি না হয়, অনাদর তো অনেক হলো!

আমাকে অনেকে বলে, তোমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি উত্তর না দিয়ে, হাসিমুখে অশ্রু লুকোই। আমার প্রিয় মানুষগুলোই তো করেছে। কাউকে তো দেখি না দুঃখিত হতে!

প্রিয় মানুষকে অস্বীকার করা যায় বুঝি? হোক না সে যতই আমার কষ্টের কারণ।

তোরও কি মন খারাপের দিনে মনে পড়ে আমাকে? অপরাধবোধ হয় কখনো?

কখনো প্রিয় ছিলাম তোর? খুব জানতে ইচ্ছা হয়, সত্যিটা!

আমি প্রাণপণে আমার মনের রক্তক্ষরণ সামলাই।

তোরও কি হয়? রক্তক্ষরণ?

তোদের ফ্যান্সি লাইফে আমি বড় বেমানান। আমি সুন্দর করে মিথ্যে বলে সবার কাছে ভালো সাজতে পারি না! ব্লক হয়তো তোকেও আমি করেছিলাম, পরে মনে হলো, তোর আত্মপক্ষসমর্থনের রাইট আছে, আমাকে পুরো ইগনোর করারও রাইট আছে, ভালোবাসা বা ঘৃণা বা তার মাঝামাঝি বা কনফিউসড হওয়ারও রাইট আছে। আমি তো শুধু আমার কথাই বলতে পারি।

তোরটা জানার ইচ্ছা যে হয় না তা নয়। হয়তো এ জীবনে জানা হবে না।

হয়তো না জানাটাই ভালো। আমি, আমরা ইচ্ছা হলেই সব ভুলে কোনো দিনও আর বন্ধু হব না। শত্রুও যেন না হই। আমার শত্রুরও যেন এত কষ্ট না পেতে হয়। থাকুক না হয় কিছু মানুষের কাছে কষ্টের পাহাড় অচেনা হয়ে।

তুই তোর জীবনে ভালো থাক। আমিও আমার। শুধু মন খারাপের ক্ষণে তোকে আজও আঁচড়ে রক্তাক্ত করতে ইচ্ছে হয়।

জানতে ভীষণ ইচ্ছা হয়, এতটা পাষাণ কীভাবে হয়েছিলি?

ভালোবেসেছিলিস?

নিস্তব্ধতার কান্না শুনেছিস কখনো?

বিরহপীড়িত আত্মার কান্নার শব্দ শুনেছিস কখনো? কেউ সে সুর বাজাতে পারে কি? তুইও কি কেঁদেছিলি?

ধুর, আমি তোকে আমার কষ্টের কথা বলতে চাচ্ছি, অথচ মনে হচ্ছে—সাহিত্য লিখছি! সে জন্যই কেউ আমার কষ্ট বুঝতে পারল না হয়তো! হাসিমুখের আড়ালে চোখের জলটা পড়তে পারল না। তুইও পারবি না।

দেখ কী বলছি। কী বাচ্চা ছিলাম আমরা।

তোর আমার প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমি, খুনসুটি আমাদের সম্পর্ককে বিবর্ণ করলেও কথা ছিল। সেতো হয়নি। মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা অচেনা হয়েছি। কেন আমাকে নিয়ে খেলেছিলি? কেন?

সোজাসুজি আমাকে ভালোবাসিস না বললেই তোকে ছেড়ে আসতাম, আটকাতাম না। ভালোবাসার অভিনয় মানতে কষ্ট হয়েছে।

সত্তার অপমানে কষ্ট হয়েছে।

আমি আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেটা বুঝতে, তার থেকে বেরোতেও এতগুলো বছর গেল। কি ভীষণ বোকা আমি। আমার নষ্ট হওয়া সময়গুলো ফেরত দিতে পারবি?

না, না কিছু আজ আর চাই না। নিজেকে সামলে নিয়েছি। নিজের মতো করে বাঁচাতে শিখেছি। সেখানে তোর কোনো স্থান আর নেই। মনের কোনো গহিন কোণেও তোর জায়গা নেই। শুধু উদাসী দিনে, মন খারাপের ক্ষণে প্রশ্ন জাগে মনে, কেন খেলেছিলি আমার এ ভাঙা মন নিয়ে? খেলার জন্য আমার মনটাই পেয়েছিলি? জিতেছিলি আমাকে হারিয়ে?

জিতেছিলি অপবাদ আর অপমান করে? ভালো ছিলি?

শারমীন বানু আনাম, আটলান্টা (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

Tag :

বিরহের চিঠি

Update Time : ১১:০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২

শারমীন বানু আনাম, আটলান্টা (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

ব্লক করেছিস? ভালো করেছিস।

কোনো সম্পর্ক তো ছিল না। সম্পর্কে আমার দাবি আর অধিকার ছিল না। আর তোর দায়িত্ব, কর্তব্যজ্ঞান ছিল না।

শুধু জানতে চেয়েছিলাম, কখনো ভালোবেসেছিলিস কি না?

শুধু জানতে চেয়েছিলাম আমার চোখের অশ্রুর কোনো সত্যিকারের সার্থকতা ছিল কি না। তুই আমার সত্যিকারের প্রেমিক ছিলি কি না। খেলেছিলিস কিনা?

একদিন, দুদিন নয়, বছরের পর বছর কেঁদেছি।

আমি কি প্রথম তোর কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম? মনে তো হয় না। কিন্তু যখন ভালোবেসে ফেলেছি, সেটা আমি প্রথম বলি বা তুই, ফারাক কোথায়? ভালো তো বেসেছিলি। খুব বোকা ছিলাম কিনা, তোর চালাকি আর জীবনের কাঠিন্য বুঝতে পারিনি।

আমার জীবনটা নষ্ট করায় তোর কখনো খারাপ লাগেনি? দায়িত্ববোধ ছিল? আমি অবশ্য উড়নচণ্ডী রাগটাই দেখেছিলাম। সঙ্গে আমাকে ছোট করার প্রবণতা। মরমে মরে যেতাম প্রতিটি ক্ষণ তোকে ভালোবাসার কষ্টে। সেটা যে কী কষ্ট।

আমি হয়তো কখনোই তোর জীবনে সে রকম গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না।

কখনোই দেখিনি আমার জন্য কোনো দায়িত্ব নিতে। আগলে রাখার ইচ্ছাটাও কখনো দেখিনি। না হলে কীভাবে প্রতিবার আমাকে একা ফেলে অন্যের হাত ধরে চলে যেতি? আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি।

কেউ আমার জীবনে থাকল না।

ভালো যে কখনোই বাসিসনি, বুঝতেই পারিনি। এতই বুদ্ধু ছিলাম বুঝি? শুধু কী একটা অবয়ব ছিলাম?

আমার যেমন কখনোই খারাপ লাগেনি, যখন কাউকে ভালোবাসিনি তার ভালোবাসা উপেক্ষা করতে। তেমনই কি তোর আমার প্রতি অনুভূতি ছিল?

ভালোবাসিসনি?

আমার ভালোবাসা আমাকে কী ভীষণ উপেক্ষা করেছে। অপমান করেছে। এই অনুভূতি যে কেমন হয়, আমার সে বুঝটা বোঝার জন্যই বুঝি তোকে দরকার ছিল।

প্রতিটি মুহূর্ত যেন চামড়ার নিচে নুন আর লংকাবাটা।

রক্তক্ষরণ দেখেছিলি?

খুব আনন্দ হতো তোর? পৈশাচিক।

আনন্দ? আমার কষ্ট লোকদেখানো বলে মনে হতো তোর? নাকি এ চেহারায় কষ্টটা ঠিকমতো ফুটে ওঠেনি কখনোই?

অন্যরা হয়তো প্রাণ দিয়েই ভালোবেসে ছিল। কী করব? আমি তো ভালোবাসতে পারিনি তাদের। কিন্তু তুই তো বলেছিলি ভালোবাসিস!

মিথ্যে বলেছিলি? ভুল করেছিলাম তোকে ভালোবেসে?

আমি চাইনি তোকে কষ্ট দিতে কখনোই। শুধু আমার কষ্টগুলো বেড়ে যাচ্ছিল তোর মিথ্যে কথায় আর অবহেলায়।

কাউকে আমি মন্দ বাসিনি, তাই কাউকে ভালো না বাসলেও জনসম্মুখে, ভরা বাজারে অপমান করিনি। শুধু আমি ভালোবাসি না বলে তাদের বদনাম বা অপমান কেন করব?

এ আমার শাস্তি ছিল হয়তো। এতজনের সমুদ্র পরিমাণ ভালোবাসা হেলায় ফেলে, এক ঘড়া জলের প্রেমে পড়েছিলাম। পড়েছিলাম তো!

কেন পড়েছিলাম?

চেষ্টা তো কম করিনি না পড়ার জন্য। ভবিতব্য ছিল? ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সত্যি ঠিক বলেছিল, কষ্ট পাবিরে সোনা! শুনিনি সে কথা। নিজের ভাগ্য নিজেই বদলাতে চেয়েছিলাম। তাই কী হয়?

আমি আসলেই ভবিতব্য জানতাম। জেনেছিলাম সেই যেদিন তোকে প্রথমবার পিছু ফিরে দেখেছিলাম। জানতাম সে প্রথম দিনই, কী কষ্ট অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি তা মানতে চাইনি।

কী প্রবলভাবেই না চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম আমার জানা মিথ্যে হোক, চেয়েছিলাম আমি ভবিতব্য পাল্টে নেব। শুধু তুই যদি পাশে থাকিস।

ছিলি নাতো!

হাজার কূটকাচালিতে তোকে আঁকড়ে ধরে কী ভীষণভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তুই আমাকে মরতে ফেলে গেলি। কী ধীরগতির সে মৃত্যু, প্রতিটি ক্ষণ চেয়েছিলাম একবারে মরে যেতে।

ভেবেছিলাম একটিবার নিজের দোষ স্বীকার করবি।

একটা বার বলবি, দুনিয়া উলট–পালট হলেও তুই আমার।

কী বোকার মতো ভরসাটা করেছিলাম!

আমাকে কী অকিঞ্চিৎভাবে অস্বীকার করতে, অবহেলা করতে পেরেছিলি?

নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলি?

আমরা দুজন কী জোকের মুখে নুন দিয়ে একসঙ্গে বাঁচতে পারতাম না?

আমাকেই কী বলি দেওয়ার ছিল তোর?

কেন শক্ত হাতে হাতটা ধরিসনি?

আমি কী শুধু ধুলোমাটিই আঁকড়ে ছিলাম?

বেঁচেছিলি?

হয়তো, ভীষণভাবেই বেঁচেছিলি। আমারই বোঝার ভুল!

যাকে ভালোবাসি, তাকে না দেখতে পাওয়ার, ছুতে না পারার, তার পাশে না বসতে পারার কী ভীষণ অক্ষমতা। কী ভীষণ অক্ষমতা। তোর কি কখনো সেই ফিলিংস হয়েছিল? আমার মতো করে? কত ইমোশনের জীবনের শিক্ষা দিয়েছিলি। আমিও তো সেই প্রথম এত ইমোশনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ছিলাম। সেই প্রথম কারও এতটা কাছে এসেছিলাম। ভুল যা আমার ছিল, কেন ভেঙে দিসনি? মরতেও তো পারতাম একসঙ্গে? নয়?

ভালো ছিলি?

কোনো দিন মনে হয়েছিল, আমার সঙ্গে অন্যায় করেছিলি?

আমার ভালো মন্দে তোর কোনো ফারাক পড়েনি বুঝি? কখনোই? দায়িত্ব? দায়িত্ব কি তোর কিছুই ছিল না? আমাকে আগলে রাখার? ভরসা দেওয়ার?

কেন আমার বিশ্বাস হলি না?

কেন আমার আশ্রয় হলি না? কেন বটবৃক্ষের ছায়া হলি না?

আমি তোর প্রথম প্রেম ছিলাম না। সে তো আমি ভালো করেই জানতাম। এরপরও এত ভালোবেসেছিলাম কীভাবে? মেনে নিয়েছিলাম তোর সব দোষগুণ! ভালোবাসা বুঝি এভাবেই সবাইকে অন্ধ করে?

চিনতে চেয়েছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম তোকে। আরও জানতে চেয়েছিলাম, আমি যাকে আঁকড়ে ধরছি, সে ঝড়ের দিনের আশ্রয় হবে? না হাত ছেড়ে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে যাবে?

হয়তো এটাই ঠিকক ছিল, প্রথম ঝড়েই তোর স্বরূপ চিনতে পেরেছিলাম। মে বি ইট ওয়াজ বেটার দ্যাট ওয়ে? হয়তো সেটিই আমাকে আসলে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

আমার ছোট্ট একটা স্বর্গ চাওয়া ছিল। নরক নয়! ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, তার বেশি কিছু নয়! সুখের নীড় বাঁধতে চেয়েছিলাম। হলো নাতো!

আমার পরেও অনেককে ভালোবেসেছিলিস! কী যায় আসে।

জানিস খুব চেয়েছিলাম কাঁদতে কাঁদতে যখন বাড়ি যাচ্ছিলাম, চেয়েছিলাম তুই আমার পথ আগলে বলবি, বোকা মেয়ে, আমি তো তোরই! কী ভীষণ বোকা আর কল্পনাবিলাসী ছিলাম। তাই কি হয়? তুই আসিসনি, ভালো তুই বাসিসনি।

আমার প্রতি যার এত অবজ্ঞা, অবহেলা তার পথ থেকে নিজেকে না সরিয়ে নিলে, মানবতার অপমান। কুকুর পুষলেও মায়া হয়, আর তুই আমার ঘরে শিকল তুলে ভেতরে পচে মরতে ফেলে গেলি। কী করে ভুলি? আমি পাগলের মতো মনের অলিতে গলিতে তোকে খুঁজেছি, নাহ তুই মরীচিকার মতো আমাকে শুধু দৌড়ে মেরেছিস।

সিনেমার গল্পে, অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করল। বাস্তবতা? সেতো সিনেমার স্ক্রিপ্টেড গল্প নয়।

ওই রাত, ওই চাঁদ তোমার আমার হয়নি!

সিনেমার কাহিনি থেকেও কী বিশ্রীভাবে আমরা অচেনা হয়ে গেছি।

কোনো দিনও দেখিনি আমার জন্য তোর কোনো অস্থিরতা।

কতবার মরতে চেয়েছি। মৃত্যুর এত কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন মনে হলো কেন? কেন আমি তোর জন্য কাঁদি, যেখানে তোর মনের কোনো ঘুপচি কোণেও আমার ঠাঁই নেই? তোর পাষাণ প্রাণ জানতে ও বুঝি অস্বীকার করেছে, আমি কেমন আছি! প্রতিদিন নিজের সঙ্গে হাসিমুখে যুদ্ধ করে আমি খুব ক্লান্ত।

খুব বুঝি সহজলভ্য ছিলাম তোর কাছে?

তোর প্রতিটি অপমান, অবহেলা, অনাদর, অসম্মান আমি মাথা পেতে নিয়েছিলাম!

ভালোবাসার দাম বুঝি এমন হয়? সে ভালোবাসাই তো পেলাম না!

জীবন্মৃত বুঝি একেই বলে? ভেবেছিলাম হয়তো এই আমার প্রাপ্য ছিল। আসলেও কি তাই? না, জানি সেটা আমার প্রাপ্য ছিল না। পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম।

পতঙ্গের মতো পুড়েছি। নিঃশব্দে।

আসলেই ভালোবেসেছিলিস, না খেলেছিলিস?

যুগযুগান্তর আমি হয়তো কাউকে কাউকে ভালোবাসতে না পারার শাস্তি বয়ে যাব, আমার নিজের ভালোবাসার মৃত্যুতে।

ভয়ানক রাগও হয়েছিল, কিন্তু আমার রাগ আর কষ্টের তুই যেন কেয়ার করতি। সত্যিটা না জেনে মিথ্যে নিয়েই পড়ে থাকলি? আমাকে অপমান করলি?

নাকি ইগো? তোর কি ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স হতো?

যে আমাকে পাওয়ার জন্য মানুষ পাগল ছিল, সে আমার অহংকারের চামড়া ছিলে তাতে লবণ–মরিচ লাগিয়ে উল্লাস করেছিলি? আমি তো তোকে সবার হাত থেকে বাঁচাতেই চেয়েছিলাম। এত কষ্ট বুঝি আমার ভালোবাসার উপহার? এই কষ্ট? চাই না এমন ভালোবাসা।

অপবাদ যে দিয়েছিলি-ভালোবেসে দিয়েছিলি কি?

না, বাসিসনি!

ভালোবাসার গলা টিপে মারতে চেয়েছিলি? না আমাকেই মারতে চেয়েছিলি?

কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, আমি আজ আমার কষ্টগুলোকে আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দিই। শুধু যে দিনগুলোতে আজও নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভয়ানক কষ্ট, হতাশা, হাহাকার, অপমান, অসম্মান। তার সঙ্গে আরও অনেক, অনেক নেগেটিভ ইমোশনের মিশেল আমাকে পাগল করে দেয়। তখন তোকে হারানোর কষ্ট হয়তো আর নয়, নিজেকে হারানোর কষ্ট হয়। নিঃশব্দের হাহাকার শুনেছিস কখনো? আমার চোখের জল আর আর্তনাদ তো তোর কলিজায় তো কখনোই লাগেনি। জানিস আমি এখন ওমরাহ জানের কষ্ট উপলব্ধি করি।

আজ আমার ভালোবাসার মৃত্যু উদ্‌যাপন করি!

নিজের কষ্ট উদ্‌যাপন করি!

ভালোই তো আছি!

কী ছেলেমানুষি জেদ আমার! আমি যার জন্য কাঁদি, তারও আমার জন্য কাঁদতে হবে।

তাই কি হয়? তাহলে তো আর প্রেমে প্রতারণার গল্পের সৃষ্টিই হতো না!

তুই কি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছিলি?

আমার বোকামির শাস্তি? ভুল বুঝেছিলি আমাকে? ভুলটা ভাঙার চেষ্টা করেছিলি? সত্যিটা জানার চেষ্টা বা আগ্রহ ছিল তোর?

কোনো দিনও নিশ্চুপ বুকফাটা আর্তনাদ আর হাহাকারের নীরব কষ্টের চিত্কার শুনতে পেয়েছিলি? পাসনি। আমিও জানতাম না সেটা কেমন, যত দিন না নিজের দীর্ঘশ্বাস নিজে শুনেছি।

বোকামি আমার, পুড়ব আমি; মেনে নিয়েছি।

সুনন্দাকে কি আমার চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছিলি? ও অবশ্য আমার মতো ননির পুতুল ছিল না, চুপচাপ সব মেনে নেওয়ার মানুষও ছিল না!

আমার না রাগ নেই, তুই ভালোবাসতে পারলে, ও কেন পারবে না? আমার চেয়েও নিশ্চয়ই বেশিই ভালোবেসেছিলিস। আর তোকে কেউ ভালোবাসছে তাতেই আমার ভালো লাগত। তুই ভালো আছিস জেনেই ভালো লাগত।

তবুও জানতে ইচ্ছে হয়, সত্যিই ভালোবেসেছিলিস কখনো আমাকে?

কষ্ট পেয়েছিলিস কখনো আমার কথা ভেবে?

আমি জানি তুই খুব স্ট্রং। আমি আজও ছটফটে, অল্পেই কষ্ট পাওয়া, অল্পেই তুষ্ট মানুষটি আছি।

কী লাভ বল? মরতে মরতে বেঁচে থাকা মানুষের বেশি আশা করতে নেই। আমি আমার ছেলেমানুষি আর বোকামি নিয়েই কারও কারও আদরেই থাকি না হয়, অনাদর তো অনেক হলো!

আমাকে অনেকে বলে, তোমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি উত্তর না দিয়ে, হাসিমুখে অশ্রু লুকোই। আমার প্রিয় মানুষগুলোই তো করেছে। কাউকে তো দেখি না দুঃখিত হতে!

প্রিয় মানুষকে অস্বীকার করা যায় বুঝি? হোক না সে যতই আমার কষ্টের কারণ।

তোরও কি মন খারাপের দিনে মনে পড়ে আমাকে? অপরাধবোধ হয় কখনো?

কখনো প্রিয় ছিলাম তোর? খুব জানতে ইচ্ছা হয়, সত্যিটা!

আমি প্রাণপণে আমার মনের রক্তক্ষরণ সামলাই।

তোরও কি হয়? রক্তক্ষরণ?

তোদের ফ্যান্সি লাইফে আমি বড় বেমানান। আমি সুন্দর করে মিথ্যে বলে সবার কাছে ভালো সাজতে পারি না! ব্লক হয়তো তোকেও আমি করেছিলাম, পরে মনে হলো, তোর আত্মপক্ষসমর্থনের রাইট আছে, আমাকে পুরো ইগনোর করারও রাইট আছে, ভালোবাসা বা ঘৃণা বা তার মাঝামাঝি বা কনফিউসড হওয়ারও রাইট আছে। আমি তো শুধু আমার কথাই বলতে পারি।

তোরটা জানার ইচ্ছা যে হয় না তা নয়। হয়তো এ জীবনে জানা হবে না।

হয়তো না জানাটাই ভালো। আমি, আমরা ইচ্ছা হলেই সব ভুলে কোনো দিনও আর বন্ধু হব না। শত্রুও যেন না হই। আমার শত্রুরও যেন এত কষ্ট না পেতে হয়। থাকুক না হয় কিছু মানুষের কাছে কষ্টের পাহাড় অচেনা হয়ে।

তুই তোর জীবনে ভালো থাক। আমিও আমার। শুধু মন খারাপের ক্ষণে তোকে আজও আঁচড়ে রক্তাক্ত করতে ইচ্ছে হয়।

জানতে ভীষণ ইচ্ছা হয়, এতটা পাষাণ কীভাবে হয়েছিলি?

ভালোবেসেছিলিস?

নিস্তব্ধতার কান্না শুনেছিস কখনো?

বিরহপীড়িত আত্মার কান্নার শব্দ শুনেছিস কখনো? কেউ সে সুর বাজাতে পারে কি? তুইও কি কেঁদেছিলি?

ধুর, আমি তোকে আমার কষ্টের কথা বলতে চাচ্ছি, অথচ মনে হচ্ছে—সাহিত্য লিখছি! সে জন্যই কেউ আমার কষ্ট বুঝতে পারল না হয়তো! হাসিমুখের আড়ালে চোখের জলটা পড়তে পারল না। তুইও পারবি না।

দেখ কী বলছি। কী বাচ্চা ছিলাম আমরা।

তোর আমার প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমি, খুনসুটি আমাদের সম্পর্ককে বিবর্ণ করলেও কথা ছিল। সেতো হয়নি। মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা অচেনা হয়েছি। কেন আমাকে নিয়ে খেলেছিলি? কেন?

সোজাসুজি আমাকে ভালোবাসিস না বললেই তোকে ছেড়ে আসতাম, আটকাতাম না। ভালোবাসার অভিনয় মানতে কষ্ট হয়েছে।

সত্তার অপমানে কষ্ট হয়েছে।

আমি আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেটা বুঝতে, তার থেকে বেরোতেও এতগুলো বছর গেল। কি ভীষণ বোকা আমি। আমার নষ্ট হওয়া সময়গুলো ফেরত দিতে পারবি?

না, না কিছু আজ আর চাই না। নিজেকে সামলে নিয়েছি। নিজের মতো করে বাঁচাতে শিখেছি। সেখানে তোর কোনো স্থান আর নেই। মনের কোনো গহিন কোণেও তোর জায়গা নেই। শুধু উদাসী দিনে, মন খারাপের ক্ষণে প্রশ্ন জাগে মনে, কেন খেলেছিলি আমার এ ভাঙা মন নিয়ে? খেলার জন্য আমার মনটাই পেয়েছিলি? জিতেছিলি আমাকে হারিয়ে?

জিতেছিলি অপবাদ আর অপমান করে? ভালো ছিলি?

শারমীন বানু আনাম, আটলান্টা (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে