মোঃ মাজেম আলী মলিন. চলনবিলের লাল টসটসে রসালো লিচু। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য গ্রীষ্ম কালিন এই ফলের পশরা। দুরদুরান্ত থেকে ফরিয়ারা আসছে সেগুলো ক্রয় করতে। যাবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে। এনিয়ে বাগান মালিকদের একদিকে স্বপ্ন পুরনের আশা অন্য দিকে বৈরী আবহাওয়ায় ন্যায্য মুল্য নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলে লোকসানও গুনতে হতে পারে তাদের।
সরেজমিনে চলনবিঞ্চলের বিভিন্ন বাগান ও আড়তে গিয়ে দেখাযায়- সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লিচু ভাঙ্গার কাজে ব্যাস্ত শ্রমিকসহ পরিবারের ছোট বড় সকলকে। সেগুলো সময় মতো নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় আড়তে। বাগান মালিকদের রসালো ফল লিচুতে জমে উঠেছে বাজারসহ আড়তগুলো। মৌসুমী ফল লিচুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব আড়ৎ। চলনবিলের বেলে-দোআঁশ মাটিতে লিচু আবাদে সম্ভাবনায় লিচু ফলের আবাদ ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। চলনবিলাঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় লিচুর আবাদ হচ্ছে। কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, চলতি বছরে চলনবিলাঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু গুরুদাসপুর উপজেলাতেই ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয় উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে চলনবিলের উৎপাদিত এই রসালো এসব লিচু এখন ফরিয়া ও মহাজনদের হাত বদলে চলে যাচ্ছে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর, ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে।
ভোর থেকে রাত অবধি চলছে চলনবিলের বিভিন্ন লিচুর আড়তে বেচো-কেনা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লিচু ক্রেতা, মহাজন, পাইকার ও ফড়িয়াদের কেনাকাটায় মুখরিত এখন আড়ৎগুলো। এ ছাড়া জমি থেকে পাইকারী ও ক্ষুদ্র মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন নগদ টাকায়। কেউবা আবার অগ্রিম টাকাতেও কিনে রেখেছেন বাগান। গুরুদাসপুরে বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বটতলায় বসে নাটোরের সবচেয়ে বড় লিচুর মোকাম। ওইখানে ২০ থেকে ২৫টি ফল বিক্রির আড়ৎ রয়েছে। এছাড়াও মোল্লা বাজার, বিয়াঘাট সুজার মোড়,মশিন্দা, তাড়াশের ধামাইচ হাট, সিংড়ার বাহাদুরপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে পুরোদমে খুচরা ও পাইকারি লিচু বেচাকেনা। এছাড়া ফরিয়া ও মহাজনরা বিভিন্ন গ্রামের বাগানগুলোতেও গিয়ে লিচু ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বাজার আড়ত সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাক বোঝাই ঝুড়িভর্তি লিচু চলে যাচ্ছে চলনবিল ছেড়ে শহরে। প্রতি ছোট ঝুড়িতে ১হাজার.মাঝারীতে ২ ও বড়গুলোতে ৩হাজার লিচু থাকে। প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৬শ টাকায়। এবছর ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। বেচাকেনা সর্বচ ১৫ দিন চলতে পারে। ব্যাপারিরা ঠিক মতো খাজনা না দেওয়ায় তিনি ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, মুলত লিচুর আবাদ গুরুদাসপুরেই বেশি হয়। গুরুদাসপুরের দেখাদেখি এখন চলনবিলাঞ্চল জুড়েই কৃষকদের মাঝে লিচু আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়াতে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে উঠছেন লিচু চাষে। এখানে চায়না,বোম্বাইসহ মোজাফ্ফর জাতের লিচু হয়। এবার আকারে লিচু ছোট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। শুধু গুরুদাসপুরেই রয়েছে ২০৫টি বাগান মোট ৪১০ হেক্টর জমিতে যার লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার মেট্রিক টন।