শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভালো ফলন ও ন্যায মুল্যে কিস্তিমাত গুরুদাসপুরের কলা চাষীদের

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
  • ২৮৫ Time View

মোঃ মাজেম আলী মলিন. ছোট ভ্যান, ট্রলি, লছিমন- করিমনে যে যার মতো করে কলা নিয়ে আসছেন হাটে। সাজিয়ে রাখা হচ্ছে কলার হাট জুড়ে। দুরদুরান্ত থেকে ফরিয়া মহাজনরা আসছেন সেই কলা কিনতে। যাবে বিভাগীয় শহর থেকে দেশের নানা প্রান্তে। উৎসুক কৃষান কৃষানীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। ভোর রাত থেকেই চলছে কলা কাটা আর গাড়িতে সাজানোর কাজ। যতদুর চোখ যায় শুধু কলা আর কলা। পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে সারি সারি কলাবাহী ট্রাক। শুক্র শনি বাদে সপ্তাহে ৫ দিনই হয় কলা বেচা কেনা । এমন চিত্র দেখাযায় চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর হাটে।

চলনবিলাঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর,বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলায় অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে এ কলা চাষে। কলার বাম্পার ফলন সেই সাথে ন্যায মুল্য পাওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ও খরচ খুবই কম। জৈব সার ব্যবহার করে কলা চাষ করার ফলে স্থানীয় বাজারে এ কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কলা চাষী মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে কলা চাষ করেছি। মাছে লাভ কম হলেও কলায় প্রচুর লাভ হয়েছে। একবার কলার গাছ লাগালে ৩ থেকে ৪ মৌসুম বিক্রি করা যায়। এবছর ৩০ বিঘার পকুর পাড়ে কলার চাষ করেছিলাম। খরচ বাদে শুধু কলাতেই ৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

বিলচন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ জহুরুল হক সরকার জানান, আমি এক একর জমিতে কলা চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার খরচ করে ৫০ থেকে ৬০ টাকার কলা বিক্রি করেছি। এই এলাকার মাটি অত্যান্ত উর্বর। তাই ফসলের পাশাপাশি সব ধরনের ফল বাঙ্গী, তরমুজ, লিচু, আম ও কলা ভালো হয়। একারনে এই এলাকার কৃষকরা ফসলের সাথে ফল চাষেও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

নাজিরপুর হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম থেকেও প্রচুর পরিমানে কলা আসে এই হাটে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক কলা লোড হয়ে দেশে নানা প্রান্তে যাচ্ছে। প্রতি কাইন কলা আকার ভেদে ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক ট্রন কলা আসে এই হাটে।

কলা চাষে সফল চাষী মান্নান সরকার জানান, জৈব সার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এছাড়াও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি এবং খরচ কম হওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকরা এখন কলা চাষে ঝুকছে বেশি। আমি ৫ বছর যাবত কলা চাষ করে আসছি। এবছর ১০ বিঘা জমিতে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৩শ থেকে ৪শ চারা রোপণ করা যায়। বছর খানেকের মধ্যেই রোপণকৃত গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। আমার কলা চাষে সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান জানান, গত বছর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছিলো। এবছর আরো ৫০ হেক্টর কলা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

Tag :

ভালো ফলন ও ন্যায মুল্যে কিস্তিমাত গুরুদাসপুরের কলা চাষীদের

Update Time : ০৫:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

মোঃ মাজেম আলী মলিন. ছোট ভ্যান, ট্রলি, লছিমন- করিমনে যে যার মতো করে কলা নিয়ে আসছেন হাটে। সাজিয়ে রাখা হচ্ছে কলার হাট জুড়ে। দুরদুরান্ত থেকে ফরিয়া মহাজনরা আসছেন সেই কলা কিনতে। যাবে বিভাগীয় শহর থেকে দেশের নানা প্রান্তে। উৎসুক কৃষান কৃষানীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। ভোর রাত থেকেই চলছে কলা কাটা আর গাড়িতে সাজানোর কাজ। যতদুর চোখ যায় শুধু কলা আর কলা। পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে সারি সারি কলাবাহী ট্রাক। শুক্র শনি বাদে সপ্তাহে ৫ দিনই হয় কলা বেচা কেনা । এমন চিত্র দেখাযায় চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর হাটে।

চলনবিলাঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর,বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলায় অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে এ কলা চাষে। কলার বাম্পার ফলন সেই সাথে ন্যায মুল্য পাওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ও খরচ খুবই কম। জৈব সার ব্যবহার করে কলা চাষ করার ফলে স্থানীয় বাজারে এ কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কলা চাষী মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে কলা চাষ করেছি। মাছে লাভ কম হলেও কলায় প্রচুর লাভ হয়েছে। একবার কলার গাছ লাগালে ৩ থেকে ৪ মৌসুম বিক্রি করা যায়। এবছর ৩০ বিঘার পকুর পাড়ে কলার চাষ করেছিলাম। খরচ বাদে শুধু কলাতেই ৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

বিলচন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ জহুরুল হক সরকার জানান, আমি এক একর জমিতে কলা চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার খরচ করে ৫০ থেকে ৬০ টাকার কলা বিক্রি করেছি। এই এলাকার মাটি অত্যান্ত উর্বর। তাই ফসলের পাশাপাশি সব ধরনের ফল বাঙ্গী, তরমুজ, লিচু, আম ও কলা ভালো হয়। একারনে এই এলাকার কৃষকরা ফসলের সাথে ফল চাষেও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

নাজিরপুর হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম থেকেও প্রচুর পরিমানে কলা আসে এই হাটে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক কলা লোড হয়ে দেশে নানা প্রান্তে যাচ্ছে। প্রতি কাইন কলা আকার ভেদে ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক ট্রন কলা আসে এই হাটে।

কলা চাষে সফল চাষী মান্নান সরকার জানান, জৈব সার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এছাড়াও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি এবং খরচ কম হওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকরা এখন কলা চাষে ঝুকছে বেশি। আমি ৫ বছর যাবত কলা চাষ করে আসছি। এবছর ১০ বিঘা জমিতে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৩শ থেকে ৪শ চারা রোপণ করা যায়। বছর খানেকের মধ্যেই রোপণকৃত গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। আমার কলা চাষে সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান জানান, গত বছর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছিলো। এবছর আরো ৫০ হেক্টর কলা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।