শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাখ টাকার গরুর চামড়া ২৫০ টাকা !

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২
  • ১১৮ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক বনলতা. রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা বাপ্পি রহমান। দুটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। কিন্তু পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কারণ, কেনার কোনো লোক ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে একজনকে দান করে দিয়েছেন।

রাজধানীর মুগদা এলাকার আব্দুল মালেক এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। গরুর চামড়া কেনার জন্য কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী এসে দাম ১৫০ টাকা বলেছেন। প‌রে তা এলাকার এতিমখানায় দান করে দিয়েছেন। একই কথা জানালেন আবু ইসহাকও। বলেন, চামড়া বিক্রি তো দূরের কথা, কেউ নিতেও আসেনি। কোরবানির পর চামড়া এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্রি করতে না পেরে পরে নিজ খরচে পাশের এলাকার পঞ্চায়েতে দিয়ে দিয়েছি।

আমি ও আমার ভাই দুটি গরু ও একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি। চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। পরে এলাকার একজনকে দিয়ে দিয়েছি। সে পোস্তায় গিয়ে বিক্রি করেছে। দুটি গরুর চামড়ার দাম পেয়েছে মাত্র ৭০০ টাকা। খাসির কোনো দাম পায়নি। রিকশা ভাড়া বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা ।

পুরান ঢাকার আব্দুল সাত্তার বলেন, আমি ও আমার ভাই দুটি গরু ও একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি। চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। পরে এলাকার একজনকে দিয়ে দিয়েছি। সে পোস্তায় গিয়ে বিক্রি করেছে। দুটি গরুর চামড়ার দাম পেয়েছে মাত্র ৭০০ টাকা। খাসির কোনো দাম পায়নি। রিকশা ভাড়া বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা থেকেছে।

একটা গরুর দাম এক লাখ ৬৫ হাজার, আরেকটি ৭০ হাজার টাকা। হিসাব করলে দেখা যাবে সরকার যে রেট দিয়েছে তার অর্ধেক দামও চামড়া বিক্রি করে পায়নি— বলেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সাত্তার বলেন, কোরবানির চামড়া পুরোটাই গরিবের হক। এটা বিক্রি করে দান করতে হয়। এখন দাম যত কমবে গরিব তত বঞ্চিত হবে। আগে একটা বড় গরুর চামড়া বাড়িতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। ওই সাইজের গরুর চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তার মানে গরিবরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাম কমার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, চামড়ার পণ্যের দাম তো বাড়ছে। তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কেন কম হবে? গরিব মেরে লাভ কার— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগে একটা বড় গরুর চামড়া বাড়িতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। ওই সাইজের গরুর চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তার মানে গরিবরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাম কমার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, চামড়ার পণ্যের দাম তো বাড়ছে। তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কেন কম হবে? গরিব মেরে লাভ কার

চামড়ার দাম কমে যাওয়া কিংবা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নেতা বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার খবর জানি না। আমাদের এখানে যেসব মাল (কাঁচা চামড়া) আসছে, সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পোস্তায় ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, এমনকি এক হাজার টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে। বেচাবিক্রি স্বাভাবিক আছে। কোনো সমস্যা নেই।

এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট সাত টাকা আর খাসির চামড়া তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে এবং ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে।

এলাকার খবর জানি না। আমাদের এখানে যেসব মাল (কাঁচা চামড়া) আসছে, সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পোস্তায় ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, এমনকি এক হাজার টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে। বেচাবিক্রি স্বাভাবিক আছে। কোনো সমস্যা নেই কিন্তু বাস্তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে গরুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। খাসি বা বকরির চামড়ার কোনো মূল্য মিলছে না।

এবার কেমন দামে চামড়া সংগ্রহ করছেন— জানতে চাইলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী কাইয়ুম বলেন, চামড়া বুঝে দাম ধরা হচ্ছে। বিকেলে ছোট চামড়া ৩০০ টাকায়, মাঝারি ৪০০ থেকে ৫০০ এবং বড় চামড়া ৭০০ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে, সন্ধ্যার পর ছোট চামড়া ১৫০ টাকা, মাঝারি ৩০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কেনা হয়েছে।

দাম কমে যাওয়ার কারণ কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত দেরিতে চামড়া আসবে এর মান তত কমবে; দামও কমবে।

এলাকায় মাঝারি চামড়া ৩০০ থেকে ৪০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কিনেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি চামড়া বিক্রি করেছি। গড়ে ৩৫০ টাকা করে দাম পেয়েছি। সারাদিনের পরিশ্রম শেষ! এখন গাড়ি ভাড়া আর লেবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।

পোস্তায় চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. মন্টু মিয়া জানান, এলাকায় মাঝারি চামড়া ৩০০ থেকে ৪০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কিনেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি চামড়া বিক্রি করেছি। গড়ে ৩৫০ টাকা করে দাম পেয়েছি। সারাদিনের পরিশ্রম শেষ! এখন গাড়ি ভাড়া আর লেবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। ঈদ আনন্দ মাটি করে ব্যবসা করলাম, পুরোটাই লস!

আড়তের মালিকরা অনেক কথাই বলে কিন্তু এখানে আসলে তাদের আসল চেহারা দেখা যায়— বলেন তিনি।

Tag :

লাখ টাকার গরুর চামড়া ২৫০ টাকা !

Update Time : ০২:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক বনলতা. রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা বাপ্পি রহমান। দুটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। কিন্তু পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কারণ, কেনার কোনো লোক ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে একজনকে দান করে দিয়েছেন।

রাজধানীর মুগদা এলাকার আব্দুল মালেক এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। গরুর চামড়া কেনার জন্য কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী এসে দাম ১৫০ টাকা বলেছেন। প‌রে তা এলাকার এতিমখানায় দান করে দিয়েছেন। একই কথা জানালেন আবু ইসহাকও। বলেন, চামড়া বিক্রি তো দূরের কথা, কেউ নিতেও আসেনি। কোরবানির পর চামড়া এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্রি করতে না পেরে পরে নিজ খরচে পাশের এলাকার পঞ্চায়েতে দিয়ে দিয়েছি।

আমি ও আমার ভাই দুটি গরু ও একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি। চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। পরে এলাকার একজনকে দিয়ে দিয়েছি। সে পোস্তায় গিয়ে বিক্রি করেছে। দুটি গরুর চামড়ার দাম পেয়েছে মাত্র ৭০০ টাকা। খাসির কোনো দাম পায়নি। রিকশা ভাড়া বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা ।

পুরান ঢাকার আব্দুল সাত্তার বলেন, আমি ও আমার ভাই দুটি গরু ও একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি। চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। পরে এলাকার একজনকে দিয়ে দিয়েছি। সে পোস্তায় গিয়ে বিক্রি করেছে। দুটি গরুর চামড়ার দাম পেয়েছে মাত্র ৭০০ টাকা। খাসির কোনো দাম পায়নি। রিকশা ভাড়া বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা থেকেছে।

একটা গরুর দাম এক লাখ ৬৫ হাজার, আরেকটি ৭০ হাজার টাকা। হিসাব করলে দেখা যাবে সরকার যে রেট দিয়েছে তার অর্ধেক দামও চামড়া বিক্রি করে পায়নি— বলেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সাত্তার বলেন, কোরবানির চামড়া পুরোটাই গরিবের হক। এটা বিক্রি করে দান করতে হয়। এখন দাম যত কমবে গরিব তত বঞ্চিত হবে। আগে একটা বড় গরুর চামড়া বাড়িতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। ওই সাইজের গরুর চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তার মানে গরিবরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাম কমার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, চামড়ার পণ্যের দাম তো বাড়ছে। তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কেন কম হবে? গরিব মেরে লাভ কার— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগে একটা বড় গরুর চামড়া বাড়িতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। ওই সাইজের গরুর চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তার মানে গরিবরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাম কমার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, চামড়ার পণ্যের দাম তো বাড়ছে। তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কেন কম হবে? গরিব মেরে লাভ কার

চামড়ার দাম কমে যাওয়া কিংবা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নেতা বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার খবর জানি না। আমাদের এখানে যেসব মাল (কাঁচা চামড়া) আসছে, সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পোস্তায় ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, এমনকি এক হাজার টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে। বেচাবিক্রি স্বাভাবিক আছে। কোনো সমস্যা নেই।

এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট সাত টাকা আর খাসির চামড়া তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে এবং ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে।

এলাকার খবর জানি না। আমাদের এখানে যেসব মাল (কাঁচা চামড়া) আসছে, সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পোস্তায় ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, এমনকি এক হাজার টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে। বেচাবিক্রি স্বাভাবিক আছে। কোনো সমস্যা নেই কিন্তু বাস্তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে গরুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। খাসি বা বকরির চামড়ার কোনো মূল্য মিলছে না।

এবার কেমন দামে চামড়া সংগ্রহ করছেন— জানতে চাইলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী কাইয়ুম বলেন, চামড়া বুঝে দাম ধরা হচ্ছে। বিকেলে ছোট চামড়া ৩০০ টাকায়, মাঝারি ৪০০ থেকে ৫০০ এবং বড় চামড়া ৭০০ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে, সন্ধ্যার পর ছোট চামড়া ১৫০ টাকা, মাঝারি ৩০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কেনা হয়েছে।

দাম কমে যাওয়ার কারণ কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত দেরিতে চামড়া আসবে এর মান তত কমবে; দামও কমবে।

এলাকায় মাঝারি চামড়া ৩০০ থেকে ৪০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কিনেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি চামড়া বিক্রি করেছি। গড়ে ৩৫০ টাকা করে দাম পেয়েছি। সারাদিনের পরিশ্রম শেষ! এখন গাড়ি ভাড়া আর লেবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।

পোস্তায় চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. মন্টু মিয়া জানান, এলাকায় মাঝারি চামড়া ৩০০ থেকে ৪০০ এবং বড় চামড়া ৫০০ টাকায় কিনেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬টি চামড়া বিক্রি করেছি। গড়ে ৩৫০ টাকা করে দাম পেয়েছি। সারাদিনের পরিশ্রম শেষ! এখন গাড়ি ভাড়া আর লেবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। ঈদ আনন্দ মাটি করে ব্যবসা করলাম, পুরোটাই লস!

আড়তের মালিকরা অনেক কথাই বলে কিন্তু এখানে আসলে তাদের আসল চেহারা দেখা যায়— বলেন তিনি।