বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশের পেটে ৩৬ শতাংশ বালি !

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২
  • ৯৪ Time View

বনলতা ডেস্ক. প্রতিনিয়তই হচ্ছে নদীদূষণ। এজন্য পানিতে কমছে ইলিশের খাদ্য। ফলে দেশের জাতীয় এ মাছের পেটে যাচ্ছে বালি ও ধ্বংসাবশেষ। এর পরিমাণ নেহাত কম নয়, ৩৬ শতাংশ! খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিবর্তন আসায় ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ আগের মতো থাকছে না। চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় হওয়া গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় শৈবালের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৪২ শতাংশ। এরপরই বালি ও ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, পরিমাণ ৩৬ শতাংশ।

দেশে ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় শৈবালের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৪২ শতাংশ। এরপরই বালি ও ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, পরিমাণ ৩৬ শতাংশ এছাড়া খাদ্য তালিকায় ডায়াটম ১৫, রটিফার ৩, ক্রাস্টাসিয়ান ২, প্রোটোজোয়া ১ এবং অন্যান্য উপাদান ১ শতাংশ পাওয়া গেছে। ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় মোট ২৭ প্রজাতির উদ্ভিদ-কণা এবং ১২ প্রজাতির প্রাণী-কণা রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে নদীদূষণ। বেপরোয়া বালি উত্তোলন ছাড়াও নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন অথবা পানিতে তৈলাক্ত ও বিষাক্ত সামগ্রী ছাড়ার কারণে ইলিশের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ইলিশের গঠন ও স্বাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে।

বিশ্বে ইলিশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। সরকারি হিসাবে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। উৎপাদন বাড়লেও অপরিপক্ব ইলিশ গবেষকদের ভাবাচ্ছে। জানা গেছে, এক বছর বয়সী পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশ আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৩ সেন্টিমিটার সাইজ হলে পরিপক্ব হিসেবে গণ্য হয়। মূলত তখনই প্রজনন উপযোগী হয় ইলিশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে নদীদূষণ। বেপরোয়া বালি উত্তোলন ছাড়াও নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন অথবা পানিতে তৈলাক্ত ও বিষাক্ত সামগ্রী ছাড়ার কারণে ইলিশের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ইলিশের গঠন ও স্বাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে
গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের নদ-নদীগুলোতে অপরিপক্ব প্রায় ২৭ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ইলিশের পেটেও ডিম হচ্ছে। এটি অদূর ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ইলিশের স্বাদে হেরফের হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে অপরিপক্ব ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে বিভিন্ন কারণে ইলিশের খাদ্যকণা কমে যাচ্ছে। ফলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য মাছের স্বাদে হেরফের হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইলিশ নদীর পানিতে যেটা পায়, সেটাই খায়। এখন সেখানে যদি উদ্ভিদ অথবা প্রাণী-কণা থাকে, তাহলে সেটা বেশি পরিমাণে খাবে। পানিতে যদি বালি বা বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ পায়, ইলিশ মাছ সেটাই খাবে। খাদ্যকণার মধ্যে বালুকণার পরিমাণটা বেশি দেখা যাচ্ছে।

দেশের নদ-নদীগুলোতে অপরিপক্ব প্রায় ২৭ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ইলিশের পেটেও ডিম হচ্ছে। এটি অদূর ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
তিনি বলেন, ইলিশের পেটে প্রায় ৩৬ শতাংশ বালি ও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায়, পানিতে বালি ও ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ বেশি। পানিতে এসব আছে বলেই মাছের পেটে তা চলে যাচ্ছে, তা হজমও হচ্ছে না।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে আবুল বাশার বলেন, নদীদূষণের কারণে এমনটি হচ্ছে। পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ডুবোচরও তৈরি হচ্ছে। এতে ইলিশের খাদ্যের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া ইলিশের গতিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ডুবোচর। ‘খাদ্যের আধিক্য যখনই কমে যাচ্ছে তখনই বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থার সমাধানের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। দূষণ রোধ করতে হবে। দূষণের হাত থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে।’

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ইলিশের স্বাদে হেরফের হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে অপরিপক্ব ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে
মো. আবুল বাশার, ইলিশ গবেষণা প্রকল্প পরিচালক বলেন, অল্প বয়সেই ইলিশের পেটে ডিম চলে আসছে। এজন্য প্রাথমিকভাবে আমরা দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছি। এক. তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। এক্ষেত্রে তাপমাত্রাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। দুই. ইনকমপ্লিট মাইগ্রেশন। ইলিশের মাইগ্রেশনের সার্কেল আছে। তারা নদী থেকে সমুদ্রে যাবে, আবার সমুদ্র থেকে নদীতে ফিরে আসবে। নানা কারণে ইলিশ এ রাউন্ড শেষ করতে পারছে না।

ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, মাছটি স্বাদু পানিতে জন্মগ্রহণ করে। নদীতে জাটকা প্রায় ছয় থেকে সাত মাস অবস্থান করে। বর্ষার শুরুতে যখন নদীর পানি ঘোলাটে হয়ে যায়, তখন জাটকা সমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। জীবনচক্রের প্রথম বছরে সমুদ্রে অভিপ্রায়ণ এবং পরিপক্বতা লাভের আগ পর্যন্ত সমুদ্রে অবস্থান করে। পরিপক্বতা লাভের পর প্রজননের সময় নদীর দিকে অভিপ্রায়ণ এবং পরিপক্ব ইলিশ আবার সমুদ্রে ফিরে যায়।

ইলিশের পেটে প্রায় ৩৬ শতাংশ বালি ও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায়, পানিতে বালি ও ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ বেশি। পানিতে এসব আছে বলেই মাছের পেটে তা চলে যাচ্ছে, তা হজমও হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করে নদী কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেপরোয়া বালি উত্তোলনসহ নানা কারণে মেঘনা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কাজে প্রভাবশালী মহল জড়িত। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এভাবে নদীদূষণ হতে থাকলে পানিতে ইলিশের খাদ্যকণার পরিমাণ আরও কমে যাবে। এতে ইলিশ মাছ হুমকির মুখে পড়বে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খ. মাহবুবুল হক বলেন, আমরা এখনও গবেষণার প্রতিবেদনটি পাইনি। পাওয়ার পর আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করব। পরিবেশ দূষণের কারণে মাছ, শাকসবজিসহ সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ছে। এটার জন্য পরিবেশ আইন আছে। এ বিষয়ে সবারই সচেতন হতে হবে

নদীদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে বলেও মনে করেন খ. মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে মাছ, শাকসবজিসহ সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ছে। এটার জন্য পরিবেশ আইন আছে। এ বিষয়ে সবারই সচেতন হতে হবে।

Tag :

ইলিশের পেটে ৩৬ শতাংশ বালি !

Update Time : ০৫:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

বনলতা ডেস্ক. প্রতিনিয়তই হচ্ছে নদীদূষণ। এজন্য পানিতে কমছে ইলিশের খাদ্য। ফলে দেশের জাতীয় এ মাছের পেটে যাচ্ছে বালি ও ধ্বংসাবশেষ। এর পরিমাণ নেহাত কম নয়, ৩৬ শতাংশ! খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিবর্তন আসায় ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ আগের মতো থাকছে না। চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় হওয়া গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় শৈবালের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৪২ শতাংশ। এরপরই বালি ও ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, পরিমাণ ৩৬ শতাংশ।

দেশে ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় শৈবালের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৪২ শতাংশ। এরপরই বালি ও ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, পরিমাণ ৩৬ শতাংশ এছাড়া খাদ্য তালিকায় ডায়াটম ১৫, রটিফার ৩, ক্রাস্টাসিয়ান ২, প্রোটোজোয়া ১ এবং অন্যান্য উপাদান ১ শতাংশ পাওয়া গেছে। ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় মোট ২৭ প্রজাতির উদ্ভিদ-কণা এবং ১২ প্রজাতির প্রাণী-কণা রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে নদীদূষণ। বেপরোয়া বালি উত্তোলন ছাড়াও নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন অথবা পানিতে তৈলাক্ত ও বিষাক্ত সামগ্রী ছাড়ার কারণে ইলিশের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ইলিশের গঠন ও স্বাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে।

বিশ্বে ইলিশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। সরকারি হিসাবে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। উৎপাদন বাড়লেও অপরিপক্ব ইলিশ গবেষকদের ভাবাচ্ছে। জানা গেছে, এক বছর বয়সী পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশ আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৩ সেন্টিমিটার সাইজ হলে পরিপক্ব হিসেবে গণ্য হয়। মূলত তখনই প্রজনন উপযোগী হয় ইলিশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে নদীদূষণ। বেপরোয়া বালি উত্তোলন ছাড়াও নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন অথবা পানিতে তৈলাক্ত ও বিষাক্ত সামগ্রী ছাড়ার কারণে ইলিশের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ইলিশের গঠন ও স্বাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে
গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের নদ-নদীগুলোতে অপরিপক্ব প্রায় ২৭ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ইলিশের পেটেও ডিম হচ্ছে। এটি অদূর ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ইলিশের স্বাদে হেরফের হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে অপরিপক্ব ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে বিভিন্ন কারণে ইলিশের খাদ্যকণা কমে যাচ্ছে। ফলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য মাছের স্বাদে হেরফের হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইলিশ নদীর পানিতে যেটা পায়, সেটাই খায়। এখন সেখানে যদি উদ্ভিদ অথবা প্রাণী-কণা থাকে, তাহলে সেটা বেশি পরিমাণে খাবে। পানিতে যদি বালি বা বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ পায়, ইলিশ মাছ সেটাই খাবে। খাদ্যকণার মধ্যে বালুকণার পরিমাণটা বেশি দেখা যাচ্ছে।

দেশের নদ-নদীগুলোতে অপরিপক্ব প্রায় ২৭ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ইলিশের পেটেও ডিম হচ্ছে। এটি অদূর ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
তিনি বলেন, ইলিশের পেটে প্রায় ৩৬ শতাংশ বালি ও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায়, পানিতে বালি ও ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ বেশি। পানিতে এসব আছে বলেই মাছের পেটে তা চলে যাচ্ছে, তা হজমও হচ্ছে না।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে আবুল বাশার বলেন, নদীদূষণের কারণে এমনটি হচ্ছে। পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ডুবোচরও তৈরি হচ্ছে। এতে ইলিশের খাদ্যের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া ইলিশের গতিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ডুবোচর। ‘খাদ্যের আধিক্য যখনই কমে যাচ্ছে তখনই বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থার সমাধানের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। দূষণ রোধ করতে হবে। দূষণের হাত থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে।’

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ইলিশের স্বাদে হেরফের হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে অপরিপক্ব ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে
মো. আবুল বাশার, ইলিশ গবেষণা প্রকল্প পরিচালক বলেন, অল্প বয়সেই ইলিশের পেটে ডিম চলে আসছে। এজন্য প্রাথমিকভাবে আমরা দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছি। এক. তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। এক্ষেত্রে তাপমাত্রাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। দুই. ইনকমপ্লিট মাইগ্রেশন। ইলিশের মাইগ্রেশনের সার্কেল আছে। তারা নদী থেকে সমুদ্রে যাবে, আবার সমুদ্র থেকে নদীতে ফিরে আসবে। নানা কারণে ইলিশ এ রাউন্ড শেষ করতে পারছে না।

ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, মাছটি স্বাদু পানিতে জন্মগ্রহণ করে। নদীতে জাটকা প্রায় ছয় থেকে সাত মাস অবস্থান করে। বর্ষার শুরুতে যখন নদীর পানি ঘোলাটে হয়ে যায়, তখন জাটকা সমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। জীবনচক্রের প্রথম বছরে সমুদ্রে অভিপ্রায়ণ এবং পরিপক্বতা লাভের আগ পর্যন্ত সমুদ্রে অবস্থান করে। পরিপক্বতা লাভের পর প্রজননের সময় নদীর দিকে অভিপ্রায়ণ এবং পরিপক্ব ইলিশ আবার সমুদ্রে ফিরে যায়।

ইলিশের পেটে প্রায় ৩৬ শতাংশ বালি ও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায়, পানিতে বালি ও ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ বেশি। পানিতে এসব আছে বলেই মাছের পেটে তা চলে যাচ্ছে, তা হজমও হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করে নদী কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেপরোয়া বালি উত্তোলনসহ নানা কারণে মেঘনা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কাজে প্রভাবশালী মহল জড়িত। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এভাবে নদীদূষণ হতে থাকলে পানিতে ইলিশের খাদ্যকণার পরিমাণ আরও কমে যাবে। এতে ইলিশ মাছ হুমকির মুখে পড়বে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খ. মাহবুবুল হক বলেন, আমরা এখনও গবেষণার প্রতিবেদনটি পাইনি। পাওয়ার পর আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করব। পরিবেশ দূষণের কারণে মাছ, শাকসবজিসহ সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ছে। এটার জন্য পরিবেশ আইন আছে। এ বিষয়ে সবারই সচেতন হতে হবে

নদীদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে বলেও মনে করেন খ. মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে মাছ, শাকসবজিসহ সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ছে। এটার জন্য পরিবেশ আইন আছে। এ বিষয়ে সবারই সচেতন হতে হবে।