মুক্ত অভিমত. বই! বিশেষ কায়দায় ছাপানো অক্ষর বা ছবিবিশিষ্ট কাগজ’সমূহ যা বাঁধা থাকে রক্ষামূলক কোনো মলাটের ভেতর। আর কাব্যগ্রন্থ বা কবিতার বই হলো এমন বস্তু যাতে ছাপা থাকে কবিতা। অন্যদিকে, বইয়ের লেখাগুলো কারও সৃজনশীল ভাবনা-বিলাসের বহিঃপ্রকাশ! চাইলেই তো আর সব লেখা হয়ে যেতে পারে না বই! ছাপার জন্য হতে হয় উপযুক্ত, থাকতে হয় পাঠক কুড়ানোর সম্ভাবনা, এরপর বইয়ের লেখা প্রস্তুত, প্রচ্ছদ ডিজাইন, ভেতরের অলঙ্করণ, বাইন্ডিং, অক্ষরসজ্জা, ছাপানো ইত্যাদি ধাপ পেরিয়ে জন্ম নেয় একটা বই!
বঙ্গাব্দ পঞ্জিকার কোনো এক কার্তিকের পাতা খোলা দিনে জন্ম নেন তরুণ লেখক মো. ইয়ামিন আলম রোহান। যার শৈশবের ষোলআনাই কেটেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তুরাগ নদী ক’ল ঘেষা গ্রাম বেগমপুরে। এরপর কৈশোর কেটেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। শৈশব থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ ছিল অপার। লেখালেখির কথা বলতে গেলে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোনোর আগেই কবিতা লেখার হাতেখড়ি হয় রোহানের। পঞ্চম শ্রেণি পাশের আগেই কবিতা লিখার মতো কাজে হাত ছোয়ান তিনি। এরপর একে একে জন্ম দেন প্রায় শ’খানেক কবিতা! তার কবিতায় নিজের ভাবনার নানারকম প্রতিফলন এবং সৃজনশীলতার ছোঁয়া মেলে। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি লিখেন ছোট গল্প, অণু প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি।
এ বছর অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বা কবিতার বই “সত্তম শর্বরী”। প্রকাশিত হয়েছে ‘পথিকৃৎ প্রকাশনী’ থেকে এবং বইমেলা পরিবেশক হিসেবে আছে ‘চর্যা প্রকাশ’; পাওয়া যাচ্ছে মেলার ৫৯১ নাম্বার স্টলে।
বইটিতে মূলত তার বিচিত্র জীবন গতিপথে সম্মুখীন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, ভাবনা, নব-দর্শিত ব্যাপারগুলোর প্রতি ভিন্নরকম উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে লেখা কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে।
সময়যাত্রার সমান্তরালে পরিবর্তিত আমরা জীবনের একটা সময় এসে পরিচিত হই রুচিবোধের পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির বিবর্তন, অনিশ্চয়তা, সুখ সিন্ধুক সন্ধান যাত্রার সাথে! জীবন চলার পথে সম্মুখীন এই বিচিত্র অভিজ্ঞতাগুলো কারও জীবনে থেকে যায় খড়িমাটি আর সীলেটে কাটা দাগ হয়ে; কারও জীবনে তা আবার থেকে যায় ফসলের মাঠে লাঙলের ফলায় কাটা হাল হলে। ঠিক এই ব্যাপারগুলোকেই পুজি করে একটুখানি ভিন্নরূপে উপস্থাপনের অণু প্রয়াস বলা যেতে পারে সত্তম শর্বরী বইটিকে। লেখকের মতে, পাঠকগণ ‘সত্তম শর্বরী’ পাঠের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাবেন কবিতার ঘোরে; পাঠক তার নিজেকেই আবিষ্কার করবেন কবিতা হিসেবে!
তো চলুন এবার শোনা যাক, কেমন ছিল তার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা?
লেখালেখির কথা বলতে গেলে সেই শৈশব থেকেই লিখা হয়। আগে শুধু কবিতা-ছড়া লিখতাম। এরপর আস্তে আস্তে ছোটগল্প, অণুপ্রবন্ধ, দিনলিপি, ভ্রমণকাহিনী এসব লিখার চেষ্টা করলাম। খেয়াল করলাম; হচ্ছে…। লেখালেখি আসলে একদম যে পুরোদমে করা হয় তেমন কিন্তু না। যখন যেখানে মনে চায় লিখে ফেলি। হঠাৎ করেই বেশি লিখি! এই যেমন ‘সত্তম শর্বরী’র ‘ফুলের যুদ্ধ’ নামের কবিতাটা লিখেছিলাম কলেজের একাদশ শ্রেণীর অর্ধ বার্ষিক পরিক্ষার হলে বসে, প্রশ্নের উপর! আবার ‘হঠাৎ বরষা’ কবিতাটা কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে বিআরটিসি বাসে বসে লিখা।
লেখালেখি কখনও বই প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা হয়ে উঠেনি। প্রতিবারই প্রেক্ষাপট আর মনের খোরাক থেকে প্রভাবিত হয়েই লিখেছি। কিন্তু এবার বইমেলার কয়েক মাস আগে ‘সোনামুখী সুঁই’ বইয়ের লেখক শহিদুল হক সৈকতের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিয় হয় আমার। এরপর উনিই বাকি কাজ টুকু করতে সহায়তা করেছেন। আমার আগ্রহের ভিত্তিতে উনি নিজেই আমার পান্ডুলিপি নিয়ে কথা বলেছেন প্রকাশকের সাথে। এরপর ভার্চুয়ালিই চলে পুরো বই প্রকাশের সকল কাজ। বইয়ের প্রচ্ছদ আমার নিজেরই করা ছিল কারণ আমি একই সাথে একজন গ্রাাফিক্স ডিজাইনারও। এখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বই প্রকাশিত হবার পরে বইমেলায় গিয়ে প্রকাশকের সাথে প্রথম সরাসরি সাক্ষাত হয় আমার। এর আগে সকল আলাপণ ভার্চুয়ালিই হয়েছে। বই প্রকাশের এই পুরো যাত্রাটা সত্যিই অন্যরকম ছিল আমার কাছে। আর আমার মনে হয় এই বইয়ের দ্বারা আমি একটু হলেও মানুষকে কিছু জানাতে পেরেছি, একটু হলেও তাদের ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পেরেছি আর এর মধ্যেই আমার কৃতজ্ঞতা। সবশেষে জয় হোক বইয়ের। জয় হোক সত্তম শর্বরীর।