মোঃ মাজেম আলী মলিন গুরুদাসপুর থেকে.মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ওবন্ধু ভুপেন হাজারিকার এই কালজয়ী গানটিই এখনো মানুষকে অনুপ্রানীত করে।
জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ ও অনলাইন দৈনিক বনলতা পত্রিকায় গত ২১ ফেব্রুয়ারী প্রিন্ট পত্রিকায় “টিউশানী করে সংসার চালায় ক্যান্সার আক্রান্ত মেধাবী নদী।” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তখন থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান অনেকেই। সংবাদটি নজরে আসে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসেরও। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত নদীকে ডেকে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা দেন সেই সাথে তাকে সার্বিক সহযোগিতার আস্বাস দেন। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ একরামুল হক জানান, ভোরের কাগজে প্রতিবেদন দেখে মুলত সংবাদটি পাই তার পর নদীর খোঁজ খবর নিয়ে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবগত করি। নদীর চিকিৎসার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে ২৪ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগতার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নদীর জন্য বিশেষ তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তার জন্য আর্থিক সহযোগিতার সুপারিশ করেছি। একজন মেধাবী অসহায় ছাত্রীকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
৩ নম্বর ওর্য়াড কমিশনার শেখ সবুজ বলেন, নদীর ব্যাপারে ইতোমধ্যেই জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে যতটুকু সহযোগিতা করাযায় ওই অসহায় পরিবারকে।
নদী এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে স্থানীয় বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে অধ্যায়ন করছে।নাদিয়া আক্তার নদীর বাসা নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসা আর ৩শতাংশ জমির উপর তৈরী দোচালা ঘরে বসেই স্বপ্ন দেখছিলেন অভাবের সংসারের দৈন্যতা দুর করারও। কিন্তু দরিদ্র বাবা আখতার হোসেন (৫০) ব্যবসায় লোকসান করে ঋনগ্রস্থ হয়ে পরেন। তার লিভারে ধরা পরে জটিল রোগ। নাক,কান আর গলা দিয়ে পরতে থাকে রক্ত অনবরত। দিশে হারা হয়ে পরে ছোট মেয়ে নদী। সংসারে রয়েছে মা গৃহিনী নারগিস আক্তার(৪৫) আর ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম রোযা(৬)। সে স্থানীয় কেজি স্কুলে নার্সারীতে পড়ে। নদী স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। তাই সে নিজের সুখ শান্তি আর আরাম আয়েশের কথা না ভেবে নেমে পরেন বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে টিউশানী করতে। সেই স্বল্প টাকায়ই চলতো ৪ সদস্যের অভাবের সংসার আর নিজের লেখা পড়ার খরচ। শত কষ্টেও সে কারো কাছে হাত পাতেনি। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে নিজের পরিশ্রমের টাকায় চলতেই সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত একারনেই দিনরাত পরিশ্রম করলেও ক্লান্তি যেন হার মানে তার কাছে। সেই নদীও আজ মরন ব্যাধি(ব্রেষ্ট) ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার রক্তেও দেখা দিয়েছে সমস্যা।
নদীর মা নারগিস আক্তার তার মেয়ে নদী ও স্বামী আখতার হোসেনর পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, বিলচন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের অধ্যক্ষসহ সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।