শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকের মারের চোটে কাপড় নষ্ট হলো শিক্ষার্থীর

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
  • ৯৩ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক পার্বতীপুুর (দিনাজপুর) থেকে.শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা না পারলে শিক্ষকরা শাস্তি দেন, এটা অলিখিত নিয়ম হয়ে আছে। কিন্তু সেই শাস্তির মাত্রা কতটুকু। মাঝে মাঝে শিক্ষকদের নির্মম প্রহারে শিার্থী মারাত্মক আহত হওয়াসহ মুর্ছা যাওয়ার কথা শোনা যায়।

ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। শিক্ষকের দেওয়া হাতের কাজ ঠিকমত বাড়ি থেকে করে নিয়ে না আসায় চতুর্থ শ্রেণির ১১ বছরের নাবালক শিার্থী মাহমুদ হাসান তন্ময় (১১) শিক্ষকের মারের চোটে পড়নের কাপড়ে পায়খানা-প্রসাব করে দেয়।

তন্ময়কে এভাবে মারতে দেখে কাছের কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী কাপড়ে পায়খানা-প্রসাব করে এবং আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এদের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়া আতিকা তাহসিনা (১১) নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পড়ে বিদেশী মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত ল্যাম্ব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক ঘন্টা পর আতিকার জ্ঞান ফিরে আসলেও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সুস্থ হয়ে আতিকা বাড়ি ফিরলেও তার আতঙ্ক কাটেনি। গত মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে পার্বতীপুর পৌর এলাকার রেয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাসির উদ্দিন অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

একটি প্রভাবশালীমহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিংবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

আতিকা রেয়াজনগর মহল্লার আতিকুর রহমান স্বপন এবং মাহমুদ হাসান তন্ময় ইব্রাহিম নগর মহল্লার আব্দুল মতিনের সন্তান।

আতিকার পিতা আতিকুর রহমান স্বপন ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান- বৃহস্পতিবার ল্যাম্ব হাসপাতাল থেকে আতিকাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে তার মেয়ের আতঙ্ক এখনও কাটেনি।

মাহমুদ হাসান তন্ময়ের পিতা আব্দুল মতিন জানান- তার ছেলের এ অবস্থা জানার পর তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন। পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় এবং ছেলের ভবিষত্যের কথা চিন্তা করে তিনি এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দাখিল করেননি।

এদিকে, রেয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীকে মারপিটসহ প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল বাকিয়া নানা অনিয়মের সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল বাকিয়া জানান- ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না। ডিপুটেশনে জেলা সদরে গিয়েছিলেন। তিনি এসে বিষয়টি শুনেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেখা করতে বলেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক নাসির উদ্দির মোবাইলফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শিক্ষার্থীকে মারপিটের বিষয়ে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ঈসমাইল এর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি শিক্ষা অফিসকে জানাবেন বলে তার দায় এরিয়ে যান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আওলাদ হাদি’র সাথে যোগাযোগের চেস্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রেয়াজনগর কাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) শহিদুল বারি খান (লিখন) জানান- শিক্ষার্থীকে মারপিটের বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে মধ্যে স্বচ্ছভাবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নিমিত্তে নতুন করে নির্বাচনি তফশীল ঘোষনা করা হয়েছে।

Tag :

শিক্ষকের মারের চোটে কাপড় নষ্ট হলো শিক্ষার্থীর

Update Time : ০৭:২৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক পার্বতীপুুর (দিনাজপুর) থেকে.শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা না পারলে শিক্ষকরা শাস্তি দেন, এটা অলিখিত নিয়ম হয়ে আছে। কিন্তু সেই শাস্তির মাত্রা কতটুকু। মাঝে মাঝে শিক্ষকদের নির্মম প্রহারে শিার্থী মারাত্মক আহত হওয়াসহ মুর্ছা যাওয়ার কথা শোনা যায়।

ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। শিক্ষকের দেওয়া হাতের কাজ ঠিকমত বাড়ি থেকে করে নিয়ে না আসায় চতুর্থ শ্রেণির ১১ বছরের নাবালক শিার্থী মাহমুদ হাসান তন্ময় (১১) শিক্ষকের মারের চোটে পড়নের কাপড়ে পায়খানা-প্রসাব করে দেয়।

তন্ময়কে এভাবে মারতে দেখে কাছের কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী কাপড়ে পায়খানা-প্রসাব করে এবং আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এদের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়া আতিকা তাহসিনা (১১) নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পড়ে বিদেশী মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত ল্যাম্ব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক ঘন্টা পর আতিকার জ্ঞান ফিরে আসলেও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সুস্থ হয়ে আতিকা বাড়ি ফিরলেও তার আতঙ্ক কাটেনি। গত মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে পার্বতীপুর পৌর এলাকার রেয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাসির উদ্দিন অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

একটি প্রভাবশালীমহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিংবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

আতিকা রেয়াজনগর মহল্লার আতিকুর রহমান স্বপন এবং মাহমুদ হাসান তন্ময় ইব্রাহিম নগর মহল্লার আব্দুল মতিনের সন্তান।

আতিকার পিতা আতিকুর রহমান স্বপন ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান- বৃহস্পতিবার ল্যাম্ব হাসপাতাল থেকে আতিকাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে তার মেয়ের আতঙ্ক এখনও কাটেনি।

মাহমুদ হাসান তন্ময়ের পিতা আব্দুল মতিন জানান- তার ছেলের এ অবস্থা জানার পর তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন। পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় এবং ছেলের ভবিষত্যের কথা চিন্তা করে তিনি এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দাখিল করেননি।

এদিকে, রেয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীকে মারপিটসহ প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল বাকিয়া নানা অনিয়মের সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল বাকিয়া জানান- ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না। ডিপুটেশনে জেলা সদরে গিয়েছিলেন। তিনি এসে বিষয়টি শুনেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেখা করতে বলেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক নাসির উদ্দির মোবাইলফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শিক্ষার্থীকে মারপিটের বিষয়ে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ঈসমাইল এর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি শিক্ষা অফিসকে জানাবেন বলে তার দায় এরিয়ে যান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আওলাদ হাদি’র সাথে যোগাযোগের চেস্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রেয়াজনগর কাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) শহিদুল বারি খান (লিখন) জানান- শিক্ষার্থীকে মারপিটের বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে মধ্যে স্বচ্ছভাবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নিমিত্তে নতুন করে নির্বাচনি তফশীল ঘোষনা করা হয়েছে।