শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সুখবর আসছে বাঙ্গিতেও

চলনবিলের রসুনে বাজিমাত

বিগত কয়েক বছর চলনবিলাঞ্চলে রসুনের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে খুব একটা খুসি ছিলেন না এই এলাকার কৃষক। কিন্তু চলতি বছরের রসুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে খুসি চলনবিল এলাকার কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ থেকে পঁচিশ বছর পূর্বে চলনবিল অধ্যুসিত নাটোরের গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের কৃষকরা নিজেদের-উদ্যোগে সর্ব প্রথম বিনা চাষে রসুন আবাদ শুরু করেন। রসুনের চারারোপনের একমাস পরে লাইনের ফাঁকে ফাঁকে জায়গা রাখা হয় সেখানেই বাঙ্গি ও খিড়ার বীজ রোপণ করা হয়। চৈত্র মাসের মাঝামঝিতেই শুরু হয় রসুন তোলার কাজ। রসুন তোলা শেষ হওয়া মাত্রই শুরু হয় বাঙ্গি গাছের পরিচর্যা এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বাঙ্গি বিক্রিও। প্রতি মন রসুনের বর্তমান বাজার মুল্য ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকা। প্রতি বিঘায় রসুন উপাদিত হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ।

চলনবিল এলাকার সিধুলি গ্রামের রসুন চাষী রহমত আলীর সাথে কথা বলে জানাযায়, গত বছর ৪ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হলেও দাম ছিলো কম কিন্তু রমজান মাসে বাঙ্গির ন্যায্যমুল্য পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে সামান্য লাভ হয়েছিলো। এবারও ৪ বিঘা জমিতে রসুন বপণ করেছিলাম গতবারের মতই ভিতরে বাঙ্গির চারা লাগিয়েছিলাম। বিঘাপ্রতি জমিতে রসুন চাষে খরচ পরেছিলো প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে গড়ে ৩৬ মণ হারে। বর্তমান প্রতিমণ ভাল মানের রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা। ৪ বিঘা জমিতে মোট রসুন হয়েছে ১৪৪ মণ। বর্তমান বাজার মুল্যে প্রতি বিঘায় খরচ বাদে লাভ লাভ থাকছে ৭৫হাজার টাকা। বাঙ্গি বাদেই লাভ হয়েছে ৩লক্ষাধিক টাকা। এবার রমজানে বিঘাপ্রতি বাঙ্গিতে সর্বনি¤œ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে। রসুনের খরচেই বাঙ্গির আবাদ হয়ে যায়।সামান্য সার আর দুই তিনটা সেচ দিলেই শেষ হয় বাঙ্গির খরচ।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বেপারীরা জানান, এবছর মসলা জাতীয় ফসল রসুনের দেশব্যাপি ব্যাপক চাহিদা এবং কোয়ালিটি ভালো থাকায় দাম একটু বেশি দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

চলনবিলের সবচেয়ে বড়হাট ব্যাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় রসুন হাটের ইজারাদার শ্রী নিরঞ্জ সরকার বলেন, এখনো রসুনের পুরো মৌসুম শুরু হয়নি তাই ৪ থেকে ৫ ট্রাক রসুন লোড হচ্ছে প্রতি হাটে । মৌসুমে এর পরিমান দাঁড়াবে ১৫ থেকে ২০ট্রাক।

গুরুদাসপুরের কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ ও কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মতিয়র রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ৪হাজার ৫শ ৫০ হেক্টর রসুন এবং প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সর্বদাই কৃষকদের পাশে থেকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

নাটোর কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলাসহ চলনবিল এলাকার শুধুমাত্র নাটোর জেলাতেই এবছর রসুনের চাষ হয়েছে ১৬হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় ২লক্ষ ১৪ হাজার মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে । যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। দেশের মোট উৎপাদনের ২৬শতাংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোর জেলাতেই। সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৩৮৫ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ১ হাজার ২০ হেক্টর, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৬০৫ হেক্টর জমিতে।

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সুখবর আসছে বাঙ্গিতেও

চলনবিলের রসুনে বাজিমাত

Update Time : ০৩:৩৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

বিগত কয়েক বছর চলনবিলাঞ্চলে রসুনের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে খুব একটা খুসি ছিলেন না এই এলাকার কৃষক। কিন্তু চলতি বছরের রসুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে খুসি চলনবিল এলাকার কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ থেকে পঁচিশ বছর পূর্বে চলনবিল অধ্যুসিত নাটোরের গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের কৃষকরা নিজেদের-উদ্যোগে সর্ব প্রথম বিনা চাষে রসুন আবাদ শুরু করেন। রসুনের চারারোপনের একমাস পরে লাইনের ফাঁকে ফাঁকে জায়গা রাখা হয় সেখানেই বাঙ্গি ও খিড়ার বীজ রোপণ করা হয়। চৈত্র মাসের মাঝামঝিতেই শুরু হয় রসুন তোলার কাজ। রসুন তোলা শেষ হওয়া মাত্রই শুরু হয় বাঙ্গি গাছের পরিচর্যা এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বাঙ্গি বিক্রিও। প্রতি মন রসুনের বর্তমান বাজার মুল্য ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকা। প্রতি বিঘায় রসুন উপাদিত হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ।

চলনবিল এলাকার সিধুলি গ্রামের রসুন চাষী রহমত আলীর সাথে কথা বলে জানাযায়, গত বছর ৪ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হলেও দাম ছিলো কম কিন্তু রমজান মাসে বাঙ্গির ন্যায্যমুল্য পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে সামান্য লাভ হয়েছিলো। এবারও ৪ বিঘা জমিতে রসুন বপণ করেছিলাম গতবারের মতই ভিতরে বাঙ্গির চারা লাগিয়েছিলাম। বিঘাপ্রতি জমিতে রসুন চাষে খরচ পরেছিলো প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে গড়ে ৩৬ মণ হারে। বর্তমান প্রতিমণ ভাল মানের রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা। ৪ বিঘা জমিতে মোট রসুন হয়েছে ১৪৪ মণ। বর্তমান বাজার মুল্যে প্রতি বিঘায় খরচ বাদে লাভ লাভ থাকছে ৭৫হাজার টাকা। বাঙ্গি বাদেই লাভ হয়েছে ৩লক্ষাধিক টাকা। এবার রমজানে বিঘাপ্রতি বাঙ্গিতে সর্বনি¤œ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে। রসুনের খরচেই বাঙ্গির আবাদ হয়ে যায়।সামান্য সার আর দুই তিনটা সেচ দিলেই শেষ হয় বাঙ্গির খরচ।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বেপারীরা জানান, এবছর মসলা জাতীয় ফসল রসুনের দেশব্যাপি ব্যাপক চাহিদা এবং কোয়ালিটি ভালো থাকায় দাম একটু বেশি দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

চলনবিলের সবচেয়ে বড়হাট ব্যাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় রসুন হাটের ইজারাদার শ্রী নিরঞ্জ সরকার বলেন, এখনো রসুনের পুরো মৌসুম শুরু হয়নি তাই ৪ থেকে ৫ ট্রাক রসুন লোড হচ্ছে প্রতি হাটে । মৌসুমে এর পরিমান দাঁড়াবে ১৫ থেকে ২০ট্রাক।

গুরুদাসপুরের কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ ও কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মতিয়র রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ৪হাজার ৫শ ৫০ হেক্টর রসুন এবং প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সর্বদাই কৃষকদের পাশে থেকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

নাটোর কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলাসহ চলনবিল এলাকার শুধুমাত্র নাটোর জেলাতেই এবছর রসুনের চাষ হয়েছে ১৬হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় ২লক্ষ ১৪ হাজার মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে । যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। দেশের মোট উৎপাদনের ২৬শতাংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোর জেলাতেই। সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৩৮৫ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ১ হাজার ২০ হেক্টর, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৬০৫ হেক্টর জমিতে।