অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি। অসুস্থ্য স্বামী ও ছেলে মেয়ের কথা ভেবে কখনও নিজের অসুস্থ্যতাকে গুরুত্ব দেননি। পেটে ব্যাথা নিয়ে গত চার বছর যাবৎ অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করেও পরিশ্রম করে চালিয়েছেন সংসার। অভাবের সংসারে ভালো কোন চিকিৎসকের কাছেও যেতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ (১৭ এপ্রিল) মঙ্গলবার পেটের অসহ্য যন্ত্রনা সইতে না পেরে স্থানীয় একটি পল্লী চিকিৎসকের কাছে যান আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫)নামের ওই নারী।
পল্লী চিকিৎসক তার আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তিনি গুরুদাসপুরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে যান। ওই হাসপাতালেই খোঁজ পান গরীবের ডাক্তার খ্যাত ডা.মোঃ আমিনুল ইসলাম সোহেলের। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে রিপোর্ট এ দেখাযায় তার পিত্তথলিতে পাথর জমেছে। আঞ্জুয়ারা বেগমের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম সোহেল তাকে বিনামুল্যে অপারেশন করিয়ে দেন। ওই চিকিৎসকের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে। অসুস্থ্য আঞ্জুয়ারাও একই উপজেলার গারিষাপাড়া মহল্লার মোঃ ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী। ওই চিকিৎসক গত এক যুগে প্রায় শতাধিক হত দরিদ্র অসুস্থ্য মানুষকে বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। হত দরিদ্র অসহায় এমন অসুস্থ্য মানুষদের খুঁজে বের করেন তার ছোট ভাই হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালাক মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর। তিনিও আর্য়োবেদিক পদ্ধতিতে অনেক মানুষকে বিনামুল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
আঞ্জুয়ারা বেগম জানান,‘আমার স্বামী অসুস্থ্য। বাড়িতে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। প্রায় চার বছর পূর্বে থেকে তার পেটে মাঝে মধ্যেই ব্যাথা হতো। অনেক সময় অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় বাজার থেকে ব্যাথার ওষুধ কিনে খেত। হঠাৎ করেই পেটের ব্যাথা অনেক বেড়ে যায় তার। অনেকেই পরামর্শ দেন ডাক্তার সোহেলের কাছে যাবার। তিনি নাকি হত দরিদ্র মানুষদের বিনামুল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সরকারী হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষে নিজ এলাকায় একটি ক্লিনিকে তিনি রোগী দেখেন। সেখানে গিয়ে তাকে সব খুলে বললে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমার পিত্তথলির পাথর অপারেশন করে দিয়েছেন বিনামুল্যে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর জানান,‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমরা দুই ভাই যেন সকল সময় মানুষের সেবা করি। আমার বড় ভাই একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরএমও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমি নিজ এলাকায় একটি বেসরকারী ক্লিনিক পরিচালনা করি। আমাদের মুল উদ্দেশ্য নিজ এলাকার কোন মানুষ যেন বিনাচিকিৎসায় মারা না যায়। তারই ধারাবাহিকতায় হত দরিদ্র নারী আঞ্জুয়ারা বেগমের অপারেশন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আমি গত ১২ বছর যাবৎ প্রায় ১০০ জন অসহায় মানুষের সন্ধান করে আমাদের বেসকারী ক্লিনিকে বড় ভাইকে দিয়ে বিনামুল্যে অপারেশন করিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও আমাদের নিজস্ব মাদরাসা ও এতিম খানা রয়েছে। যেখানে সব খরচ আমার পরিবার বহণ করে। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যায় আমরা মানুষের পাশে থাকি। আমরা চাই বেঁচে থাকা পর্যন্ত যেন সাধারণ হত দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারি।’