নিজের টাকার বিনিময়ে কেনা পণ্য ।এ যেন এক অন্য রকম অনুভুতি। ফুলেরর মুল্য গল্পে পড়েছি । ভালো বাসার মানুষের জন্য ২৫ পঁয়সা মুল্যের ফুলের মালার কাছে কোটি টাকাও যেন মুল্যহীন। এমনই এক উদ্বোগ নিয়েছেন “ গাইবান্ধা সংগঠন “ এর সদস্যরা। গরিব সহায় মানুষগুলো যেন বলতে পারে নিজের টাকায় কিনেছি কারো অনুদানে নয়। এমন সংগঠন যদি দেশের প্রতিটি জায়গায় থাকতো তাহলে সামান্য যাকাতের টাকার জন্য পদদলিত হয়ে মানুষকে মারা যেতে হতো না। এটা সিনেমা বা গল্প নয় বলছি গাইবান্ধা জেলার একটি স্বেচ্ছা সেবী সংগঠনের কথা।
গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় মাঠেই আজ সোমবার বিকেলে বসেছিল এক টাকার বাজার। এক টাকায় পণ্য বিক্রির কাযক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আহসান হাবিব রাজিব। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আসিফ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসাইন মামুন, আমাদের গাইবান্ধা সংগঠনের সভাপতি সায়হাম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুসাভভির রহমানসহ সদস্যরা।
বিকেল চারটার দিকে বসা এ বাজারে মাত্র এক টাকা দিয়েই মিলেছে চাল ডাল মুরগিসহ ১৬ প্রকার পণ্য। অন্য ১৩টি পণ্য হচ্ছে সোয়াবিন তেল, চিনি, সেমাই, গুড়া দুধ, লবণ, আলু, পিয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, রসুন, ঝিঙ্গা, মরিচ, লেবু ও সাবান। গাইবান্ধার সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমাদের গাইবান্ধা’ এ ব্যতিক্রমী বাজারের আয়োজন করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ২০১৪ সালে সংগঠনটি গড়ে তোলে। উদ্যোক্তারা বললেন, আমাদের গাইবান্ধা সংগঠনের সদস্যরা তারা নিজেদের টিফিনের টাকা, হাত খরচের টাকা ও বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঈদের কেনাকাটার টাকা বাঁচিয়ে এই বাজারের আয়োজন করে থাকেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার ২৫০ জন নি¤œ আয়ের মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে এ বাজারের আয়োজন।
এসব বিষয়ে আমাদের গাইবান্ধা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুসাভভির রহমান বলেন, টানা চর্তুথ বারের মত নি¤œ আয়ের মানুষের মাঝে ‘এক টাকার বাজার’ শিরোনামে প্রতীকি মূল্যে বাজার বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হলো। দু:স্থ মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে মাত্র এক টাকায় ১৬ প্রকার পণ্য পাওয়ায় খুশি বাজারে আসা নিম্ন আয়ের নারী পুরুষ। জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার গাইবান্ধা পৌরসভার ডেভিড কোম্পানীপাড়ার নাছিমা বেগম (৬০) বললেন, যামরা এ্যাক ট্যাকাত এতো কিচু দিলো, আল্লায় তামাক ভালো করবে। ঈদের আগে এক টাকা দিয়ে অনেক বাজার পাইছি। জীবনের প্রথম এক টাকা দিয়ে এক সঙ্গে এতো কিছু পাইলাম। চক মামরোপুর গ্রামের আয়শা বেগম (৫৮) বললেন, এ্যাক ট্যাকা দিয়ে ম্যালা কিচু পানো বাবা। নাতিটে গোসতো খাবার চাচিলো, আচকে খিলব্যার পামো। খুব উপক্যার হলো। শহরের কলেজপাড়া এলাকার বারী মিয়া (৫৯) বললেন, এই বাজারোত আসি ম্যালা জিনিস পানো। হামরা খুসি হচি। একই কথা বললেন একই উপজেলার জুম্মাপাড়া গ্রামের মোর্শেদা বেগম (৬০)।
আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, এক টাকার বাজারের এ উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তারা এ ধরণের বাজারের আয়োজনের পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তারা।