শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সময়ের  সাথে সাথে সম্পর্কের ধরণ ও বদলায়

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫১:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০
  • ৭৭ Time View

নাসরিন সুলতানা রুমা

যে কোন ভাঙ্গনের শব্দই মনে কষ্ট দেয়।যা কাম্য নয়।ভেঙ্গে যাওয়া বা বিচ্ছেদ এক সঙ্গে লেগে থাকা সম্পর্ককে আলাদা করে।এক সঙ্গে চলার অভ্যেস,ভালোলাগা, মন্দলাগা,নিত্যদিনের পাগলামী,রোমান্স সব কিছুতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়।আর এসব থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে আসলে আমরা ক’জন ভাল থাকি।যৌবনের ভুল সিদ্ধান্ত বয়সের সাথে সাথে বোঝা হয়ে ধরে বসে বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে।

যে কোন ভালোবাসার সম্পর্কে যখন ইগো ব্যাপারটা এসে যায় তখন তখন ঐ সম্পর্কের আর মাখো মাখো ব্যাপারটা থাকেনা।ওখানে ভর করে নানা প্রশ্ন,অভিমান,তিক্ততা।তারপর চলে আসে বিচ্ছেদের পথে।কিন্ত যারা শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন তাদের উচিৎ সময় নিয়ে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া।সময় নিলে রাগ অভিমান ভাঙ্গানোর সুযোগ থাকে।

যে সম্পর্কের মূলধন ভালোবাসা সে সম্পর্কগুলো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব ভালোবাসা দিয়েই।বিচ্ছিন্ন করার মত অনেক মানুষ আসবে কিন্ত জোড়া লাগানোর জন্য কম মানুষকেই পাশে থাকে।

বিবাহ বিচ্ছেদকে আমাদের সমাজে নেগেটিভ চোখে দেখলেও এর ফলাফল সব সময় খারাপ হয়না।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন নারী একটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তৈরি করে অন্যদের প্রেরণা দেয়।জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়।
আমরা যে সকল পিতামাতারা মনে করি কন্যাকে সুপাত্রস্হ করলেই দায়িত্ব শেষ।আমরা সেখানে ভুল করি।আপনার শিক্ষিত অর্থ উপার্জনকারী মেয়েটি বা বউমাটি আপনার পরিবারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।সে তার পরিবারের বিপদে আপদে ঢাল হতে পারে।সর্বপরি সে তার নিজের পরিচয়ে বাঁচতে পারে।অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি মেয়েকে কেউ অম্তত বিনা কারণে ছুঁড়ে ফেলার কথা ভাবেনা।

সফল দাম্পত্যের জন্য অনেক বেশি ভালোবাসাবাসির গল্প না থাকলেও দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হয়।রোমাঞ্চ ফিকে হয়ে যায় কিন্তু দায়িত্ববোধ সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে।বছরের পর বছর চলতে থাকে;অটুট থাকে বন্ধন।

সময়ের সাথে সাথে সাথে সম্পর্কের ধরণ ও বদলেছে।এখন সহজেই মনের অনুভূতি আদান প্রদানের মাধ্যম রয়েছে।সহজেই কাউকে ভালোবাসি বলা যায়।কিন্তু এই সম্পর্কের স্হায়ীত্ব কতটুকু সময়ের!প্রেম,বিয়ে,ডিভোর্স খুব সহজ হয়ে গেছে।যেন আইডির সাথে আইডির সম্পর্ক।ব্লকের সাথে সাথেই সব শেষ।এখানে মনের সংযোগ কোথায়!

সমাজবিজ্ঞানীরা বিবাহকে যাই বলুন না কেন বিবাহ আমাদের সম্প্রদায়ে দুটি পরিবারকে একটি বন্ধনে বাঁধে।বিয়ে শুধু দুজনের হয়না হয় দুটি পরিবারে।নববধূ নতুন পরিবারে নতুন রন্ধন শৈলী,নতুন মানুষ,নতুন অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হতে গিয়ে অনেক ভুলভাল করে ফেলে।পরিবারে উচিৎ সে সময় তাকে অযোগ্য প্রমাণ করার চেয়ে শুধরিয়ে বা শিখিয়ে নেওয়া।এতে বরং ভালোই হয়।এতে সংসারে একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ বাড়ে।

আামাদের সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর কলহে পরিবারের অন্য সদস্যরা খুশি হন।অগ্নিতে ঘি ঢেলে দেয়।এই শ্রেণির পারিবারিক সদস্যরা প্রকৃতপক্ষে নিজেরই ক্ষতি করে।তাদের উচিৎ পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখা।

যার যায় শুধু সেই বুঝে!অন্যরা তামাশা দেখে।একসাথে থাকার ভালোলাগা মন্দলাগার স্মৃতি আর অভ্যেসগুলো থেকে আলাদা হওয়াটা বড়ই কঠিন!তবুও চলতে হয়।ছুটতে হয় অসীমের পানে।ঐ দূরে কেউ হয়তো লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে!প্রকৃতি শূণ্যস্হান রাখেনা।পূর্ণ করে দেয়।নিশ্চয়ই একদিন তোমার মুক্তি হবে আলোয় আলোয়!
প্রভাষক, বিসি এস এস সরকারী কলেজ গুরুদাসপুর,নাটোর।

Tag :

সময়ের  সাথে সাথে সম্পর্কের ধরণ ও বদলায়

Update Time : ১১:৫১:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০

নাসরিন সুলতানা রুমা

যে কোন ভাঙ্গনের শব্দই মনে কষ্ট দেয়।যা কাম্য নয়।ভেঙ্গে যাওয়া বা বিচ্ছেদ এক সঙ্গে লেগে থাকা সম্পর্ককে আলাদা করে।এক সঙ্গে চলার অভ্যেস,ভালোলাগা, মন্দলাগা,নিত্যদিনের পাগলামী,রোমান্স সব কিছুতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়।আর এসব থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে আসলে আমরা ক’জন ভাল থাকি।যৌবনের ভুল সিদ্ধান্ত বয়সের সাথে সাথে বোঝা হয়ে ধরে বসে বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে।

যে কোন ভালোবাসার সম্পর্কে যখন ইগো ব্যাপারটা এসে যায় তখন তখন ঐ সম্পর্কের আর মাখো মাখো ব্যাপারটা থাকেনা।ওখানে ভর করে নানা প্রশ্ন,অভিমান,তিক্ততা।তারপর চলে আসে বিচ্ছেদের পথে।কিন্ত যারা শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন তাদের উচিৎ সময় নিয়ে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া।সময় নিলে রাগ অভিমান ভাঙ্গানোর সুযোগ থাকে।

যে সম্পর্কের মূলধন ভালোবাসা সে সম্পর্কগুলো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব ভালোবাসা দিয়েই।বিচ্ছিন্ন করার মত অনেক মানুষ আসবে কিন্ত জোড়া লাগানোর জন্য কম মানুষকেই পাশে থাকে।

বিবাহ বিচ্ছেদকে আমাদের সমাজে নেগেটিভ চোখে দেখলেও এর ফলাফল সব সময় খারাপ হয়না।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন নারী একটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তৈরি করে অন্যদের প্রেরণা দেয়।জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়।
আমরা যে সকল পিতামাতারা মনে করি কন্যাকে সুপাত্রস্হ করলেই দায়িত্ব শেষ।আমরা সেখানে ভুল করি।আপনার শিক্ষিত অর্থ উপার্জনকারী মেয়েটি বা বউমাটি আপনার পরিবারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।সে তার পরিবারের বিপদে আপদে ঢাল হতে পারে।সর্বপরি সে তার নিজের পরিচয়ে বাঁচতে পারে।অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি মেয়েকে কেউ অম্তত বিনা কারণে ছুঁড়ে ফেলার কথা ভাবেনা।

সফল দাম্পত্যের জন্য অনেক বেশি ভালোবাসাবাসির গল্প না থাকলেও দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হয়।রোমাঞ্চ ফিকে হয়ে যায় কিন্তু দায়িত্ববোধ সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে।বছরের পর বছর চলতে থাকে;অটুট থাকে বন্ধন।

সময়ের সাথে সাথে সাথে সম্পর্কের ধরণ ও বদলেছে।এখন সহজেই মনের অনুভূতি আদান প্রদানের মাধ্যম রয়েছে।সহজেই কাউকে ভালোবাসি বলা যায়।কিন্তু এই সম্পর্কের স্হায়ীত্ব কতটুকু সময়ের!প্রেম,বিয়ে,ডিভোর্স খুব সহজ হয়ে গেছে।যেন আইডির সাথে আইডির সম্পর্ক।ব্লকের সাথে সাথেই সব শেষ।এখানে মনের সংযোগ কোথায়!

সমাজবিজ্ঞানীরা বিবাহকে যাই বলুন না কেন বিবাহ আমাদের সম্প্রদায়ে দুটি পরিবারকে একটি বন্ধনে বাঁধে।বিয়ে শুধু দুজনের হয়না হয় দুটি পরিবারে।নববধূ নতুন পরিবারে নতুন রন্ধন শৈলী,নতুন মানুষ,নতুন অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হতে গিয়ে অনেক ভুলভাল করে ফেলে।পরিবারে উচিৎ সে সময় তাকে অযোগ্য প্রমাণ করার চেয়ে শুধরিয়ে বা শিখিয়ে নেওয়া।এতে বরং ভালোই হয়।এতে সংসারে একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ বাড়ে।

আামাদের সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর কলহে পরিবারের অন্য সদস্যরা খুশি হন।অগ্নিতে ঘি ঢেলে দেয়।এই শ্রেণির পারিবারিক সদস্যরা প্রকৃতপক্ষে নিজেরই ক্ষতি করে।তাদের উচিৎ পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখা।

যার যায় শুধু সেই বুঝে!অন্যরা তামাশা দেখে।একসাথে থাকার ভালোলাগা মন্দলাগার স্মৃতি আর অভ্যেসগুলো থেকে আলাদা হওয়াটা বড়ই কঠিন!তবুও চলতে হয়।ছুটতে হয় অসীমের পানে।ঐ দূরে কেউ হয়তো লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে!প্রকৃতি শূণ্যস্হান রাখেনা।পূর্ণ করে দেয়।নিশ্চয়ই একদিন তোমার মুক্তি হবে আলোয় আলোয়!
প্রভাষক, বিসি এস এস সরকারী কলেজ গুরুদাসপুর,নাটোর।