শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জলবায়ুর মহাবিপদ

আজকের শিশুদের স্বপ্ন চু্রি

তেতে উঠছে পৃথিবী। জ্বলন্ত চুল্লির মতো ফুটছে। গোটা বিশ্বকে গ্রাস করছে ভয়াবহ দাবদাহ। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া দাবানল পুড়িয়ে দিচ্ছে ঘন সবুজ বন, আবাসভূমি। লাখ লাখ বছর ধরে মেরুতে জমে থাকা বরফ গলছে বিপজ্জনকহারে। সমুদ্র তলের উচ্চতা বাড়ছে। ঝড়গুলো দানবীয় রূপ নিচ্ছে। বিগত অর্ধশতক ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। কমাতে বলেছিলেন গ্রিনহাউজ গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। রাজনৈতিক উন্নয়নের বদলে তাগিদ দিয়েছিলেন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের।

তবে বিশ্বনেতারা দশকের পর দশক ধরে গালভরা বুলি আর প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেসব রক্ষা করেননি। বরং উন্নয়ন তাণ্ডবে তারা নদী-খাল-জলাশয়গুলোকে বিষাক্ত ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। সুপেয় পানির উৎস ধ্বংস করেছেন। সবুজায়নের বদলে নগরগুলোকে হিট আইল্যান্ড বানিয়েছেন। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমানোর বদলে নগরে-মহানগরে বাড়িয়েছেন দূষিত বস্তির সংখ্যা। ভয়াবহ বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো।

তবে এত কিছুর মধ্যেও বিশ্বনেতারা বিস্ময়করভাবে নির্বিকার-নির্ভার। জনগণ নয়, তারা করপোরেট বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। পুঁজির কাছে পরাজিত হয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে করছেন প্রতারণা। সংঘবদ্ধ হয়েই তাঁরা জাতিসংঘকে হতাশা আর উদ্বেগ প্রকাশের সংঘে পরিণত করেছেন। যুদ্ধ আর সংঘাতের অর্থনীতিকে তাঁরা বেগবান করেছেন। আধুনিকতার মোড়কে পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছেন, দিচ্ছেন আদিমতার দিকে। পৃথিবীকে জ্বলন্ত চুল্লি বানিয়ে ছেড়েছেন। যার পরিণতি ভোগ করছেন কোটি কোটি শ্রমিক, নিম্নবত্তি, মধ্যবিত্ত, তৃতীয় বিশ্ব। আর নেতারা ভূগর্ভস্থ নিরাপদ নগরী কিংবা চাঁদ আর মঙ্গলে আবাস গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

পৃথিবীর এমন ভয়াবহ করুণ পরিণতিতে গ্রেটা থুনবার্গের মতো প্রতিবাদী প্রজন্ম জরুরি।যারা বিশ্বনেতাদের বিবেকের গালে চপেটাঘাত করে বলতে পারবে, আপনারা আমাদের স্বপ্ন চুরি করেছেন। শৈশব কেড়ে নিয়ে ফাঁকা বুলিতে ভরিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, তারা মারা যাচ্ছে।” তিরিশ বছর ধরে বিজ্ঞান পরিষ্কারভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের কথা বলে আসছে। বিজ্ঞানের কথা বিশ্বাস না করে আপনারা নিয়ম করে বলে যাচ্ছেন যে, আপনারা নাকি অনেক কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গোটা পৃথিবী যখন আজ ধ্বংসের মুখে আপনাদের মুখে শুধু টাকা আর অর্থনীতির কথা! বলিহারি সাহস আপনাদের!

মনে রাখতে হবে, বৈশ্বিক এই মহাবিপদে মানবপ্রজাতির অস্তিত্বের লড়াইয়ে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, করপোরেট প্রতিশ্রুতি আপনাকে রক্ষা করবে না। কারণ তারা কখনও ভুক্তভোগী নন। আমরা যারা ভুক্তভোগী তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে অস্তিত্বের লড়াইয়ে। সামাজিক মাধ্যমে ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকা আর নয়।
(ধেয়ে আসছে মোখা: এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

জলবায়ুর মহাবিপদ

আজকের শিশুদের স্বপ্ন চু্রি

Update Time : ০৭:১৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩

তেতে উঠছে পৃথিবী। জ্বলন্ত চুল্লির মতো ফুটছে। গোটা বিশ্বকে গ্রাস করছে ভয়াবহ দাবদাহ। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া দাবানল পুড়িয়ে দিচ্ছে ঘন সবুজ বন, আবাসভূমি। লাখ লাখ বছর ধরে মেরুতে জমে থাকা বরফ গলছে বিপজ্জনকহারে। সমুদ্র তলের উচ্চতা বাড়ছে। ঝড়গুলো দানবীয় রূপ নিচ্ছে। বিগত অর্ধশতক ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। কমাতে বলেছিলেন গ্রিনহাউজ গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। রাজনৈতিক উন্নয়নের বদলে তাগিদ দিয়েছিলেন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের।

তবে বিশ্বনেতারা দশকের পর দশক ধরে গালভরা বুলি আর প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেসব রক্ষা করেননি। বরং উন্নয়ন তাণ্ডবে তারা নদী-খাল-জলাশয়গুলোকে বিষাক্ত ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। সুপেয় পানির উৎস ধ্বংস করেছেন। সবুজায়নের বদলে নগরগুলোকে হিট আইল্যান্ড বানিয়েছেন। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমানোর বদলে নগরে-মহানগরে বাড়িয়েছেন দূষিত বস্তির সংখ্যা। ভয়াবহ বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো।

তবে এত কিছুর মধ্যেও বিশ্বনেতারা বিস্ময়করভাবে নির্বিকার-নির্ভার। জনগণ নয়, তারা করপোরেট বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। পুঁজির কাছে পরাজিত হয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে করছেন প্রতারণা। সংঘবদ্ধ হয়েই তাঁরা জাতিসংঘকে হতাশা আর উদ্বেগ প্রকাশের সংঘে পরিণত করেছেন। যুদ্ধ আর সংঘাতের অর্থনীতিকে তাঁরা বেগবান করেছেন। আধুনিকতার মোড়কে পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছেন, দিচ্ছেন আদিমতার দিকে। পৃথিবীকে জ্বলন্ত চুল্লি বানিয়ে ছেড়েছেন। যার পরিণতি ভোগ করছেন কোটি কোটি শ্রমিক, নিম্নবত্তি, মধ্যবিত্ত, তৃতীয় বিশ্ব। আর নেতারা ভূগর্ভস্থ নিরাপদ নগরী কিংবা চাঁদ আর মঙ্গলে আবাস গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

পৃথিবীর এমন ভয়াবহ করুণ পরিণতিতে গ্রেটা থুনবার্গের মতো প্রতিবাদী প্রজন্ম জরুরি।যারা বিশ্বনেতাদের বিবেকের গালে চপেটাঘাত করে বলতে পারবে, আপনারা আমাদের স্বপ্ন চুরি করেছেন। শৈশব কেড়ে নিয়ে ফাঁকা বুলিতে ভরিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, তারা মারা যাচ্ছে।” তিরিশ বছর ধরে বিজ্ঞান পরিষ্কারভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের কথা বলে আসছে। বিজ্ঞানের কথা বিশ্বাস না করে আপনারা নিয়ম করে বলে যাচ্ছেন যে, আপনারা নাকি অনেক কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গোটা পৃথিবী যখন আজ ধ্বংসের মুখে আপনাদের মুখে শুধু টাকা আর অর্থনীতির কথা! বলিহারি সাহস আপনাদের!

মনে রাখতে হবে, বৈশ্বিক এই মহাবিপদে মানবপ্রজাতির অস্তিত্বের লড়াইয়ে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, করপোরেট প্রতিশ্রুতি আপনাকে রক্ষা করবে না। কারণ তারা কখনও ভুক্তভোগী নন। আমরা যারা ভুক্তভোগী তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে অস্তিত্বের লড়াইয়ে। সামাজিক মাধ্যমে ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকা আর নয়।
(ধেয়ে আসছে মোখা: এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)