শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালবাসার অপরাধে শিকলে বন্দী সাদিয়ার জীবন!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০
  • ৫০ Time View

গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি.
দশম শ্রেণীর ছাত্রী, সাদিয়া ইসলাম শিমু(১৭)। পরিবারের অজান্তে এক ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে প্রায় এক মাস যাবৎ শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে শিকলবন্দী করে রাখার অভিযোগ উঠেছে পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে। শিমু ওই এলাকার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নওপাড়া গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলামের বড় মেয়ে সাদিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, নওপাড়া গ্রামের মোঃ বকুল মন্ডলের ছেলে মোঃ মাসুদ রানা(২১) এর সঙ্গে ওই এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম শিমু(১৭) এর পঞ্চম শ্রেণী থেকে তাদের দুই জনের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখ তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে ৬ মার্চ ঢাকা হাইকোর্টে তারা দুইজন বিয়ে করে। এরপর প্রায় তিন মাস ঢাকায় বসবাস করেন তারা। এদিকে মেয়ের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই ছেলে ও তার বাবাসহ ১৪ জনের নামে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন গুরুদাসপুর থানায়। তিন মাস পরে ঢাকা থেকে মাসুদ রানা ও তার বাবা বকুল মন্ডল কে আটক করে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ। ১৪ দিন জেল হাজতে থাকার পরে জামিনে মুক্ত পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তারা।
২৭ জুন শনিবার সকালে সরজমীনে ওই মেয়ের বাড়িতে গেলে সংবাদকর্মীদের দেখে গেট বন্ধ করে দেয় পরিবারের লোকজন। পরে মেয়ের বাবাকে সুকৌশলে বুঝিয়ে কথা বলার সুযোগ হয় মেয়েটির সাথে। সংবাদকর্মীদের দেখেই মেয়ের পা থেকে শিকল খুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে রুম থেকে বের করে আনা হয়। মেয়েটির বাম পা ও বাম হাতে লোহার শিকলের দাগ দেখাযায়।
সাদিয়া ইসলাম শিমু কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তাকে প্রায় এক মাস যাবৎ শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে এবং শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে তাকে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান মেয়েটি।
স¦ামী মাসুদ রানা অভিযোগ করে বলেন, তারা দুইজন দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ প্রেম করে আসছে। ভালবাসার টানে পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৮ থাকলেও সার্টিফিকেটে ১৭ বছর রয়েছে। তিন মাস ঢাকায় অবস্থান করাকালীন সময়ে মেয়ের বাবার করা অপরহণ মামলায় ঢাকা থেকেই তাকে ও তার বাবাকে আটক করে পুলিশ। ১৪ দিন জেল হাজতে থেকে জামিনে মুক্ত পেয়ে বাড়িতে এসে এলাকাবাসীর কাছে তার স্ত্রীর শিকলবন্দী জীবনের খবর পায় এবং তখনি সে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, শিকলবন্দী জীবন ও শারিরিক নির্যাতন থেকে যেন তার ভালবাসার মানুষকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মেয়ের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, তার মেয়ের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। ভুল বুঝিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তার মেয়েকে। মানসিক চাপে মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়নি।

Tag :

ভালবাসার অপরাধে শিকলে বন্দী সাদিয়ার জীবন!

Update Time : ০৬:৪৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০

গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি.
দশম শ্রেণীর ছাত্রী, সাদিয়া ইসলাম শিমু(১৭)। পরিবারের অজান্তে এক ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে প্রায় এক মাস যাবৎ শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে শিকলবন্দী করে রাখার অভিযোগ উঠেছে পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে। শিমু ওই এলাকার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নওপাড়া গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলামের বড় মেয়ে সাদিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, নওপাড়া গ্রামের মোঃ বকুল মন্ডলের ছেলে মোঃ মাসুদ রানা(২১) এর সঙ্গে ওই এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম শিমু(১৭) এর পঞ্চম শ্রেণী থেকে তাদের দুই জনের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখ তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে ৬ মার্চ ঢাকা হাইকোর্টে তারা দুইজন বিয়ে করে। এরপর প্রায় তিন মাস ঢাকায় বসবাস করেন তারা। এদিকে মেয়ের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই ছেলে ও তার বাবাসহ ১৪ জনের নামে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন গুরুদাসপুর থানায়। তিন মাস পরে ঢাকা থেকে মাসুদ রানা ও তার বাবা বকুল মন্ডল কে আটক করে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ। ১৪ দিন জেল হাজতে থাকার পরে জামিনে মুক্ত পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তারা।
২৭ জুন শনিবার সকালে সরজমীনে ওই মেয়ের বাড়িতে গেলে সংবাদকর্মীদের দেখে গেট বন্ধ করে দেয় পরিবারের লোকজন। পরে মেয়ের বাবাকে সুকৌশলে বুঝিয়ে কথা বলার সুযোগ হয় মেয়েটির সাথে। সংবাদকর্মীদের দেখেই মেয়ের পা থেকে শিকল খুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে রুম থেকে বের করে আনা হয়। মেয়েটির বাম পা ও বাম হাতে লোহার শিকলের দাগ দেখাযায়।
সাদিয়া ইসলাম শিমু কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তাকে প্রায় এক মাস যাবৎ শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে এবং শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে তাকে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান মেয়েটি।
স¦ামী মাসুদ রানা অভিযোগ করে বলেন, তারা দুইজন দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ প্রেম করে আসছে। ভালবাসার টানে পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৮ থাকলেও সার্টিফিকেটে ১৭ বছর রয়েছে। তিন মাস ঢাকায় অবস্থান করাকালীন সময়ে মেয়ের বাবার করা অপরহণ মামলায় ঢাকা থেকেই তাকে ও তার বাবাকে আটক করে পুলিশ। ১৪ দিন জেল হাজতে থেকে জামিনে মুক্ত পেয়ে বাড়িতে এসে এলাকাবাসীর কাছে তার স্ত্রীর শিকলবন্দী জীবনের খবর পায় এবং তখনি সে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, শিকলবন্দী জীবন ও শারিরিক নির্যাতন থেকে যেন তার ভালবাসার মানুষকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মেয়ের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, তার মেয়ের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। ভুল বুঝিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তার মেয়েকে। মানসিক চাপে মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়নি।