শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে

জয়পুরহাটে সজনে বাম্পার ফলন

জয়পুরহাটে এবার সজনে ডাটা বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। জেলার হাট-বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাঁটার প্রচুর আমদানি হচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হওয়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সজনে ডাটার উৎপাদন ব্যাপক হয়েছে।

শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার পাশে, ঘরের আনাচে কানাচে, প্রতিটি গাছে ঝুলছে সজিনা ডাঁটা, দেখে মনে যেন সজনে বাগান। ফলে হাটবাজার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে উঠতে শুরু করেছে সজনে ডাটা। বর্তমানে হাট-বাজারে স্থানীয় চাহিদা বেশি থাকায় এর দামও বেশি।

এক সময় বাড়ির আশপাশের পরিত্যাক্ত জমিতে সজনের গাছ লাগানো হতো। তবে সময় পরিক্রমায় এবং চাহিদা বেশি থাকায়, কৃষকরা ফসলি জমিতে ও সজনের চাষ শুরু করছেন। পরিকল্পিতভাবে সজনের চাষ করে লাভবানও হচ্ছে অনেকেই। স্থানীয় হাট-বাজার গুলোতে মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে হাটবাজারে এর দাম কমে এসেছে। বর্তমানে পাইকারি বাজার ৬০ থেকে ৭০টাকা ও খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সজনে ডাটা।

জেলার সবচেয়ে বড় সবজি বাজার নতুনহাট। এ বাজারের কাঁচা সবজি বিক্রেতা বাবু জানান, মৌসুম শুরুতে এবছর ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সজনে। সময় বাড়ার সাথে সাথে এর দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সজনের ডাটা। আমদানি বেশি এরপরও বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।

পাইকারি বিক্রেতা রবিউল আলী জানান, সজনে ডাটার দেশের সব অঞ্চলে এর চাহিদা রয়েছে। আমি প্রতিবছর সজনে ডাঁটা চট্টগ্রাম-ঢাকা, নাটোর, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করে থাকি। জয়পুরহাট অঞ্চলে ব্যাপক সজনে ডাঁটার গাছ আছে। এবছর ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায়, সজনে গাছের ডাল ঝড়ে ভেঙ্গে না যাওয়ার কারণে সজনে ডাঁটার ফলন বেশি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর লাভ বেশি পাচ্ছি।

সজনে বিক্রি করতে আসা কৃষক জাকির হোসেন বলেন, সজনে চাষ করা অন্য গাছের চেয়ে অনেক সহজ, কারন সজনের গাছের ডাল থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। এবছর ডাল রোপন করলে আগামী বছর গাছে ফল পাওয়া যায়। সজনে চাষের জন্য বাড়তি খরচ হয় না। বাড়িতে বড় ৪/৫ টা গাছ থাকলে বছরে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আমার বাড়িতে ৬ টা গাছ আছে। ফলনও বেশি হয়েছে। শুরতে ভালো দাম পেয়েছি। এখনো দুইটা গাছে সজনে আছে। এই দাম থাকলেও আরও ৪-৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমি মনে করি, যদি বানিজ্যিক ভাবে সজনে ডাটা চাষ করা যায়। অন্য ফসলের ন্যায় এটি কৃষিতে অনেক সাফল্য বয়ে আনবে। একই সাথে দেশের অর্থনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছাঃ রাহেলা পারভীন বলেন, সজনে একটি ডাটা জাতীয় সবজি হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। এটি বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। সজনের ডাটায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন উপাদান রয়েছে। সজনে চাষে আমাদের লক্ষমাত্রা না থাকলেও এটি জয়পুরহাট সহ আশে পাশের এলাকায় ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। এই এলাকা থেকে সজনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করে চাষী ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।

সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: তুলশী চন্দ্র রায় জানান, সজনের পুষ্টি গুণ সর্ম্পকে বলেন, বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি ‘মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ’ এর পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল পানি, আমিষ, চর্বি , শর্করা, খাদ্য আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটা-এ, ভিটা-বি১, ভিটা-বি২, ভিটামিন-সি আছে।

এছাড়াও সজিনার ঔষধি গুণাগুণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ প্রায় ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পড সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।

মোফাজ্জল হোসেন
জয়পুরহাট
০১৭৫১-৮৯৪৫৭১

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে

জয়পুরহাটে সজনে বাম্পার ফলন

Update Time : ০৭:৫৫:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

জয়পুরহাটে এবার সজনে ডাটা বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। জেলার হাট-বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাঁটার প্রচুর আমদানি হচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হওয়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সজনে ডাটার উৎপাদন ব্যাপক হয়েছে।

শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার পাশে, ঘরের আনাচে কানাচে, প্রতিটি গাছে ঝুলছে সজিনা ডাঁটা, দেখে মনে যেন সজনে বাগান। ফলে হাটবাজার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে উঠতে শুরু করেছে সজনে ডাটা। বর্তমানে হাট-বাজারে স্থানীয় চাহিদা বেশি থাকায় এর দামও বেশি।

এক সময় বাড়ির আশপাশের পরিত্যাক্ত জমিতে সজনের গাছ লাগানো হতো। তবে সময় পরিক্রমায় এবং চাহিদা বেশি থাকায়, কৃষকরা ফসলি জমিতে ও সজনের চাষ শুরু করছেন। পরিকল্পিতভাবে সজনের চাষ করে লাভবানও হচ্ছে অনেকেই। স্থানীয় হাট-বাজার গুলোতে মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে হাটবাজারে এর দাম কমে এসেছে। বর্তমানে পাইকারি বাজার ৬০ থেকে ৭০টাকা ও খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সজনে ডাটা।

জেলার সবচেয়ে বড় সবজি বাজার নতুনহাট। এ বাজারের কাঁচা সবজি বিক্রেতা বাবু জানান, মৌসুম শুরুতে এবছর ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সজনে। সময় বাড়ার সাথে সাথে এর দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সজনের ডাটা। আমদানি বেশি এরপরও বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।

পাইকারি বিক্রেতা রবিউল আলী জানান, সজনে ডাটার দেশের সব অঞ্চলে এর চাহিদা রয়েছে। আমি প্রতিবছর সজনে ডাঁটা চট্টগ্রাম-ঢাকা, নাটোর, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করে থাকি। জয়পুরহাট অঞ্চলে ব্যাপক সজনে ডাঁটার গাছ আছে। এবছর ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায়, সজনে গাছের ডাল ঝড়ে ভেঙ্গে না যাওয়ার কারণে সজনে ডাঁটার ফলন বেশি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর লাভ বেশি পাচ্ছি।

সজনে বিক্রি করতে আসা কৃষক জাকির হোসেন বলেন, সজনে চাষ করা অন্য গাছের চেয়ে অনেক সহজ, কারন সজনের গাছের ডাল থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। এবছর ডাল রোপন করলে আগামী বছর গাছে ফল পাওয়া যায়। সজনে চাষের জন্য বাড়তি খরচ হয় না। বাড়িতে বড় ৪/৫ টা গাছ থাকলে বছরে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আমার বাড়িতে ৬ টা গাছ আছে। ফলনও বেশি হয়েছে। শুরতে ভালো দাম পেয়েছি। এখনো দুইটা গাছে সজনে আছে। এই দাম থাকলেও আরও ৪-৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমি মনে করি, যদি বানিজ্যিক ভাবে সজনে ডাটা চাষ করা যায়। অন্য ফসলের ন্যায় এটি কৃষিতে অনেক সাফল্য বয়ে আনবে। একই সাথে দেশের অর্থনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছাঃ রাহেলা পারভীন বলেন, সজনে একটি ডাটা জাতীয় সবজি হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। এটি বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। সজনের ডাটায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন উপাদান রয়েছে। সজনে চাষে আমাদের লক্ষমাত্রা না থাকলেও এটি জয়পুরহাট সহ আশে পাশের এলাকায় ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। এই এলাকা থেকে সজনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করে চাষী ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।

সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: তুলশী চন্দ্র রায় জানান, সজনের পুষ্টি গুণ সর্ম্পকে বলেন, বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি ‘মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ’ এর পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল পানি, আমিষ, চর্বি , শর্করা, খাদ্য আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটা-এ, ভিটা-বি১, ভিটা-বি২, ভিটামিন-সি আছে।

এছাড়াও সজিনার ঔষধি গুণাগুণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ প্রায় ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পড সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।

মোফাজ্জল হোসেন
জয়পুরহাট
০১৭৫১-৮৯৪৫৭১